x 
Empty Product
Tuesday, 10 December 2019 09:02

বারোমাসি আমের চাষ করে স্বাবলম্বী হতে চাইলে কি করবেন

Written by 
Rate this item
(0 votes)

নিতান্ত শখের বসে বাগান শুরু করেন হুমায়ূন আহম্মেদ। এখন বাগান করাই তার নেশা এবং থেকে পেশা। তার বাগানে এখন নিয়মিত ফলছে বারমাসি আফ্রিকান আম, পাকিস্তানি ট্রাই লেবুসহ ১৮ জাতের ফল। শখের বাগান থেকে মাত্র চার বছরেই আর্থিক সচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন আত্মপ্রত্যয়ী এই যুবক। বাগানের আয়ে এখন তিনি লাখ লাখ টাকার মালিক হয়েছেন। তার দেখাদেখি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন আশপাশের অনেক যুবক।

নেত্রকোনায় সদর উপজেলার কয়রাটি গ্রামের হুমায়ূন আহম্মেদ। এইচএসসি পাস করার পর কিছুদিন একটি মার্কেটিং কোম্পানিতে কাজ করেন। চ্যানেল আইয়ে কৃষি বিষয়ক সংবাদ দেখে তিনি বাগান করতে উৎসাহী হন। এরপর ২০১৪ সালে বাড়ির আঙ্গিনায় পরীক্ষামূলকভাবে  মাত্র ৫ শতাংশ জায়গায় মিশ্র ফলের বাগান শুরু করেন। শুরু থেকেই গতানুগতিক ধারার বাইরে একটি ব্যতিক্রম কিছু করার চিন্তা ছিল তার। তাই দেশি গাছের বদলে ভারত থেকে সংগ্রহ করে আফ্রিকান বারোমাসি আমের কলম। তাই পরের বছর বাগান সম্প্রসারিত হয় তার। এখন তার বাগানটি দুটি খণ্ডে ২ একর জমিতে সম্প্রসারিত।

তারপর থেকে আর থেমে থাকতে হয়নি তাকে, আফ্রিকান বারোমাসি আম ছাড়াও সেখানে ফলছে ১৮ জাতের ফল। বর্তমানে তার মিশ্রফল বাগানে রয়েছে। ১২০টি আফ্রিকান কারোমাসি আম গাছ, ৬৫টি আম্রপালি আম গাছ, ৬টি সুবর্ণরেখা আম গাছ, ৪শটি পাকিস্তানি হাইব্রিড লেবু গাছ (ট্রাই লেবু), ১১০টি চায়না-১ ও চায়না-৩ লিচু গাছসহ আরও অসংখ্য কমলা, মাল্টা, বেদেনা, ডালিম, আঙ্গুর লটকন, বিলম্বি, জামরুল, পলি পেয়ারা, চায়না পেয়ারা বাউকুল, আপেল কুল, লন্ডনী লেবু ও সুপারি গাছ এর মধ্যে আফ্রিকান বারোমাসি আম, পাকিস্তানি হাইব্রিড লেবু চাষ করে এলাকায় রীতিমত সাড়া ফেলে দিয়েছেন তিনি। তার বদৌলতে এলাকার লোকজন এখন বারো মাস আম খেতে পারেন। প্রতিদিন আম কিনতে আসেন দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন।

সফল চাষি হুমায়ূন আহম্মেদ জানান, স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি আম বিক্রি হচ্ছে ৪শ থেকে ৫শ’ টাকা দরে। কমলা ২শ টাকা কেজি, লেবু বিক্রি হয় প্রতি হালি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। দাম বেশি হওয়ায় উন্নত জাতের এসব আম, কমলা কীটনাশকবিহীন খুবই সুস্বাদু গন্ধযুক্ত। তিনি জানান, গত ১ বছরে ৪ টন আম, ৬ টন লেবু, ৫শ কেজি লিচু বিক্রি করে উৎপাদন ব্যয় বাদে ৪ লাখ ৭৭ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। তার বাগান থেকে এ পর্যন্ত হুমায়ূন আহম্মেদ প্রায় ৬০ লাখ টাকা আয় করেছেন। এ আয় থেকে সাংসারিক খরচ বাদে তিনি ১২ লাখ টাকায় কেনেছেন ৪ কাঠা (৪০ শতক) জমি, বন্ধক রেখেছেন ৫০ হাজার টাকায় ১০ কাঠা জমি। ফল বিক্রির লাভই এখন তার আয়ের উৎস। বাগান করে এখন তিনি আর্থিকভাবে স্বচ্ছল। নেত্রকোণায় এই প্রথম আফ্রিকান বারোমাসি আম’র কলম এনে বাগান করে অভাবনীয় সফলতার জন্য বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাকে কেষ্ট অব মেরিট ২০১৮ পুরস্কার প্রদান করে। সফল চাষি হুমায়ুনের স্মৃতি রক্ষায় তার উৎপাদিত এই বারোমাসি আমের জাত হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে বারোমাসি আম ‘হুমায়ুন-১২’। জেলায় এই বারোমাসি আম জাত ‘হুমায়ুন-১২’ নামে পরিচিত। 

হুমায়ূন আহম্মেদ এর সহায়তায় উৎসাহিত করেছে গ্রামের অন্য চাষিদেরও। কয়রাটি ছাড়াও উলুয়াটি শুনুরাসহ আরো ৩টি গ্রামে এখন চাষ হচ্ছে এই আম। কয়রাটি গ্রামের মরহুম কদম আলীর ছেলে চাষি এরশাদ মিয়া জানান, নিজ গ্রামের সফল চাষি হুমায়ূন আহম্মেদ’র সফলতায় উৎসাহিত হয়ে এক একর জমিতে বারোমাসি ও আম আম্রপালি আমের বাগান করে তিনিও আর্থিকভাবে সচ্ছল। 

সরেজমিন হুমায়ূনের ‘সমন্বিত বাণিজ্যিক ফল বাগান’ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি আম গাছে থোকায় থোকায় আম ঝুলছে। আবার নতুন করে মুকুলও বেরুচ্ছে। 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামার বাড়ি নেত্রকোণার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. হাবিবুর রহমান বলেন, হুমায়ূন আহম্মেদ এর অসময়ে আম চাষে ফলন ও বাজার মূল্য ভালো দেখে অনেকেই এগিয়ে আসছেন এই চাষে। কৃষি বিভাগের পক্ষ হতে এই সফল চাষিকে প্রশিক্ষণ ও উন্নত চাষাবাদে উৎসাহিত করা হয়েছে। সার্বিকভাবে কৃষি ও কৃষকের উন্নয়ন ঘটবে বলে জানিয়েছে জেলার কৃষি বিভাগ।

Read 2404 times

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.