x 
Empty Product
Thursday, 22 June 2017 09:52

কানসাট আম বাজারে মন ভালো নেই ব্যবসায়ীদের

Written by 
Rate this item
(0 votes)

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম কেনাবেচার সবচেয়ে বড় বাজার শিবগঞ্জের কানসাট আম বাজার। এবার ওজন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কয়েকদিন দেরিতে সেই বাজারে আম বাজারজাত শুরু হয়। তবে কানসাট আম বাজারে মন ভালো নেই ব্যবসায়ীদের। শনিবার কানসাট আম বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে পাওয়া যায় হতাশার চিত্র।

হতাশার কথা বলতে গিয়ে তারা জানান, এ বছর ঝড় ও শিলায় শিবগঞ্জের আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে কমেছে আমের উৎপাদন। অন্যদিকে ওজন সংক্রান্ত জটিলতায় দেরিতে কানসাটে আম বেচাকেনা শুরু হওয়ায় ব্যাপারীরা কানসাটমুখী হচ্ছেন না। এই দুই কারণেই জমে উঠেনি দেশের বৃহৎ আমের বাজার কানসাট আম বাজার।

শনিবার সকাল ১০টা। কানসাটে অন্য বছর যেখানে রাস্তায় দুই ধারে আম বেচাকেনার কারণে চলাচল ছিল দায়, এ বছর অনেকাংশেই সেই চিত্র নেই। দুই একটা ভ্যান ও সাইকেল আম নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, কিছুটা এগিয়ে গিয়ে কানসাটের মূল বাজারে দেখা গেল, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে সাইকেলে, ভ্যানে করে আসা আমে ভরে গেছে।

সেখানে কথা হয় নিজ বাগানের বোম্বাই ও ল্যাংড়াজাতের আম নিয়ে বাজারে আসা উপজেলার রামচন্দ্রপুর এলাকার হুসেন আলীর সাথে। বাজারের অবস্থা কেমন জানতে চাইলে বলেন, ঢাকার ব্যাপরীরা নাই, আমের দাম বলে না। যে কয়জন আছে তারা আশানুরূপ দাম বলছে না। বেশি ব্যাপারি নামলে আমের দাম ভালো পাওয়া যায়।

মাসুদ রানা নামে একজন নিয়ে এসেছেন ফ্রুট ব্যাগ প্রযুক্তিতে উৎপাদিত আম। তার আম বিক্রি হলো ২৩৫০ টাকা মন ধরে। তিনি জানালেন ফ্রুট ব্যাগ করেছিলেন ৫০ হাজার আমে, নানা ঝামেলায় বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে না, তাই কানসাটে নিয়ে এসেছি।

কানসাট বাজারে আম কিনছেন শ্যামপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামান। তিনি কানসাট থেকে আম কিনে ঢাকায় পাঠান।

তিনি বলেন, এ বছর আম পাঠিয়ে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না। এবার কানসাটে বাজার একটু চড়া। তবে তার কাছে প্রশ্ন ছিলো আম ব্যবসায়ীরা বলছেন তাদের ক্ষতি হচ্ছে, আপনি বলছেন দাম চড়া। উত্তরে তিনি জানান, এবার ঝড় ও শিলার কারণে শিবগঞ্জে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীরা যে আমের কথা চিন্তা করে বাগান কিনেছিলেন তার অনেক কম পাচ্ছেন, ফলে দাম কিছুটা গতবারের চেয়ে বেশি হলেও কিছুটা ক্ষতি হচ্ছেই তাদের। আমার নিজেরও বাগান আছে আমারও ক্ষতি গুনতে হবে।
অন্যদিকে যখন আম পাঠানোর চিন্তা করছি, তখন দেখছি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া দেশের অন্য এলাকার আম কিছুটা কম দামে ও বেশি ওজনে কিনে ব্যাপারিরা ঢাকা পাঠাচ্ছে, তখন ঢাকার আড়তে বেশি দামে আমাদের আম নিতে চায় না।

কানসাট আম বাজর ঘুরে দেখা যায়, ভালো মানের খিরসাপাতি (হিম সাগর) বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২৫০০-২৬০০ টাকায়, মাঝারি মানের ২০০০-২২০০ টাকা ও ছোট সাইজের ১৪০০-১৬০০ টাকা।

অন্যদিকে ভালো মানের ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ২০০০ টাকায়, মাঝারি মানের ১৫০০ টাকায়, ছোট সাইজের ল্যাংড়া বিক্রি হচ্ছে ১২০০-১৩০০ টাকায়। বিভিন্ন ধরনের গুটি আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১২০০ টাকার মধ্যে। সব আমই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ কেজিতে মণ হিসাবে। সেই সাথে আরো ১ কেজি আম দিতে হচ্ছে আড়তদারকে।

এদিকে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আম পাঠানোর কাজ সহজ করতে কানসাট এলাকায় গড়ে উঠেছে অন্তত ২ শতাধিক আমের আড়ত। তবে সরেজমিনকালে দেখা যায় এ বছর এই আড়তগুলোর অর্ধেকও এখনো চালু হয়নি।

কানসাটে একটি বড় আমের আড়ত মেসার্স শফিকুল ট্রেডার্স। কথা হয় এর মালিক শফিকুল ইসলামের সাথে। এ বছর ব্যবসা বাণিজ্য কেমন প্রশ্ন করতেই তিনি জানান, এ বছর আমের আমদানি কম, এ বছর ঝড় ও শিলার কারণে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। তাই ব্যবসার পরিস্থিতি খুব ভালো না।

তিনি জানান, গতবছর এই সময় তার আড়ত থেকে প্রতিদিন ৫-৬ ট্রাক আম পাঠানো হয়েছে ঢাকায়। এবার তার আড়ত থেকে কয়েকজন ব্যাপারি মিলিয়ে গড়ে ১ বা ২ ট্রাক আম নিয়ে যাচ্ছেন। ঢাকার অনেক ব্যাপারি এখনো আসেনি বলে তিনি জানান। তার আড়তে কাজ করার জন্য ৬০-৬৫ জন শ্রমিক নিযুক্ত করেছিলেন, কিন্তু বর্তমানে ২০ জনকে কাজে লাগাতে পেরেছেন। তবে আড়তদার আশাবাদী ঈদের পর দেশের অন্য স্থানের আমের জোগান শেষ হলে কানসাটমুখী হবেন ব্যাপারীরা। একই আশাবাদের কথা জানিয়েছেন আড়তদার, আম ব্যবসায়ীসহ সকলেই।

তবে ঝড় ও শিলায় আমের ক্ষতি হলেও সব মিলিয়ে গড় উৎপাদন ব্যাহত হবে না বলে মনে করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল হুদা। তিনি জানান, জেলায় এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৪০ হাজার মে. টন। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উৎপাদন হবে ২ লাখ ৪৩ হাজার মে. টন। তবে তিনি ঝড় ও শিলায় শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নসহ নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলার আংশিক এলাকায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে স্বীকার করেন।

Read 3258 times

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.