ফলের রাজা আম। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিঘার পর বিঘা জমিতে যেমন আম চাষ হয়, তেমনই গ্রামবাংলার গৃহস্থ বাড়িতে কয়েকটা আমগাছ থাকেই। সকালে ফেইসবুকে বন্ধু তোহার পোস্ট দেখে টনক নড়লো। আম গাছের পাতায় পাতায় মধু রস! এতোটাই বেশি নিঃসৃত হচ্ছে যে, গাছের নিচের রাস্তাও আঠালো হয়ে যাচ্ছে।
গাছের পাতায় পাতায় মধু রস বা হানিডিউ ছড়িয়ে পড়েছে। পুরো সিলেট জুড়ে একই অবস্থা। আম গাছে কেবল মুকুল এসেছে মাত্র। এই রোগের আক্রমণে আমের উৎপাদনে ধস নামবে কি?
অনেকে আবার এই মধুকে করোনার বিরুদ্ধে কুদরতি ঔষধ ভেবে খাওয়া শুরু করে দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে ঘাটিয়ে দেখলাম কুমিল্লাতেও একই অবস্থা! তার মানে পুরো বাংলাদেশই আক্রান্ত! ভয়ানক ব্যাপার। হপার পোকার আক্রমন সারা দেশেই!
আশঙ্কার ব্যাপার হলো, একটি হপার পোকা দৈনিক তার দেহের ওজনের ২০ গুণ রস শোষণ করে খায় এবং দেহের অতিরিক্ত আঠালো রস মলদ্বার দিয়ে বের করে দেয়, যা মধুরস বা হানিডিউ নামে পরিচিত। হানিডিউ এখন দেখা যাচ্ছে।
এ মধুরস মুকুলের ফুল ও গাছের পাতায় জমা হতে থাকে। মধুরসে এক প্রকার ছত্রাক জন্মায়।এই ছত্রাককে না সামলাতে পারলে বিপদ আসন্ন। এই ছত্রাক জন্মানোর কারণে মুকুল, ফুল ও পাতার ওপর কালো রঙের স্তর পড়ে যায়; যা সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। এই পোকার আক্রমণে শুধু আমের উৎপাদনই কমে যায় না, গাছের বৃদ্ধিও কমে যেতে পারে। হপার পোকা অন্ধকার বা বেশি ছায়াযুক্ত স্থান পছন্দ করে।
প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার হারে সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড বা সিমবুস বা ফেনম বা এরিভো) ১০ ইসি পানিতে মিশিয়ে পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে। আমের হপার পোকার কারণে যেহেতু সুটিমোল্ড বা ঝুল রোগের আক্রমণ ঘটে তাই রোগ দমনের জন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক কীটনাশকের সঙ্গে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।
কিন্তু আম গাছের হানিডিউ এর কারনে যে রোগ আসতেছে “ঝুল রোগ” তা কিভাবে মোকাবেলা করা যাবে? কৃষি বাতায়ন লিখেছে–
# ঝুল রোগের আক্রমণে পাতার উপর কালো আবরণ পড়ে। এই কালো আবরণ হচ্ছে ছত্রাকের দেহ ও বীজ কণার সমষ্টি। আমের শরীরেও কালো আবরণ দেখা দেয়।
বিস্তারঃ রোগের বীজকণা বা কনিডিয়া বাতাসের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে থাকে। হপার বা শোষক পোকা আমের মুকুলের মারাত্মক শত্রু। এ পোকা মুকুল থেকে অতিরিক্ত রস শোষণ করে এবং মধু জাতীয় এক প্রকার আঠাল পদার্থ (যা হানিডিউ নামে পরিচিত) নিঃসরণ করে। উক্ত হানিডিউ মুকুল ও পাতার উপর পতিত হয় তার উপর ছত্রাকের বীজকণা জন্মায় এবং কালো আবরণের সৃষ্টি করে। হপার ছাড়াও ছাতরা পোকা (মিলিবাগ)ও স্কেল পোকা হানিডিউ নিঃসরণ করে এবং ঝুল রোগের আক্রমণে সহায়তা করে। হানিডিউ ছাড়া এ রোগ জন্মাতে পারে না।
প্রতিকারঃ
★ হানিডিউ নিঃসরণকারী হপার, মিলিবাগ বা স্কেল পোকা কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে দমনে রাখতে পারলে ঝুল রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
★ আক্রান্ত গাছে সালফার গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে ভালভাবে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
এখনই যদি প্রতিকার করা না যায়, তবে আমের ফলনে নামবে ধস।
এই নিউজটির মুল লিখা আমাদের না। আমচাষী ভাইদের সুবিধার্তে এটি কপি করে আমাদের এখানে পোস্ট করা হয়েছে। এই নিউজটির সকল ক্রেডিট: http://www.agriview24.com