x 
Empty Product

আম রফতানীতে হুমকির মুখে পড়েছে ভারত। কীটনাশক এবং পোকার ধ্বংসাবশেষযুক্ত ভারতীয় আমের বিরুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। অতি সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো ভারতীয় আম ও সবজির বিশাল চালানে কীটনাশক এবং পোকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। আর তাই ইউরোপের পর এবার আরব আমিরাতে ভারতীয় আম, সবজি রফতানীতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ভারত থেকে ৭০ শতাংশ আম কিনে থাকে। কিন্তু এসব পণ্যের চালানে নির্ধারিত পরিমাপের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ কীটনাশক ও পোকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে। প্রসঙ্গত, এই একই কারণে এক বছর আগেও আমসহ ভারতের একাধিক পণ্য রফতানীর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ভারতের প্রতিবেদন থেকে দেখা যাচ্ছে, কীটনাশক এবং পোকার ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার কারণে দেশটির আম রফতানী বছরের পর বছর কমছেই। ২০১১-১২ হিসাব বছরে ভারত ৬৩ হাজার ৫৯৪ টন আম রফতানী করেছে। ২০১২-১৩ বছরে তা কমে এসেছে ৫৫ হাজার ৭৭৯ টনে। এরপর ২০১৩-১৪ এবং ২০১৪-১৫ বছরেও তা কমতে দেখা গেছে। সর্বশেষ ২০১৪-১৫ হিসাব বছরে দেশটির আম রফতানী কমে দাঁড়িয়েছে ৪৩ হাজার ১৯১ টনে। এখন ভারতের কীটনাশক এবং পোকার ধ্বংসাবশেষযুক্ত আমগুলি বাংলাদেশেকে চাপিয়ে দিতে, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র’’ বাংলাদেশের বিভিন্ন মিডিয়াতে অর্থ দিয়ে তাদেরকে দিয়ে এই অপ্রপচার চালাচ্ছে যে, বাংলাদেশের আমে ফরমালিন আছে সুতরাং বাংলাদেশী আম খাওয়া যাবে না। তাহলে কোন দেশের আম খেতে হবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার আর প্রয়োজন পড়ে না। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র’’য়ের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশী আমে ফরমালিনের অপপ্রচারে মূলত দেশীয় আম চাষী ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আমের ভরা মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাজার ভিত্তিক প্রায় ৭ লাখ লোকের কর্মসংস্থান নষ্ট হচ্ছে। বাংলাদেশী আম ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, বৈশাখের শেষ থেকে জ্যৈষ্ঠের প্রথম সপ্তাহ জুড়ে চেরাই পথে আসা ভারতীয় বিভিন্ন জাতের আম বাংলাদেশের বাজারে পাওয়া যায়। আর ভারতীয় এসব আমে ফরমালিন থাকে। কিন্তু তখন প্রশাসন কোনো অভিযান চালায় না। এখন দেশীয় আমের ভরা মৌসুম, কেমিক্যাল ছাড়াই বাজারে আম পাওয়া যাচ্ছে। দেশীয় সুস্বাদু আম বাজারে উঠার সাথে সাথে ভারতীয় আম ব্যবসায ধস নামে। আর তাই দেশীয় আম বাজারে উঠার পর ব্যবসায়ীরা ভারতীয় আম আমদানি করে খুবই কম। আর তাই বাংলাদেশের মানুষকে দেশীয় আম খাওয়া থেকে ঘুরিয়ে, ভারতীয় কীটনাশকযুক্ত আমগুলি বাংলাদেশের বাজারে বিত্রিু করতে মূলত বাংলাদেশের আমে ফরমালিন আছে এই অপ্রপচার করাচ্ছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র’’। এখন দেখুন বাংলাদেশের আমে যে ফরমালিন নেই সেই বিষয়গুলি আমরা তুলে ধরব-বিএসটিআইয়ের সহকারী পরিচালক রিয়াজুল হক বলে, তিন দফায় রাজধানীর মিরপুর, খিলগাঁও থেকে আম, লিচু ও আপেল সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। কোনো ফলেই ফরমালিনের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। আম ও লিচুর জন্য বিখ্যাত বাংলাদেশের উত্তরাবঙ্গের একাধিক জেলা থেকে আম, লিচু, জাম সংগ্রহ করে পরীক্ষায় ফরমালিন পায়নি বিএসটিআইয়ের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়। ওই কার্যালয়ের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী, দিনাজপুর, পাবনা, বগুড়া ও গাইবান্ধ জেলা থেকে আম, জাম, লিচু, মাল্টার নমুনা সংগ্রহ করে আমরা পরীক্ষায় ফরমালিন পাইনি । তিনি জানান, নিজস্ব তত্ত্বাবধানে এসব পরীক্ষার পাশাপাশি বিএসটিআই স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে রাজশাহীর বানেশ্বর আমের বাজার এবং বাঘার মনিগ্রাম বাজারে ৫ জুন থেকে নিয়মিত আম পরীক্ষা করছে। গত ১১ দিনের নিয়মিত পরীক্ষায় আমে কোনো ফরমালিন পাওয়া যায়নি। বিএসটিআইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় গত মে মাসে চট্টগ্রাম নগরের ৪৫টি স্থান থেকে আম ও লিচুর ১৬৯টি নমুনা সংগ্রহ করে। নিজস্ব স্থানীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষায় এগুলোতে ফরমালিন পাওয়া যায়নি। এছাড়া বি.বাড়িয়া, কক্সবাজার, চাঁদপুর ও হাটহাজারীর বাজার থেকে ফল নিয়েও পরীক্ষা করা হয়। এগুলোও ফরমালিনমুক্ত ছিল। বিএসটিআইয়ের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় নগরের পৌর সুপার মার্কেট, খালিশপুর, নিউমার্কেট, কাঁচাবাজার, রব মার্কেট এবং বয়রা বাজার থেকে সাত দফায় আম ও লিচু এনে পরীক্ষা করে ফরমালিন পায়নি। আম, লিচু, জাম, জামরুল চার দফায় পরীক্ষা করে ফরমালিনে কোন অস্তিত্ব পায়নি বিএসটিআইয়ের সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়। এখন বুঝার জন্য একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়; কিছুদিন পূর্বে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলে যে, বাংলাদেশে আম রফতানী হওয়ায় আমরা খুব খুশি। কারণ, বাংলাদেশে আম রফতানী না হলে ভারতীয় চাষী এবং ব্যবসায়ীদের বিরাট ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। এবার বিষয়টি সুস্পটভাবে বুঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের তথা মুসলমানদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে এবং ভারতের কীটনাশক এবং পোকার ধ্বংসাবশেষযুক্ত আমগুলি বাংলাদেশেকে চাপিয়ে দিতে বাংলাদেশের আমে ফরমালিন আছে এই অপ্রপচারের মূলে রয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা “র’’।

সুত্র: http://www.al-ihsan.net/fulltext.aspx?subid=2&textid=13774

গ্রামগঞ্জের মেঠোপথ থেকে হাট-বাজার হয়ে রংপুর শহরের অলিগলি ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে ঐতিহ্যবাহী ও সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আমে ভরে উঠেছে। বাম্পার ফলন ও বাজারদর ভাল হওয়ায় হাঁড়িভাঙ্গা আম চাষ করে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করার স্বপ্ন দেখছেন চাষীরা। আবার স্বল্প দামে মনকাড়া আম হাতের নাগালে পেয়ে ভীষণ খুশি ক্রেতারাও। ইতোমধ্যে রংপুরের মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ ও বদরগঞ্জ উপজেলায় উৎপাদিত হাঁড়িভাঙ্গা আমের বিক্রি ২৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। সেই সঙ্গে পাল্টে যাচ্ছে এ এলাকার অর্থনীতি।

রংপুরের পদাগঞ্জ ও বদরগঞ্জের স্টেশন বাজার এ অঞ্চলের হাঁড়িভাঙ্গা আমের বড় পাইকারি হাট। এই হাট থেকে প্রতিদিন ট্রাকে করে হাঁড়িভাঙ্গা আম নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। রংপুরের ফলের আড়ত ছাড়াও টার্মিনালের পশ্চিম কোনে বসেছে হাঁড়িভাঙ্গার মিনি হাট। এখান থেকেও পাইকাররা আম নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। পদাগঞ্জে গেলে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান। এ অঞ্চলের কুতুবপুর, খোড়াগাছ পাইকারের হাট, পদাগঞ্জ, কদমতলী, পীরের হাট, তালপুকুর, মাঠের হাট, আখড়ের হাট ছাড়াও সমস্ত এলাকাজুড়ে হচ্ছে এ আমের চাষ। এখানকার মাটি আম চাষের সম্পূর্ণ উপযোগী হওয়ায় ওই এলাকার চাষীরা অন্য ফসলের চেয়ে আম বাগানে সবচেয়ে মনোযোগী হয়ে উঠছেন। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, রংপুরের তিন উপজেলায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আম চাষ হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় শিল্পপতিরা এসব এলাকায় জমি কিনে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান করছেন। এই আম বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৯৫০ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সুস্বাদু হাঁড়িভাঙ্গা আমের কারণে অনেকেই রাজশাহীর পর এখন রংপুরকে আমের এলাকা বলে থাকেন।

রংপুর মহানগরীর প্রবেশ দ্বার পীরগঞ্জ, মিঠাপুকুর ও বদরগঞ্জ উপজেলার সড়ক, মহাসড়ক ও গ্রামের মেঠোপথে সারি সারি হাঁড়িভাঙ্গা আমের গাছ। মিঠাপুকুর উপজেলাতেই ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩ হাজার ৮টি হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাগান রয়েছে। রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন দেশের বিভিন্ন জেলার চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। উঁচু-নিচু ও পরিত্যক্ত জমিতে এ জাতের আম চাষ করে অনেকেই ঘুরিয়েছেন ভাগ্যের চাকা। অন্য ফসলে খুব একটা লাভ না হওয়ায় প্রতিবছরই বাড়ছে আমের চাষ। চাষীরা আগ্রহ নিয়ে আম চাষে এগিয়ে আসছেন। অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় শিক্ষিত বেকার যুবকরাও ঝুঁকে পড়েছেন আম চাষে।

পদাগঞ্জের আম চাষী আনসার বকশী জানান, তিনি ৮ একর জমিতে আমের বাগান করেছেন । গত বছর তিনি দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। এ বছর তিনি আড়াই লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। হাঁড়িভাঙা আম কিনতে রাজশাহী থেকেও ক্রেতারা পদাগঞ্জে আসছেন।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত বাগান মালিক সালাম সরকার কয়েকটি বাগানের আম বিক্রি করেছেন সাড়ে ১৫ লাখ টাকায়। তিনিই এ এলাকার সবচেয়ে বড় আম বাগানের মালিক। তার বাগানের আম জেলা শহরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আম বাগানের মালিকদের মধ্যে খোড়াগাছ পাইকার হাটের নওশাদ, তার ভাই শওকত, বাবুল মিয়া ও আনছার অন্যতম। তারা প্রত্যেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। ঘাঁড়িভাঙ্গা ছাড়াও এ অঞ্চলে মিছরিভোগ, ফজলি, গোপালভোগ, কপিল বাঙ্গরিসহ নানা জাতের আম চাষ হয়। আম বাগানগুলোতে সারাবছর শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন হাজার হাজার শ্রমিক। চাহিদা থাকায় বাগান মালিকদের মুখে হাসি ফুটেছে। বাগান মালিকরা বলছেন, রংপুরে এবার যে আমের ফলন হয়েছে, তা সারাদেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব।

ঘাঁড়িভাঙ্গা আমের উদ্ভাবক হিসেবে পরিচিত মিঠাপুকুর উপজেলার সর্দারপাড়া প্রামের আব্দুস সালাম সরকার জানান, চলতি বছর ১২ একর জমিতে আম চাষ হয়েছে। ২০ লাখ টাকার আম বিক্রি করা যাবে। ময়েনপুর গ্রামের আম চাষী সুলতান মিয়া বলেন, ‘চলতি বছর ২ একর জমিতে আম চাষ করেছি। বাম্পার ফলন হয়েছে।’

বদরগঞ্জ উপজেলার জয়নাল আবেদীন বলেন, ‘হাঁড়িভাঙ্গা আম আমার ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেছে। মৌসুমের শুরুতে এ আম প্রতি কেজি ৫০ টাকা ও শেষের দিকে ১৫০ টাকা থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আশরাফ আলী জানান, রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙ্গা আম আরও সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী দিনে রংপুরের আম সারাদেশের চাহিদা মিটিয়ে আরও বেশি করে বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে। বেশি লাভের আশায় আম চাষ করছেন চাষীরা। এ বছর আমের ব্যাপক ফলন ও বাজারদর ভালো হওয়ায় চাষীদের মাঝে আম চাষে আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি। রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞ মেজবাহুল ইসলাম জানান, সারাদেশে হাঁড়িভাঙ্গা আমের বিস্তার ঘটেছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমে রোগবালাই কম হয়। চারা লাগানোর পরের বছরই গাছে মুকুল আসে। আর ৫-৬ বছর বয়সে গাছে পুরোদমে আম আসতে শুরু করে। এছাড়া বোঁটা শক্ত হওয়ায় গাছ থেকে তা অকালে ঝরে যায় না। পূর্ণাঙ্গ একেকটি আমের ওজন চারশ থেকে সাড়ে পাঁচশ গ্রাম হয়ে থাকে। তিনি আরও জানান, এ বছর রংপুরে ২৮০ কোটি টাকার আম উৎপাদন হয়েছে। হাঁড়িভাঙ্গা আমের সু-স্বাদের কারণে রাজশাহীর ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, মল্লিকা, সুবর্ণরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, সূর্যপূরী, পাহুতান, ত্রিফলা আম বিক্রিতে ভাটা পড়েছে।

Tuesday, 18 October 2016 07:39

অভিনব আম চাষ!

Written by

আমে ফরমালিন আর কার্বাইডের ব্যবহার নিয়ে দেশে যখন ব্যাপক হইচই হচ্ছে, এর নেতিবাচক প্রচারের অনেক ভোক্তা সুস্বাদু এই মৌসুমি ফল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ব্যবসায়ীরাও মাঠে নেমেছেন কম। আমের বাজারে চলছে ব্যাপক মন্দা। এই সময়ে শাহ কৃষি জাদুঘর এবার ফরমালিন-কার্বাইড তো দূরের কথা, কোনো কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই আম উৎপাদনের সক্ষম হয়েছে।
এক হেক্টর আয়তনের এই বাগানে এবার পরীক্ষামূলক পর্যায়ে ১৫ থেকে ২০ টন আম হতে পারে। আশা করা হচ্ছে, এই পদ্ধতিতে আম চাষে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে।
শাহ কৃষিতথ্য পাঠাগার ও জাদুঘরের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর শাহ রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষক। তিনি তাঁর নিজ গ্রাম নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিগ্রামে এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। বেসরকারি পর্যায়ে এটি বাংলাদেশের একমাত্র কৃষি জাদুঘর। দীর্ঘদিন ধরে তিনি পরিবেশবান্ধব কৃষি আন্দোলন করে আসছেন। এখানে কৃষকদের বিনা মূল্যে পড়াশোনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
কয়েক বছর ধরে জাহাঙ্গীর শাহ তাঁর নিজের এক হেক্টর আয়তনের একটি আমবাগানে রাসায়নিকমুক্ত আম ফলানোর চেষ্টা করে আসছেন। এই কাজ করতে গিয়ে গত কয়েক বছরে তিনি অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তারপরও তিনি তাঁর অবস্থান থেকে সরে আসেননি। তিনি আমকে রাসায়নিকমুক্তভাবে উৎপাদন করতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত একটা লড়াই চালিয়েছেন। এবার তিনি এই কাজে প্রায় সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহর পদ্ধতিতে আমে সরাসরি কোনো ধরনের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। পোকা দমনের জন্য কীটনাশকের পরিবর্তে সেক্সফেরোমন ফাঁদ, বিষটোপ ও অ্যান্টিফিডেন্ট ব্যবহার করে প্রাকৃতিক উপায়ে পোকা দমন করেছেন। এভাবেই তিনি সফল হয়েছেন।
জাহাঙ্গীর শাহ জানান, মুকুলের আগে হপার পোকা দমনের জন্য পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নয়—এমন কীটনাশক সহনীয় মাত্রায় ব্যবহার করেছেন। গাছে মুকুল আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত আমে আর কোনো ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়নি। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক উপায়ে আম পরিচর্যা করতে গিয়ে কিছু আমের ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরও বলেন, কীটনাশক ব্যবহার করলে হয়তো আমের ফলন আরও বেশি হতো। কিন্তু পরিবেশবান্ধব উপায়ে স্বাস্থ্যসম্মত আম উৎপাদনের জন্য আপাতত তিনি এই ক্ষতি মেনে নিয়েছেন। তিনি আশাবাদী, ভবিষ্যতে গৃহীত পদ্ধতিকে আরও টেকসই ও কার্যকর করতে পারবেন। তখন আর এ ধরনের ক্ষতি হবে না।
জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম মনজুর হোসেনের আকাফুজি এগ্রো টেকনোলজি নামে একটি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখানে তিনি আম প্রক্রিয়াজাত করে ডিহাইড্রেড ম্যাঙ্গো স্লাইস ও ডাইস তৈরির জন্য কাজ করছেন। তাঁর অধীনে জাপানি গবেষক কেনজি সুজি দুই বছর ধরে গবেষণাসহকারী হিসেবে কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাত করে স্লাইস ও ডাইস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এ বছর তাঁরা বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনে যাচ্ছেন। তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহর রাসায়নিকমুক্ত সব আম নিতে চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এম মনজুর হোসেন বলেন, তাঁরা আম প্রক্রিয়াজাতকরণের যে কাজ করছেন, তার জন্য রাসায়নিকমুক্ত আম প্রয়োজন। এ জন্য তাঁরা জাহাঙ্গীর শাহকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। একাধিকবার তাঁর বাগান পরিদর্শন করেছেন। জাহাঙ্গীর শাহ তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ী আম উৎপাদন করেছেন। এ বছর তাঁদের চাহিদা ছিল প্রায় ৫০ টন, কিন্তু জাহাঙ্গীর শাহ হয়তো ১৫ থেকে ২০ টন দিতে পারবেন।
কয়েক দিন আগে জাহাঙ্গীর শাহর আমবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানে প্রায় ১০০টি সেক্সফেরোমন ফাঁদ পেতে রাখা হয়েছে। তার ভেতরে পোকা পড়ে মরে আছে। এ ছাড়া বাগানের ভেতরে মিষ্টিকুমড়া দিয়ে ৩০ থেকে ৪০টি বিষটোপ রাখা হয়েছে। বাগানের শ্রমিকদের আরও কিছু জৈবপদ্ধতি ব্যবহার করতে দেখা যায়। কৃত্রিম কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়নি বলে আমের মনকাড়া কোনো রং হয়নি। জাহাঙ্গীর শাহ বলেন, তাঁর আমের আকর্ষণীয় রং হয়নি, কিন্তু খেতে সুস্বাদু এবং নিরাপদ।

থানীয়ভাবে পাকা আম বাজারে আসতে আরও ৩০ থেকে ৪৫ দিন বাকি। তার আগেই হঠাৎ করে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁসহ আশপাশের চেনা-অচেনা ছোট-বড় বাজারে পাকা আমে ভর্তি হয়ে গেছে। আর এই আম এসেছে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে। যা ফরমালিন, কার্বাইডসহ অন্যান্য বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো ভারতীয় আম। বাজার ছেয়ে যাওয়া এসব নিম্নমানের জাতবিহীন পাকা আম একটুও কোন ধরনের সাদ নেই। দূর থেকে দেখতে টুকটুকে রঙিন এসব পাকা আমের বাজার মূল্য ধরা হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ শ’ টাকা কেজি দরে। হাট- বাজার ছেয়ে যাওয়া এসব আমের একটি বড় অংশ এসেছে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে আমদানি হয়ে। এসবের পাশাপাশি সোনামসজিদসহ জেলার ১১টি পয়েন্ট ছাড়াও নওগাঁর, শিমলতালা, ধামুরহাট, কালুপাড়া, সাপাহারের পাতীড়ী, হাঁপানী ও গোদাগাড়ীসহ তিন জেলার অন্যান্য সীমান্ত দিয়ে চোরাইপথে এসব আম আনা হচ্ছে বলে জানা গেছে। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এসব আম স্থানীয় বাজারের ফলের দোকানসমূহে শোভা পচ্ছে। কার্বাইড, ফরমালিনসহ বিভিন্ন বিষাক্ত মেডিসিন দ্বারা পাকানোর ফলে স্বাস্থ্যহানি ঘটাসহ শরীরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়ার আশঙ্কা থাকলেও মৌসুমের নতুন ফল হবার কারণে ঝুঁকি নিয়েই ক্রেতারা দেদার ক্রয় করে যাচ্ছে পাকা আম। ভারত থেকে সীমান্ত পথে বানের পানির মতো আসা বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকানো ক্ষতিকর এসব আম ফলে দোকানে বিক্রি হলেও কেউ কিছু বলছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিষ সমতুল্য এসব আম বিক্রির ব্যাপারে যৌক্তিক বাধাদানের কোন সরাসরি এখতিয়ার না থাকায় তারা অসহায়। তবে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয়ভাবে গঠিত ফরমালিন প্রতিরোধ কমিটি ইচ্ছা করলে এই ধরনের আম বিক্রি বন্ধ করতে পারে। এমনকি যেসব প্রতিষ্ঠান ফল আমদানি করে সঙ্গে বৈঠক করে তাদের আম ফল আমদানিতে নিরৎসাহিত করার পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছে না এসব প্রতিরোধে। আর বিষাক্ত পাকা ভারতীয় আম আসা অব্যাহত রয়েছে।

সাতক্ষীরা পাঁচ হাজার কেজি কার্বাইড মেশানো আম বুলডোজার দিয়ে নষ্ট করা হয়।

রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করে কৃত্রিমভাবে আম পাকানোর সময় সাতক্ষীরায় পাঁচ হাজার কেজি কাঁচা আম ধ্বংস করা হয়েছে। এ সময় বিপুল পরিমাণ রাসায়নিক পদার্থ কার্বাইড জব্দ করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ভ্রাম্যমাণ আদালত এক নারীসহ তিনজনকে জরিমানা করেছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ আবদুল সাদী জানান, গোপন সূত্রে খবর আসে ভোমরা ইউনিয়নের বৈচনা গ্রামের একটি বাড়ির মধ্যে রেখে বিপুল পরিমাণ কাঁচা আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার করা হচ্ছে।

ইউএনও শাহ আবদুল সাদী জানান, কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন, ভোমরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী ও কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মঙ্গলবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এ সময় তিনি কার্বাইড মেশানোর কাজ দেখতে পেয়ে তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। খবর পেয়ে আমের মালিক আকবর আলীসহ কয়েকজন পালিয়ে যান।

শাহ আবদুল সাদী বলেন, ‘ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজন ভারত থেকে চোরাপথে আনা কার্বাইড আমে মেশানোর বিষয়টি স্বীকার করেন। পাঁচ হাজার কেজি আমে এই রাসায়নিক প্রয়োগ করে কৃত্রিম রং বানিয়ে রাতেই তা রাজধানী ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হতো। অপরিপক্ব কাঁচা আমে কার্বাইড প্রয়োগ করায় উচ্চ তাপে আমের বাইরের রং পরিবর্তন হয়ে যায় অথচ ভেতরে কাঁচা থেকে যায়।’

এ ঘটনায় জড়িত থাকায় আকবর আলির স্ত্রী মোহসেনা খাতুন, মিজানুর রহমান, মফিজুলসহ তিনজনকে জরিমানা করা হয়েছে।

জব্দ করা আম সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদে এনে বুলডোজার দিয়ে নষ্ট করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শাহ আবদুল সাদী।

 

ফ্রুট ব্যাগিং: আমে কাঙ্ক্ষিত রং, উল্লসিত চাষি
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ফিরে: পোকার আক্রমণ ও রোগ-বালাই থেকে রক্ষা করতে গত বছর থেকে শুরু হয়েছে আমে ফ্রুট ব্যাগিং। সে বছর সীমিত আকারে এ প্রযুক্তি ব্যবহৃত হলেও এবার দেশের আটটি জেলায় বেশ জোরেসোরেই আমে ফ্রুট ব্যাগিং শুরু হয়েছে।

এ প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে শুধু বিষমুক্ত নয়, আমের কাঙ্খিত রংও পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাগিং করা আমের বাজার মূল্যও দ্বিগুণ। তাই উল্লসিত আমচাষিরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর, শিবগঞ্জ, কানসাট, ভোলাহাট ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ব্যাপক হারে আমে ব্যাগ পরানো হয়েছে।

ব্যাগটি নিয়ে গবেষণা ও বাংলাদেশে এর সফল প্রয়োগকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা কৃষিবিদ ড. মো. শরফ উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এবার এখন পর্যন্ত শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জেই ১০ লাখ আমে ব্যাগ পরানো হয়েছে। মৌসুমের শেষ পর্যন্ত তা ২৫ লাখে গিয়ে পৌঁছাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
শরফ উদ্দিন আরও বলেন, গত ২/৩ বছরে কীটনাশক আর ফরমালিনের ভয়ে মানুষ মৌসুমি ফল খাওয়া থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন। চাষিরা চরম আতঙ্কিত, হতাশা আর ক্ষতির মুখে পড়ে গিয়েছিলেন। সে সময় তিনি চীনে আম বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে যোগদান করে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেন। তখন চীনের এক বিজ্ঞানী আমে ব্যাগিংয়ের পরামর্শ দেন। এক বছর পরীক্ষামূলক ব্যবহারের পর গত বছর চীন থেকে ব্যাগ আমদানি করে আমে ব্যাগিং করা হয়। এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহারাজপুরের চাঁপাই অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ এ ব্যাগ তৈরি করছে।

আগে ক্ষতিকর পোকা-মাকড়ের হাত থেকে আমকে রক্ষা করতে ও কাঙ্খিত রং পেতে প্রজাতি ভেদে ১৫ থেকে ৬২ বার কীটনাশক ও বালাইনাশক স্প্রে করা হতো। সেখানে তিনবার স্প্রে করে ব্যাগ পরানো হলে কাঙ্খিত ফলন ও রং পাওয়া যায়।

তিনি যোগ করেন, প্রজাতি ভেদে ৪২ থেকে ১২০ দিন পর্যন্ত আমে ব্যাগ পরিয়ে রাখতে হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরের আমচাষি আব্দুল মতিন ব্যাগিং করা প্রসঙ্গে বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাগের দাম একটু বেশি মনে হলেও যেহেতু এক মৌসুমে দুই বার ও ব্যাগটি ছিড়ে না যাওয়া পর্যন্ত পরবর্তী মৌসুমেও ব্যবহার করা যাবে, তাই খরচটি গায়ে লাগবে না। আর এতে কীটনাশক ও বালাইনাশকের ব্যবহার অনেক কম হওয়ায় আম উৎপাদনের খরচ কমে আসবে।

শিবগঞ্জ এলাকার আমচাষি শামিম খান ২৫ দিন ব্যাগিং করা আমের রং যখন বাংলানিউজকে দেখাচ্ছিলেন, তখন তার চোখ চিক চিক করছিল আর খুশিতে মুখ ভরে উঠছিল। তিনি বলেন, ‘দেখছেন, ২৫ দিনেই কি কালার ধরেছে। ৪০ দিন এ ব্যাগ পরিয়ে রাখলে কেমন কালার হবে কল্পনা করতে পারছেন! গত বছর এ সাইজের আম ১ হাজার ৬শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। এবার এক ব্যাপারির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে, ব্যাগিং করা আম ২ হাজার ৮শ’ টাকা দাম দেবেন তিনি’।

শুধু মতিন আর শামিমই নন, সব ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া প্রায় একই ধরনের। কীটনাশক, বালাইনাশক আর ফরমালিন আতঙ্কের মাঝে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি পেয়ে উল্লসিত চাষিরা। নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন তারা।

 
পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে আম আবৃত করা হচ্ছে

পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দিয়ে আম আবৃত করা হচ্ছে

রফিকুল আলম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে : রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষায় এ বছর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে শুরু হয়েছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা নতুন এই পদ্ধতি ব্যবহার করে গতবছর ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় এবার তা আম চাষীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। জেলার আমচাষীদের মাঝে সরবারহের জন্য এরই মধ্যে চীন থেকে বিশেষ ধরণের এই ব্যাগ আমদানী করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান।

 

আম গবেষকরা বলছেন এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে আম উৎপাদনে একদিকে যেমন ক্ষতিকারক রাসায়নিক কীটনাশকের ব্যবহার বন্ধ হবে। সেই সঙ্গে বিদেশের বাজারেও সুমিষ্ট আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম রফতানির দ্বার উম্মোচিত হবে।  চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ২৪ হাজার ২৬০ হেক্টর আম বাগান রয়েছে।

 

কিন্তু আমে মাছি, পোকা বা ফ্রুট ফ্লাইয়ের আক্রমণ রোধে বর্তমানে কীটনাশক ব্যবহারের হার অনেক বেড়ে গেছে। অধিক ফলন পেতে ভালো-মন্দ বিচার না করেই মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে আমের উৎপাদন ব্যয়ও বেড়েছে।

 

এই অবস্থায় মাছি পোকার আক্রমনসহ বিভিন্ন পোকা ও ছত্রাকের আক্রমন থেকে আম রক্ষায় গতবছর নতুন এক পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ড. সরফ উদ্দিন। বিভিন্ন দেশে ব্যবহার হওয়া ফ্রুট ব্যাগ পদ্ধতি ব্যবহার করে বাংলাদেশে তার সম্ভাবনা যাঁচাই করেন তিনি। গতবছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ১৮টি জাতের আম গাছে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করে তিনি সাফল্য পান।

 

ড. সরফ উদ্দীন জানান, ফ্রুট ব্যাগিং বাংলাদেশে একটি নতুন ও সম্ভাবনাময় পদ্ধতি। তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং বলতে ফল গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরণের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায় এবং এর পর থেকে ফল সংগ্রহ করা পর্যন্ত গাছেই লাগানো থাকে ব্যাগটি। এই ব্যাগ বিভিন্ন ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের হয়ে থাকে। তবে আমের জন্য দুই ধরণের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রঙিন আমের জন্য সাদা রঙ এবং অন্য সব জাতের আমের জন্য বাদামী রংয়ের ব্যাগ ব্যবহৃত হয়।

 

তিনি আরো জানান, গবেষণায় দেখা গেছে ব্যাগিং করা আম দীর্ঘদিন ঘরে রেখে খাওয়া যায়। এই ব্যাগ ব্যবহার করলে আম সংরক্ষণ করতে ফরমালিন নামের বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও ফলকে বাইরের বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক এবং রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে সহজেই রক্ষা করা সম্ভব। নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাগিং করা গেলে কোন স্প্রে ছাড়াই ক্ষতিকর পোকার হাত থেকে আম ফলকে রক্ষা করা সম্ভব বলে দাবি করেন তিনি।

 

ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির ব্যবহার নিয়ে ফল বিজ্ঞানী ড. সরফ জানান, আমের ক্ষেত্রে ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময় ৩৫-৪০ দিন বয়সের আমে। তবে এর পরেও ব্যাগিং করা যায়। ব্যাগিং করার আগে আমগাছে ২/৩ বার কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করা যেতে পরে। ভেজা অবস্থায় ব্যাগিং করা যাবে না। এছাড়া ব্যাগিং করার আগেই মরা মুকুল বা পুষ্মমুঞ্জুরীর অংশবিশেষ, পত্র, উপপত্র ছিড়ে ফেলতে হবে এবং আমটি ব্যাগের মাঝ বরাবর থাকবে। ব্যাগের ওপরের প্রান্তটি ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যেন পানি বা অন্যকিছু প্রবেশ করতে না পারে।

 

তিনি বলেন, গতবছর পরীক্ষামুলকভাবে এটি ব্যবহার করে সফলতা পাওয়ায় এবার তা আমচাষীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশে উৎপাদন না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের একটি প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের এই ব্যাগ চীন থেকে সরাসরি আমদানি করে কৃষকদের মাঝে সরবারহ করছেন।  প্রতিটি ব্যাগ ৩/৪টাকা দরে পাওয়া যাচ্ছে।

 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ব ও গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, এই পদ্ধতি ব্যবহার করলে ব্যাগিং করা আমে কোন ধরণের দাগ থাকবে না। এছাড়া সবধরণের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করা যাবে। এছাড়া যে কোন জাতের আমকে রঙিন করা সম্ভব হওয়ায় বিদেশে রফতানি উপযোগি আম উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এই পদ্ধতি সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে এ আম বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। কারণ ইউরোপে এ ধরণের আমের চাহিদা রয়েছে।

Tuesday, 18 October 2016 07:31

আমে পোকা দমনের উপায়

Written by
পোকামাকড়ের ব্যাপক আক্রমণের ফলে শতকরা একশ’ ভাগ পর্যন্ত আম নষ্ট হতে পারে। ল্যাংড়া, খিরসাপাত, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আম মাছি পোকা দ্বারা আক্রান্ত হয়। আম পরিপকস্ফ হলে স্ত্রী মাছি ডিমপাড়া অঙ্গের সাহায্যে আমের খোসা ক্ষত করে ডিম পাড়ে। এ ক্ষতস্থান থেকে রস গড়িয়ে পড়ার দাগ দেখে এ পোকার আক্রমণ সহজে বোঝা যায়। ডিম থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই কীড়া বা ম্যাগোট বের হয় এবং শাঁসের মধ্যে ঢুকে পড়ে। আক্রান্ত পাকা আম কাটলে শাঁসের সঙ্গে অনেকগুলো কীড়া বা ম্যাগোট দেখা যায়। আক্রান্ত আম অতি সহজেই পচে যাওয়ার সম্ভবনা থকে।

মাছি পোকার আক্রমণ থেকে আমকে রক্ষা করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পরিপকস্ফ কিন্তু কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে আম পেড়ে আনা। পোকাক্রান্ত আমগুলো সংগ্রহপূর্বক মাটিতে গভীর গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। ফল সংগ্রহের অন্তত এক মাস আগে বিষটোপ ফাঁদ ১০০ গ্রাম পাকা আম থেঁতলিয়ে এর সঙ্গে ১ গ্রাম ডিপটেরেক্স ৮০ এসপি বা সেকুফোন ৮০ এসপি বিষ মিশিয়ে মাটির পাত্রে আম বহনকারী শাখার পাশে ঝুলিয়ে দিতে হবে। বিষটোপ দু’দিন পরপর পরিবর্তন করা প্রয়োজন। ফেরোমন ফাঁদ (মিথাইল ইজানল যুক্ত) ব্যবহার করা। ফল সংগ্রহের একমাস আগে প্রতিটি আমকে কাগজের ব্যাগ দিয়ে মুড়িয়ে দিলে আমে মাছি পোকার আক্রমণ সম্পূর্ণভাবে রোধ করা যায়।

উইভিল আমের সবচেয়ে ক্ষতিকর পোকা। বীজ থেকে জন্মানো আমগাছের ফলই এ পোকার দ্বারা সর্বাধিক আক্রান্ত হয়ে থাকে। স্ত্রী পোকা মার্চ-এপ্রিল মাসে কাঁচা আমের গায়ে মুখের শুঁড়ের সাহায্যে চিরে তার মধ্যে ২ থেকে ৭টি ডিম পাড়ে। ফল বড় হতে থাকলে এ ক্ষতচিহ্ন আস্তে আস্তে উবে যায়। সাত দিনের মধ্যে ডিম ফুটে পা-বিহীন কীড়া বের হয় এবং কীড়াগুলো ফলের শাঁসের মধ্যে আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ তৈরি করে খেতে থাকে। আক্রান্ত ফল কাটলে শাঁসে কীড়ার তৈরি আঁকাবাঁকা সুড়ঙ্গ, সুড়ঙ্গে কীড়া দ্বারা নির্গত কালো রঙের মল এবং পোকার কীড়া বা পুত্তলি বা পূর্ণবয়স্ক পোকা দেখা যায়। পূর্ণবয়স্ক পোকা ফল ছিদ্র করে বের হয়ে আসে।

ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিটি আমগাছের চারদিকে ৪ মিটার ব্যাসার্ধের বৃত্তের মধ্যে সব আগাছা পরিষ্কার করে ভালোভাবে মাটি কুপিয়ে উল্টে দিতে হবে, যাতে মাটির ভেতর লুকিয়ে থাকা উইভিলগুলো ধ্বংস হয়। আম সংগ্রহের পর গাছের সব পরগাছা ও পরজীবী উদ্ভিদ ধ্বংস করতে হবে। কীটনাশক প্রয়োগ করে এ পোকা দমন করা খুবই ব্যয়সাধ্য। সাধারণত মার্চ-এপ্রিল মাসে উইভিলগুলো মাটি থেকে গাছে ওঠা শুরু করে। এসময় প্রতি লিটার পানিতে ২.০ মিলিলিটার হারে ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন/অন্য নামের) ৫০ ইসি মিশিয়ে গাছের কাণ্ড, ডাল ও পাতা ভালোভাবে ভিজিয়ে ১৫ দিন অন্তর একাধিকবার স্প্রে করতে হবে। আমগাছের কাণ্ডে মাজরা পোকার আক্রমণ সর্বত্রই কমবেশি দেখা যায়। ফল ছিদ্রকারী এ পোকাটি লেপিডোপটেরা গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এক ধরনের মথ। পূর্ণবয়স্ক পোকা লম্বায় প্রায় ১৪ মিলিমিটার, ধূসর বর্ণের, পাখা আঁশযুক্ত।

ফল ছিদ্রকারী পূর্ণবয়স্ক স্ত্রী পোকা আমের নিচের অংশে খোসার ওপর ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লার্ভা বের হয়ে খুব ছোট বিন্দুর মতো ছিদ্র করে আমের মধ্যে ঢুকে পড়ে এবং প্রথমে শাঁস ও পরে আঁটি খাওয়া শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত স্থান গাঢ় বাদামি বর্ণের হয় এবং ছিদ্রপথ থেকে সাদা ফেনা বের হতে দেখা যায়। পরে ফেনাসহ আক্রান্ত স্থান শুকিয়ে কালো হয়ে যায়। গাছের নিচ থেকেই এ পোকার আক্রমণের নমুনা সুস্পষ্টভাবে বোঝা যায়। আক্রমণের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেলে আক্রান্ত স্থান ফেটে যায় ও পচন ধরে। মার্চ-এপ্রিল মাসে ঝরে যাওয়া আক্রান্ত কচি ফল মাটি থেকে সংগ্রহ করে আগুনে পুড়ে ফেলতে হবে অথবা গরুকে খাওয়ানো যেতে পারে। ফলে নতুন করে আক্রমণ কম হবে। মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু করে ১৫ দিন পর পর কমপক্ষে দু’বার প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২.০ মিলিলিটার হারে ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন/অন্য নামের) ৫০ ইসি মিশিয়ে আমে স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব হবে।

কোনো কোনো অঞ্চলের আমগাছে হঠাত্ করে পাতাখেকো শুঁয়া পোকার আক্রমণ দেখা যায়। পাতাখেকো শুঁয়া পোকা আমগাছের পাতার ফলক সম্পূর্ণভাবে খেয়ে শুধু মধ্যশিরাটি রাখে। এ পোকার আক্রমণে আমগাছ সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে পাতাশূন্য হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আক্রান্ত আমগাছে অসময়ে নতুন পাতা বের হয় এবং মুকুল আসে না।

পূর্ণতাপ্রাপ্ত শুঁয়া পোকা কীটনাশক প্রয়োগে মারা খুব কঠিন বিধায় আমগাছে শুঁয়া পোকার ছোট ছোট কীড়া দেখামাত্র সেগুলো পাতাসহ সংগ্রহ করে পা দিয়ে পিষে মেরে ফেলতে হবে কিংবা সে অবস্থায় পাতায় প্রতি লিটার পানির সঙ্গে ২.০ মিলিলিটার হারে ফেনিট্রোথিয়ন (সুমিথিয়ন/অন্য নামের) ৫০ ইসি মিশিয়ে স্প্রে করলে এ পোকার আক্রমণ কমানো সম্ভব হবে।

হপার বা শোষক পোকার আক্রমণে আমের উত্পাদন শতকরা ২০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে। তিনটি প্রজাতির হপারের আক্রমণে বাংলাদেশের সর্বত্র আমের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

এ পোকাগুলো সাধারণত তিনভাবে ক্ষতি করে থাকে। প্রথমত, কচি পাতা এবং মুকুলের দণ্ডগুলোতে ডিম পাড়ার সময় ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ফলে আক্রান্ত পাতা ও ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। দ্বিতীয়ত, ডিম ফুটে নিমম্ফ বের হওয়ার পর এরা কচি পাতা এবং মুকুল থেকে রস চুষে খায়, ফলে মুকুলে ফুল শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে ঝরে যায়।

পূর্ণবয়স্ক আম গাছে বর্ষা মৌসুমের শেষে বছরে একবার অপ্রয়োজনীয় মৃত ও অর্ধমৃত ডালাপালা ছাঁটাই করে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করলে হপারের প্রাদুর্ভাব ৩০-৪০ শতাংশ কমে যায়। আমগাছে মুকুল আসার ১০ দিনের মধ্যে একবার এবং এর এক মাস পর আরেকবার প্রতিলিটার পানির সঙ্গে ১.০ মিলিলিটার সাইপারমেথ্রিন (রিপকর্ড/সিমবুশ/ফেনম/বাসাথ্রিন/অন্য নামের) ১০ ইসি অথবা ০.৫ মিলিলিটার ডেলটামেথ্রিন (ডেসিস) ২.৫ ইসি অথবা ০.৫ মিলিলিটার ফেনভ্যালিরেট (সুমিসাইডিন/মিলফোন/অন্য নামের) ২০ ইসি মিশিয়ে আমগাছের কাণ্ড, ডাল, পাতা এবং মুকুল ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করে আমের হপার দমন করা সম্ভব।

প্রতিটি আমেই প্রকৃতিগতভাবে ১ থেকে ৬০ পিপিএম ফরমালিন থাকে। দেশের আমে সাধারণত ফরমালিন মেশানো হয় না। তাই নিশ্চিন্ত মনেই আম খেতে পারেন জনগণ।
 
সোমবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইউএসএআইডি এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইন্স প্রজেক্ট (ডিএআই) যৌথভাবে আয়োজিত ‘আম বাজারজাতকরণে সহায়ক নীতি পরিবেশ’ শীর্ষক জাতীয় সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপের মূল প্রবন্ধে এসব কথা জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমএ রহিম।
 
 
মূল প্রবন্ধে এমএ রহিম বলেন, বাংলাদেশে ফলমূলে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। আমে প্রকৃতিগতভাবে ১ থেকে ৬০ পিপিএম ফরমালিন থাকে। যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। এ সময় আম উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অতিরিক্ত মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার না করার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
 
সংলাপে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার।
 
প্রধান অতিথি নাজমুল ইসলাম বলেন, আম প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ‘হট ওয়াটার মেশিন’ স্থাপন করা হয়েছে। আম বাজারজাতকরণের জন্য পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এ বাবদ ৬০০-৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হবে। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বলেন, সরকার রাজধানীর শ্যামপুর এলাকায় ফল পরীক্ষার জন্য একটি ল্যাবেরেটরি স্থাপন করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
 
ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশনের প্রতিনিধি ড. নূর আহমেদ খন্দকার বলেন, আমাদের কৃষি নীতিমালা রয়েছে এবং এখন সময় এসেছে তা বাস্তবায়নের। তিনি বিলম্বে ফল পাকানোর পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য কৃষি বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানান, যার মাধ্যমে মৌসুম শেষ হওয়ার পরও ফল খাওয়া সম্ভব হবে।
Tuesday, 18 October 2016 07:22

রেসিপি: আম ইলিশ

Written by

mango-ilish

বাঙালির প্রিয় মাছ ইলিশ। আর এই ইলিশকে নিয়েই তৈরী হয়েছে নানান পদ। তেমনি একটি পদ হল আম ইলিশ। আসুন জেনে নেই কীভাবে তৈরী হবে আম ইলিশ-

উপকরণ: 
ইলিশ মাছ ২ পিস, সরিষার তেল ৫০মিলি, কাল জিরা ২ গ্রাম, রসুন ১০ গ্রাম (কুচি), টমেটো ২৫০ গ্রাম (কুচি), হলুদগুঁড়া ২ গ্রাম, শুকনা মরিচ গুঁড়া ২ গ্রাম, শুকনা মরিচ ১টা, কাঁচা মরিচ ২টা, সবুজ আমের শাঁস ২৫ গ্রাম, ধনেপাতা ৫ গ্রাম (কুচি), আম ১টা (সেদ্ধ করে ৫টা লম্বা পিস করে কাটা), লবন স্বাদ মতো, পানি পরিমাণ মতো।

প্রণালী: 
একটা কড়াইতে সরিষার তেল দিন। তেল গরম হলে কাল জিরা এবং শুকনো মরিচ ফোড়ন দিন। এরপর রসুন কুচি দিন। রসুন কুচি সোনালি হয়ে গেলে টমেটো কুচি দিয়ে কষতে থাকুন। টমেটো নরম হয়ে গেলে নামিয়ে নিয়ে আলাদা রাখুন। ঠান্ডা হয়ে গেলে টমেটো বেটে নিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। কড়াইতে আবার তেল দিন। তেল গরম হলে টমেটোর তৈরি করা পেস্ট এবং সবুজ আমের শাঁস তিন চার মিনিট নেড়ে নিয়ে পানি দিন। ফুটে উঠলে ইলিশ মাছের পিস দিয়ে অল্প আঁচে ফুটিয়ে নিন। মাছ নরম হয়ে গেলে উপর থেকে কাঁচা মরিচ এবং সেদ্ধ করা আমের পিস দিয়ে নামিয়ে নিন। এরপর ধনেপাতা কুচি দিয়ে গার্নিশ করে গরম ভাতের সঙ্গে সার্ভ করুন।

বারো মাসই ফল ধরবে এমন একটি বিশেষ জাতের আমের সফল চাষ হয়েছে মাগুরায়। মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের বাগানে প্রথম বারের ফলন হয়েছে এই নতুন জাতের আমের। ভিয়েতনাম থেকে এই জাতের আমের চারা এসেছে কৃষি বিভাগ। পরীক্ষামূলভাবে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের বাগানে দু’বছর আগে এই চারা লাগানো হয়। মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদরা জানান, ভিয়েতনামে এই জাতের আমের নাম চুঁ। ৩ বছর আগে ভিয়েতনামে প্রশিক্ষণে গিয়ে সেখানকার জার্ম প্লাজম কালেকশন সেন্টার থেকে মাগুরা হর্টিকালচারের কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম এই আমের ৩টি চারা নিয়ে আসেন। ওই বছরই এগুলো লাগিয়েছিলেন মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারের মাঠে। গতবছর চৈত্র-বৈশাখ প্রান্তিকে প্রথম ফলন আসে এই গাছে। পরবর্তীতে বর্তমান সময় পর্যন্ত ৩ বার মুকুল ও ফলন এসেছে সেখানে। গাছগুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, কিছু ডালে আম পরিপক্ব হতে না হতেই আরেকটি ডালে মুকুল এসে যায়। এভাবে ৪ মাস অন্তর এটিতে ফলন আসে। এ কারণে এটিকে বারোমাসি আম বলা হয়। পরিপক্ব আমগুলোর প্রতিটির ওজন ৪০০ থেকে ৫০০ গ্রাম। আমগুলো খেতে অনেক সুমিষ্ট। পাকলে গাঢ় হলুদ রঙ্গের হয়। গাছের উচ্চতা ৭ থেকে ৮ ফিট। এই জাতের আম সাধারণ জাতের তুলনায় প্রাকৃতিকভাবে দ্বিগুণ সংরক্ষণ ক্ষমতার অধিকারী। সাধারণ জাতের একটি পাকা আম গাছ থেকে তোলার পর বাড়িতে এক সপ্তাহ সংরক্ষণ করা যায়। এই জাতের আম সেক্ষেত্রে ১৫ দিন সংরক্ষিত থাকে।

ইসলামপুরের গাইবান্ধা ইউনিয়নের আগুনেরচরে একটি আম গাছের গোড়া থেকে গজিয়ে উঠেছে হাতসদৃশ মসজাতীয় উদ্ভিদ বা ছত্রাক। ওই ছত্রাককে অলৌকিক হাতের উত্থান এবং ওই হাত ভেজানো পানি খেলে যেকোন রোগ ভাল হয় বলে অপপ্রচার করছে স্থানীয় ভ- চক্র। আর ওই ভ-ামির ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিদিন প্রতারিত হচ্ছেন শত শত মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ইসলামপুরের গাইবান্ধা ইউনিয়নের আগুনেরচর এলাকায় কিতাব আলীর পুকুরপাড়ে কয়েক বছর আগে কেটে ফেলা আম গাছের গোড়ার নিচ থেকে মসজাতীয় দুটি ছত্রাক বেরিয়েছে। ছত্রাক দুটির মধ্যে একটি দেখতে অনেকটা মানুষের হাতের মতো। ওই হাতসদৃশ ছত্রাককে স্থানীয় এক চক্র অলৌকিক হাতের উত্থান বলে অপপ্রচার করছে এবং অলৌকিক ওই হাত ভেজানো পানি খেলে মানুষের রোগ ভাল হয় । তারা হাতসদৃশ ছত্রাকের জায়গাটি মাজারের রূপ দিয়ে সাজিয়ে সেখানে স্থানীয় নাপিতেরচর গ্রামের পলাশ নামের এক অর্ধপাগলকে বসিয়ে তাকে দিয়ে আগন্তুকদের হাতে বোতলভর্তি পানি দিচ্ছে এবং নগদ টাকাপয়সা আদায় করছে। ওই অপপ্রচারে মুগ্ধ হয়ে কুসংস্কারাচ্ছন্ন শত শত মানুষ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন সেখানে এসে যে যার মতো করে টাকা দান করে বোতল ভরে পানি নিয়ে যাচ্ছে রোগ মুক্তির আশায়। আর কুসংস্কারাচ্ছন্ন ওইসব মানুষের আগমনে জোয়ার তুলতে স্থানীয় চক্র সেখানে কিছু পাগলকে ডেকে এনে গান-বাজনা করাচ্ছে ও গঞ্জিকার আসর বসিয়েছে। এছাড়াও স্থানীয় চক্রটি মৃত আম গাছের গুঁড়িসহ হাতের মতো ছত্রাকটি লাল সালু কাপড় ও রং-বেরঙের জড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে সেটিকে জিন্দা পীরের হাতের মাজার বলে অপপ্রচার করছে। এ ঘটনাকে ধর্মপ্রাণ মানুষজন শিরক ও বেদাত বললেও সেখানে উৎসুক দর্শনার্থী ও রোগ মুক্তির আশায় হাতসদৃশ ছত্রাক ভেজানো পানি নেয়া কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষের ভিড় দিন দিন বাড়ছে।

সংবাদ সম্মেলন নড়াইলে হত্যা মামলা তুলে নিতে হত্যার হুমকি

নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল, ৩ অক্টোবর ॥ খড়ড়িয়া গ্রামে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে বিজিবি সদস্য আলী আজগর মিনা হত্যাকা-ের ঘটনায় আসামিরা মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে হত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। মামলার প্রধান আসামির আত্মীয় লে. কর্নেল পদমর্যাদার এক ব্যক্তির প্ররোচনায় চার সাদা পোশাকধারী বাদীর বাড়িতে গিয়ে নিহতের স্ত্রীকে মামলা তুলে না নিলে সন্তানসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে। সোমবার দুপুরে নড়াইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগ করেন নিহতের স্ত্রী নাছিমা খাতুন বুলু এবং নিহতের ভাই মামলার বাদী ইকবাল হোসেন মিনা।

নিহত বিজিবি সদস্য আলী অজগর মিনার স্ত্রী নাছিমা খাতুন বুলু এবং ভাই মামলার বাদী ইকবাল হোসেন মিনা লিখিত অভিযোগে জানান, ১৫ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে সাদা পোশাকধারী অপরিচিত চারজন তাদের বাড়িতে এসে মামলা তুলে নেয়ার নির্দেশ দেয় এবং বলে মামলা তুলে না নিলে আজগরের দুই সন্তান আশিক ও ইয়াসিনসহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করা হবে। তারা অভিযোগে জানান, মামলার প্রধান আসামি রাজা মোল্যার খড়ড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা লে. কর্নেল পদমর্যাদার মামাত ভাইয়ের প্ররোচনায় এ হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই সেনা কর্মকর্তা মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের চাপপ্রয়োগ করে আসছে। এ অবস্থায় দুই শিশুসন্তান নিয়ে আজগরের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছে। কালিয়া উপজেলার পেড়লি ইউনিয়নের খড়ড়িয়া গ্রামে মিনা ও মোল্যা বংশের মধ্যে জমিজমার বিরোধকে কেন্দ্র করে ৮ সেপ্টেম্বর মোল্যা বংশের লোকেরা আজগরকে তার বাড়ির সামনে প্রকাশ্যে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

অবশেষে শেরপুরে জেল সুপারসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৩ অক্টোবর ॥ জেলা কারাগারে জামিনে মুক্ত আসামির স্বজনদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রতিবাদ করায় কারারক্ষীদের হাতে পরিবহন শ্রমিক নেতা আলমগীর হোসেন বিশুকে নির্যাতনের ঘটনায় আদালতে মামলা হয়েছে। সোমবার দুপুরে আহত শ্রমিক নেতা বিশুর স্ত্রী শান্তি বেগম বাদী হয়ে আদালতে মামলাটি দায়ের করলে চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুর রহমান তা গ্রহণ করেন এবং বিকেলে দেয়া আদেশে জখমীর ডাক্তারী সনদপত্র সংগ্রহ সাপেক্ষে ঘটনার বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় জেল সুপার মজিবুর রহমান ও প্রধান কারারক্ষী বাবুল মিয়াসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়েছে।

Page 45 of 58