x 
Empty Product

ঢাকা দোহারের হাট বাজার গুলোতে মৌসুমি ফল আমে ভরপুর হলেও কোন বাজার বা হাটে আম দোকানের আসে পাশে মাছি নেই বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। আমরা অর্থ দিয়ে নিজেরাই বিষ কিনে খাচ্ছি, এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের। জানা যায়, দোহার উপজেলায় মুকসুদপুর, নারিশা, সুতারপাড়া, বিলাসপুর, কুসুমহাটি, নয়াবাড়ী, রায়পাড়া ও জয়পাড়া ইউনিয়নের হাটবাজারের মৌসুমি ফল ফজলি, গোপালভোগ ও সূর্য্যি মুখীসহ বিভিন্ন নামের আম ভরপুর হলেও আম দোকান গুলোর আসেপাশে কোন মাছি নেই। পল্লিবাজার এলাকার বাসীন্দা মিজানুর রহমান মিলন জানায়, মাছি ও বুঝতে পারছে এই আমে বিষ আছে তাই একটি মাছিও আম দোকানের আসে পাশে দেখা যায় না। নারিশার মঞ্জু মোল্লা বলেন, আমরা সব জেনে শুনে অর্থ দিয়ে নিজে ও পরিবারের ছোট বড় সবার জন্য বিষ কিনে নিয়ে খাওয়াচ্ছি। মেঘুলা বাজারের আম বিক্রেতা সজিব মিয়া জানায়, আমরা ঢাকার আড়ৎ থেকে আম এনে বিক্রি করি, আমরাতো আর কেমিক্যাল দিচ্ছিনা। সুতারপাড়ার মরিয়ম, জয়পাড়ার মনি, কুসুমহাটির খালেকসহ সকলের দাবী বাজারে কেমিক্যাল মুক্ত আম বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হোক।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ‘ব্যানানা আম’ চাষ আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নতুন জাতের ‘ব্যানানা আম’ চাষ। থাইল্যান্ড থেকে আসা এই আমটি স্বাদে, গন্ধে যেমন অনন্য, তেমনি এর চাষ পদ্ধতি সহজ। বাজারে ব্যাপক চাহিদা ও লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে এই আমের বাগানের সংখ্যা। বিদেশে রপ্তানিযোগ্য নাবী জাতের এই আমের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা নিয়েও আশাবাদ ব্যক্ত করেন গবেষকরা।


আমটি দেখতে একেবারে কলার মতো। দূর থেকে দেখে মনে হয় আমগাছে সাগর কলা ঝুলছে! তবে ব্যানানা ম্যাঙ্গো গায়ে-গতরে মোটা। পাকলে সাগর কলার রূপ নেয়। কলার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে অনেকের দৃষ্টি কাড়ে।

জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে শত শত জাতের আমের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একটি আম। থাইল্যান্ড থেকে আসা নাবী জাতের এই আমের নাম ‘ব্যানানা’। দেখতে আর্কষনীয়, স্বাদে ও গন্ধে অনন্য। সাড়ে ৩’শ থেকে সাড়ে ৪’শ গ্রাম ওজনের এই আমটি, ব্যাতিক্রমি বৈশিষ্ট্যের কারণে ইতোমধ্যেই চাষিদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ায়, এই আম চাষ করে আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন চাষিরা। বাজারে প্রচুর চাহিদা থাকায় দিন দিন বাড়ছে বাগানের সংখ্যা। 

কৃষক দুরুল হোদা বলেন, আমটি দেখতে খুব সুন্দর ও সুস্বাদু। নতুন জাতের আমের চারা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে সংগ্রহ করে ৫ বিঘা জমিতে লাগানো শুরু করি। ফজলি আম শেষ হওয়ার সময় ভাল জাতের আম না থাকায় এ নতুন জাতের ব্যানানা আম দেশের চাহিদা মিটিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। 

এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যান প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ জহুরুল ইসলাম বলেন, ২০১০ সালে থাইল্যান্ড থেকে এই জাতের ডগা নিয়ে এসে প্রথমে গ্রাফটিং করা হয়। পরে, হর্টিকালচার সেন্টারের গবেষকরা দেশের আবহাওয়ার সাথে খাপ খাওয়ানোর জন্য শুরু করেন গবেষণা। ৩ বছর গবেষণা করার পর আসে সফলতা। এরপর প্রতিবছর নিয়মিত আম আসায়, ২০১৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে কৃষকের মাঝে এই আমের সম্প্রসারণ কাজ শুরু হয় । এ জাতের আমের চারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে ছড়িয়ে দেয়া হবে। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক ড. সাইফুর রহমান বলেন, সাধারণত জুন মাসের পর থেকে দেশের বাজারে ভালো জাতের আমের প্রাপ্যতা যখন কমে আসে, তখন বাজারে আসে এই জাতের আম। স্বাদে গন্ধে অতুলনীয় ও বিদেশে রপ্তানিযোগ্য এই আম চাষ করে বাণিজ্যিকভাবে সফল হবেন চাষিরা। এ বছর ৫০ বিঘা জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদ করা হয়েছে।
 
তিনি আরো বলেন, বিদেশে রপ্তানিযোগ্য নাবী জাতের এই আমের চাহিদা ও বাজার মূল্য পাবার আশায় বাণিজ্যিকভাবে এই আমের চাষ নিয়েও অত্যন্ত আশাবাদী।

এবার বাম্পার ফলন হলেও সিন্ডিকেটের কবলে পড়েছে সাতক্ষীরার আম বাজার। পরিবহন, বিপনণ ও সংরক্ষণের অভাবে আমের ন্যায্য দাম পাচ্ছে না চাষীরা। বাজারে ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে আম। এ ছাড়া দাদন মালিকদের যোগসাজসে প্রকৃত আম চাষীরা বিপাকে। এরই মধ্যে প্রায় ২০০ টন আম ইউরোপের বাজারে যাওয়ার পথে। হাত বাড়ালেই ঘরে ঘরে আর। জেলা ব্যাপি আম আর আম। হাট-বাজার সয়লাব আমে। কোথাও তেমন দাম নেই। হিমসাগর ও ল্যাংড়া ছাড়া বেশির ভাগ আমের দাম ১০ থেকে ২০ টাকার মধ্যে। তাও আবার বিক্রি হচ্ছে না। পরিবহন খরচ বেশি ও আম দ্রুত পেকে যাওয়াতে আম বিক্রি নিয়ে বিপাকে পড়েছে চাষীরা। জেলাতে এ মৌসুমে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ আম কেনা-বেচা করে সংসার চালান। প্রশাসনের তেমন তদারকি না থাকায় ন্যয্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত আম চাষীরা। আমে মুকুল ধরা থেকে শুরু করে আম বিক্রি পর্যন্ত কয়েক দফায় হাত বদল হয়। প্রথমে আম চাষীদের কাছ থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা আম বাগান ক্রয় করেন। মৌসুমি ব্যবসাসীরা আবার সেই টাকা দাদন (বাকিতে টাকা নেয়া) নেন মহাজনদের কাছ থেকে। আম উঠলে এসব আম মহাজনদের কাছে বিক্রি করতে হবে এমন শর্তে । এমন মহাজনদের সংখ্যা জেলাতে অনেক এবং জেলার বাইরে আরো কয়েক ডজন। জেলাতে মৌসুমি ব্যবসায়ির সংখ্যা প্রায় তিনশয়ের মত। আর ব্যক্তি পর্যায়ে আম চাষী প্রায় দশ হাজার। আম উঠতে শুরু করলে বাজারের অদৃশ্য শক্তির ইশারায় দাম উঠতে থাকে। প্রকৃত পক্ষে দাম নির্ধারণ করে দেন দাদন মালিক মহাজনরা। ব্যক্তি পর্যায়ে আম চাষীদের আমে যখন বাজার সয়লাব হয়ে যায় তখন মাহজনরা আমের দাম কম দিয়ে দাম কমার বিভিন্ন অজুহাত দেয়। এভাবে আমের বাজার নিয়ন্ত্রন নেয় গুটি কয়েক মাহজন। মহাজনরা জানালেন ভিন্ন কথা। একন মহাজন জানান মৌসুমি ব্যবসায়িরা বিনা লাভে তাদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আম বাগান কেনে। পরে বাজার দামে তাদের কাছ থেকে আমরা আম কিনি। এরপর এসব আম ক্যারেট করতে কিংবা প্যাকে করতে খরচ হয় মনপ্রতি আরো ৫০ থেকে একশত টাকা । পরে পরিবহন, কুরিয়ার কিংবা ট্রাকে করে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলাতে সরবরাহ করা হয় এসব আম। এ সুযোগে কুরিয়ার মালিকরা সিন্ডিকেট করে আম সরবরাহে কয়েকগুণ খরচ নেন। সাতক্ষীরা থেকে ঢাকাতে আম পৌঁছাতে মণ প্রতি বিভিন্ন কুরিয়ারে খরচ ৫শ টাকা থেকে ৮শ টাকা পর্যন্ত। অন্য জেলাতে আরো বেশি। সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজার ঘুরে আম উৎপাদনে সিন্ডিকেটের কথা জানালেন কয়েক জন আম চাষী। রহমত মিয়া। সাতক্ষীরা বড় বাজারের একজন আম ব্যবসায়ি। তিনি ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলাতে সাতক্ষীরার আম পাঠান। তিনি জানান, বাজার থেকে আম কেনার পর মণ প্রতি পরিবহন খরচ ৪শ থেকে ৬শ টাকা পর্যন্ত। তিনি প্রতিদিন এক ট্রাক করে আম ঢাকাতে পাঠান। প্রতিদিন সাতক্ষীরা থেকে ছোট বড় ১০ থেকে ১৫ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়। এই আম নিয়ে স্থানীয় চাষীরা ছন্দের আকারে বলে থাকেন, ‘পৌষে কুশী মাঘে বোল, ফালগুনে গুটি, চৈত্রে আঁটি, বৈশাখে কাটি-কুটি, জৈষ্ঠে চাটি-চুটি, আষাড়ে ফেলাই আঁটি, শ্রাবনে বাজায় বাঁশি’ এর অর্থ হলো পৌষ মাসে আম গাছে কুশি হয় মাঘ মাসে বোল ধরে, ফালগুনে আমেতে গুটিতে পরিণত হয়। চৈত্রে মাসে আঁটি হয়। বৈশাখে কাঁচা আম আমরা কেটে-কুটে খায়। জৈষ্ঠি মাসে আমরা পাকা আম চেটে চুটে খায়। আষাড় মাসে আমরা আমের আঁটি ফেলে দেই। শ্রাবন মাসে আঁটিতে যখন গাছ গজায় তখন কিশোর-কিশোরিরা বাশি বাজায়। এমনি ভাবে বছর যায় আম চাষে। সাতক্ষীরার ১০০ হেক্টর জমির ওপর অবস্থিত ৩৭৭টি বাগানের প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার গাছের আম ব্রিটেনে রপ্তানির করা হচ্ছে। বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়ায় সাতক্ষীরায় এবার আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছর এই জেলা থেকে ২৩ টন আম ব্রিটেনের বাজারে রপ্তানি হয়েছিল। এবছর কৃষি বিভাগ যাচাই-বাছাই করে সদর উপজেলার ১৫০টি, কলারোয়ার ১০০টি, দেবহাটার ৪০টি ও তালার ৮৭টি বাগান নির্বাচিত করা হয়। ১০০ হেক্টর জমির এসব আমবাগানের মালিক ২২০ জন। গাছের সংখ্যা ১৪ হাজার ৪৫১টি। এসব বাগানে হিমসাগর, ল্যাংড়া ও আম্রপালি জাতের আমগাছ রয়েছে। কৃষি বিভাগের তত্ত্ববধানে এসব বাগানে বিষমুক্ত আম উৎপাদনের কার্যক্রম চলে। এ প্রক্রিয়ায় বাগানগুলো থেকে ৬০০ মেট্রিক টন আম উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে কৃষি বিভাগ জানান। যা থেকে বাছাই করে এ বছর ২০০ টন আম বিদেশে রপ্তানি করা যাবে বলে তাদের আশা। এজন্য এ বছর কোয়ারেন্টাইনের এক্সপোর্ট ডিডি, বাংলাদেশ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইসলাম এন্টারপ্রাইজ ও দীপ ইন্টারন্যাশনালের কর্মকর্তাসহ হার্টেক্স ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাতক্ষীরার আমবাগান পরিদর্শন করেছেন এফএও ফুড সেলের প্রোগ্রাম অফিসার মাইক ডিলন। কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আমের আবাদ করা হয়েছে তিন হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে, যা গতবারের চেয়ে ৫০ হেক্টর বেশি। আর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার মেট্রিক টন; যা গতবারের চেয়ে ১৫ হাজার টন বেশি। বাংলাদেশে রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ বাদ দিলে আম উৎপাদনে সাতক্ষীরা জেলা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সাতক্ষীরায় উৎপাদিত আম খুবই সুস্বাদু। তাছাড়া অন্যসব এলাকার আগে এ জেলার আম পাকে। সে কারণে এর কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও। জেলাতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোবিন্দভোগ, আম্রপালি, মল্লিকা, সিঁদুররাঙা, ফজলি, কাঁচামিঠা, বোম্বাই, লতাবোম্বাই বেশি চাষ হয়। ফলন ও কদর ভালো হওয়ায় জেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন আমবাগান। ফলে দিনে দিনে এ অঞ্চলে আমচাষ বেড়েই চলেছে। শ্রমিক দিয়ে সারা বছর পরিচর্যা করা হয় আমবাগান। এতে বহু লোকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। বিনিয়োগ করা হচ্ছে বিপুল অংকের টাকা। দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপের বাজারেও এখন বাড়ছে সাতক্ষীরার আমের কদর। তাই ইতালি, জার্মানি ও ইংল্যান্ডের বাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে সাতক্ষীরার হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম। তৃতীয় বারেমতো এবছর সাতক্ষীরার আম ইউরোপের বাজারে পাঠানো হয়েছে। ১৫ মে থেকে সাতক্ষীরার হিমসাগর আম গাছ থেকে পাড়ার সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। বর্তমানে হিমসাগর আম শেষ পর্যায়ে । এখন বাজারে আসতে শুরু করেছে আম্রপালি। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন জানান, আমে যাতে কেউ বিষাক্ত পদার্থ কারবাইট ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত সবসময় কাজ করছে। অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।এছাড়া ইউরোপের বাজারে সাতক্ষীরার আমের কদর বাড়ছে। সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান বলেন, আমচাষীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়ার কারণে এবছর আমের ফলন ভাল হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে।

আম আমাদের জাতীয় ফল না হলেও আমের জনপ্রিয়তা ফলের মধ্যে শীর্ষে। তাই আমকে ফলের রাজাও বলা হয়ে থাকে। পৃথিবীতে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সপ্তম। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক মিলিয়ন টন আম উৎপাদিত হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশগুলোতে আমের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আমের চাষ বেড়েছে অনেক গুণ। ২০১০ সালের ১৫ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে আমগাছকে বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। তার চেয়েও আনন্দের সংবাদটি হলো- বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আমের নতুন রফতানি বাজারের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রায় ৩০০ টন আম রফতানি করেছে। তা ছাড়াও বিশ্বের অনেক দেশে যেখানে বাংলাদেশীরা প্রবাস জীবনযাপন করছেন তাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাংলাদেশের আম বিভিন্নভাবে বিশ্বে পরিচিতি পয়েছে।

আম সম্পর্কে জানা-অজানা

পৃথিবীর আমের অন্যতম আদি ভূমি বাংলাদেশ। আদি প্রজাতি ছাড়াও বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত বেশকিছু জাতের আম ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সুদর্শন, সুস্বাদু জনপ্রিয়তার কারণেই আম ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপিন্সের জাতীয় ফল। সরকারী হিসাবে মৌসুমে দেশের মানুষ গড়ে তিন কেজি করে আম খায়। বাংলাদেশের মাথাপিছু আম উৎপাদনের পরিমাণ দেড় কেজি। ভারত ও পাকিস্তানে এ হার যথাক্রমে ১১ ও ৬ কেজি। তাঞ্জানিয়ায় মাথাপিছু উৎপাদন ৭ কেজি, সুদানে সাড়ে ৭, ফিলিপিন্সে ৬ ও জায়ারে ৫ কেজি। দেশে শতাধিক প্রজাতির আমের মধ্যে প্রায় ৫০ প্রজাতির আম টিকে আছে। জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাত (গোপালভোগ), হিমসাগর, লক্ষণভোগ, মোহনভোগ, গোপালভোগ ও বোম্বাই। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের হিসেবে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৮০০ জাতের আম চাষের সন্ধান পাওয়া গেছে। এর বাইরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা ১১টি ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ২১টি আমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। আম্রপালি হচ্ছে সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্ভাবিত জাত।

শীর্ষ তালিকায় নাম তুলেছে আম

ধারাবাহিক উৎপাদন বৃদ্ধির সুবাদে আম উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দশে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফএও) ২০১৪ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম আম উৎপাদনকারী দেশ। আম উৎপাদনকারী শীর্ষ তালিকায় অন্য দেশগুলো হচ্ছে- ভারত, চীন, কেনিয়া, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মেক্সিকো, ব্রাজিল, নাইজিরিয়া। আবার দেশে বিভিন্ন ধরনের ফলের মধ্যে সর্বাধিক উৎপাদিত ফল আম ও কাঁঠাল। নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন, সম্ভাবনাময় অঞ্চলগুলোয় আবাদ বৃদ্ধি ও প্রক্রিয়াজাত শিল্প সম্প্রসারণের কারণেই বাংলাদেশে ফল উৎপাদনের কাঁঠালকে ছাড়িয়ে উৎপাদনের শীর্ষে এখন আম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বলছে, দেশে ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৮ লাখ ৪২ হাজার টন, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৯ লাখ ৯২ হাজার টন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে আম উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ ৬১ হাজার ৬৮৫ টন। শুধু কাঁঠাল নয়, সব ধরনের ফলের মধ্যেই আম উৎপাদন এখন সবচেয়ে বেশি। দেশে সবেচেয়ে বেশি আম উৎপাদন হচ্ছে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। সব মিলিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে আম উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুফলও আসবে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।

অর্থনীতিতে আমের অবদান

রাজকীয় ফল আম অর্থকরী ফসল হিসেবেও জাতীয় অর্থনীতিতে শক্ত ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশ আম উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ী সমিতির হিসাবে, দেশে বর্তমানে আমের অভ্যন্তরীণ বাজার প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার। জানলে অবাক হতে হয়, শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমকে কেন্দ্র করে বছরে দেড় থেকে দুই হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। বছরে কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় ছয় কোটি টাকার দুই লাখ আমের চারা। আমবাগান বৃদ্ধির পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িত কর্মজীবীর সংখ্যাও বাড়ছে। আমের মৌসুমে এখানে ৮ থেকে ১০ লাখ লোক আম গাছ পরিচর্যা, বাগান পরিষ্কার রাখা, আম সংগ্রহ, বিক্রি ও পরিবহন ইত্যাদি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পুরো রাজশাহী অঞ্চলে আমকে কেন্দ্র করে আম বাগানি, বাগান লিজদার, বাগান প্রহরী, বাগান পরিচর্যাকারী, বহনকারী, আড়তদার, অস্থায়ী হোটেল ব্যবসায়ী, ঝরা আমের কারবারি এসব নানা কর্মের চাঞ্চল্যতা লক্ষণীয়। সেখানকার নারী থেকে শিশুরাও আম কেন্দ্রিক অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত। আম কেটে শুকিয়ে তৈরি করা আমচুর কিংবা আমসত্বেও নাকি কোটি টাকার বাজার। ফ্রুটি, ফ্রুটিকা ইত্যাদি আদুরে নামে দেশে আমের জুসের তৈরি ফ্রুট ড্রিঙ্কস শিল্প হিসেবে আমের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করেছে প্রাণ-আরএফএল, আকিজ গ্রুপ, একমি, সজীব, ট্রান্সকম ও পারটেক্সের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। জানা গেছে এসব প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর উৎপাদিত আমের ১৫-২০ শতাংশ সংগ্রহ করছে যা ক্রমশ আমের দেশীয় বাজারকে শক্তিশালী করে তুলছে। আশাবাদের ব্যাপার হচ্ছে- দেশের চাহিদা মিটিয়ে আমের জুস এখন রফতানি হচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বর্তমানে দেশ ও রফতানি মিলে জুসের বাজার দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার। দেশে তৈরি জুস রফতানি হচ্ছেÑ আরব আমিরাত, আবুধাবি, দুবাই, সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইতালি, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের বাজারে।

স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ আম রফতানির নতুন আশা

বাংলাদেশের আম নিয়ে বিদেশিদের নেতিবাচক ধারণা কাটতে শুরু করায় ইউরোপের দেশগুলোতে আমের চাহিদা বাড়ছে। এ বছর রফতানির পরিমাণ বেড়ে এক হাজার টনে উন্নীত হচ্ছে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের আম রফতানির ক্ষেত্রে নতুন সম্ভাবনাটি হলোÑ বাংলাদেশের আম যখন পাকে তখন বিশ্ববাজারে অন্য কোন দেশের আম আসে না। যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা বিশ্বের অন্যতম সুস্বাদু ফল হিসেবে বাংলাদেশের আমকে বেশ পছন্দ করছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকমান বজায় রেখে উৎপাদন করতে পারলে বছরে ১ হাজার টন আম রফতানি করা সম্ভব হবে বলে জানা গেছে। জানা গেছে, এ বছর হিমসাগর, ল্যাংড়া, লহ্মণভোগ, আম্রপালি আম রফতানি হবে। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, গ্রীসসহ ইউরোপের অন্যান্য দেশে আম রফতানি হলেও সবচেয়ে বেশি আম রফতানি হবে যুক্তরাজ্যে। বিদেশে রফতানিযোগ্য আম সংগ্রহে কিভাবে নিরাপদ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় সে বিষয়েও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে চাষীদের। এ ছাড়াও এবার প্রথম বারের মতো ২ টন হিমসাগর আম ইতালি রফতানি করা হয়। পাশাপাশি আমের বাণিজ্যিক ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে চাহিদা সৃষ্টি করতে প্রক্রিয়াজাত শিল্পের বিকাশ ঘটানো হচ্ছে।

 

ভালো আম নেন, ১০০ টাকা কেজি। দেখতে ভালো, খেতে মজা। এভাবেই রাজধানীর মতিঝিলে আরিফ নামে এক ফল ব্যবসায়ী সাতক্ষীরার হিমসাগর আম বিক্রি করছেন। মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের রইসউদ্দিনও বলেন, লেন লেন ভালো আম, সাতক্ষীরার হিমসাগর আম, প্রতি কেজি ৯০ টাকা। শুধু ওই দুজনই নন, রাজধানীর অলিগলি অন্যান্য ফলের সঙ্গে বাহারি রঙের আমে ছেয়ে গেছে। গতকাল রোজার প্রথম দিনে এভাবেই ভোক্তাদের কাছে আম বিক্রির চেষ্টা করেন বিক্রেতারা। কেউ আবার বলছেন, রাজশাহীর ন্যাংড়া আম, ভালো আম ৮০ টাকা কেজি। কিন্তু আমের রাজধানী বলে খ্যাত ‘কানসাট বাজার’-এর আড়তে এখনো খিরসা বা ন্যাংড়া আম ওঠেনি। তবে ১ জুন থেকে ওই এলাকায় আম পাড়া (গাছ থেকে নামা) শুরু হবে।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা মানবকণ্ঠকে বলেন, ভালোমানের অর্থাৎ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর হিমসাগর এবং খিরসা আম পাওয়া যাবে জুনের প্রথম থেকে দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এমএ রহিমও বলেন, রাজশাহী অঞ্চলের হিমসাগর ও খিরসা পাওয়া যাবে ১ জুন থেকে। যা সাতক্ষীরা অঞ্চলে ১ মে ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলে ১৫ মে থেকে আম পাড়া শুরু হয়েছে। তবে সংরক্ষণের নামে আমে যে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে তা নিয়ে তাদের মধ্যেই দেখা দিয়েছে দ্বিমত।
আমের রাজধানী বলে খ্যাত অর্থাৎ চাঁপাইনবাগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় ভালো মানের আম উৎপাদন হয়, সেখানে গোপালভোগ আম পাড়া শুরু হয়েছে গত ২৫ মে থেকে। জেলা প্রশাসক আনুষ্ঠানিকভাবে গত বছরের মতো এবারো আম পাড়ার উদ্বোধন করেন। তাই কিছু আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা গুটি ও গোপালভোগ।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক নিয়ামত আলী এ প্রতিবেদককে বলেন, বাজারে আম নামতে শুরু করেছে। কিন্তু তেমন স্বাদের নয়। কারণ ভালো মানের আম হচ্ছে খিরসা ও ন্যাংড়া। যা এখানো বাজারে আসেনি। একই কথা বলেন, কানসাট বাজারের নিহার বানু সুমি। তিনি বলেন, কয়েকদিন থেকে বাজারে গুটি ও গোপালভোগ আম পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু সেগুলো তো খিরসা ও ন্যাংড়ার মতো বেশি স্বাদের নয়। কারণ গোপালভোগ আমে আঁশ থাকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বারির আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব কেন্দ্র তথা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. হামিম রোজা বলেন, আমের জাতগুলোর পরিপক্কতার সময় এক নয়। তাই বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে সময়কাল নির্ধারণ করা হয়েছে। এরপর থেকেই ব্যবসায়ীরা বাজারে তা বিক্রি করতে পারবেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজধানীর জন্য গোপালভোগ আমের মৌসুম শুরু মের ৪র্থ সপ্তাহ। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে নির্দেশনা মোতাবেক গত ২৫ মে আম পাড়া শুরু হয়েছে। এরপরে বাজারেও বেচাকেনা শুরু হয়েছে। হিমসাগর ও খিরসা শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে। ন্যাংড়া জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে। ফজলি আম পাওয়া যাবে দ্বিতীয় জুলাই থেকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অঞ্চল ভেদে একই আমের স্বাদ মাটির কারণে কিছুটা কম-বেশি হয়। যা ভোক্তার কাছেও অনুভব হচ্ছে।
বিএইউর প্রফেসর ড. রহিম আমের ওপর বিস্তারিত গবেষণা করে তার তথ্য উপাত্ত বর্ণনা করেন। তাতেও আমের মৌসুম অঞ্চলভেদে সময়ের তারতম্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে রাজশাহী, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে আম চাষ হচ্ছে। তাই দেখা যায় গুটি আম ১ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে, ৫ মে চুয়াডাঙ্গা, মধ্য মে’তে রাজশাহীতে পাওয়া যায়। এরপরে দ্বিতীয় সপ্তাতে সাতক্ষীরায় হিমসাগর, ১৫ মে চুয়াডাঙ্গা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ১ জুনে রাজশাহী অঞ্চলে হিমসাগর, খিরসা ও ন্যাংড়া আম পাওয়া যাবে। অপরদিকে, ন্যাংড়া আম ২৫ মে সাতক্ষীরা ও পার্বত্য অঞ্চলে এবং ২০ মে চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া যাবে।
এ আমের বাজার অল্প সময়ে শেষ হয়ে গেলেও একটু উদ্যোগী হলে মাস খানেক তা ধরে রাখা সম্ভব। এ ব্যাপারে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের সাবেক ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. জমির উদ্দন বলেন, ধানি জমি ও অন্যান্য শস্যের চেয়ে ৪ থেকে ৫ গুণ লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা আমের দিকে ঝুঁকছে বেশি। এখন পর্যন্ত যে যাই করুক স্বাভাবিক নিয়মেই আমের রং ভালো থাকার পাশাপাশি কোয়লিটিও ঠিক থাকে। তবে আমকে সতেজ রাখতে চীন থেকে এনে বাগানে সাদা ও ব্রাউন চাইনিজ ফ্রুট ব্যাগে আম ঢুকিয়ে কোনো কোনো জায়গায় আমচাষিদের প্ররোচিত করা হচ্ছে। এতে লাভের কথা বলা হলেও পরিশেষে এর ফল উল্টা হচ্ছে। তিনি বলেন, মুকুলের সময় থেকেই সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায় ও সঠিক পদ্ধতিতে আম বাগানের পরিচর্যা, সেচ ও সারপ্রয়োগ এবং অনুমোদিত মাত্রায় বালাইনাশক প্রয়োগ করলেই ভালো মানের আম বাজারজাত করা যায়। তিনি আরো বলেন, ১৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ২১ দিন বা এক মাস আম রাখা যাবে। তবে উদ্যোগ ও প্রচারণার অভাবেই তা অজানা থেকে যাচ্ছে।
তবে ড. জমিরের এ বক্তব্য মানতে নারাজ ড. রেজা। তিনি বলেন, ফ্রুট ব্যাগিং ছাড়া আমের কোয়ালিটি ঠিক রাখা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে এটার ব্যবহার হচ্ছে। আমাদের দেশে হচ্ছে না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যে কোনো ব্যাপারে নতুন কিছু আয়ত্ত করতে একটু সময় লাগবে। এটা ছাড়া বিশ্বে আম রফতানি হবে না। তাই খুব অল্প সময়ে হাইড্রোলিক মইয়ের ব্যবহার হবে আম বাগানে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের জন্য।
আমে ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারে তাদের দ্বিমত দেখা দেয়ায় প্রফেসর রহিমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আমের ব্যাপারে গবেষণা করে আমি ১৫টি জাত উদ্ভাবন করেছি। তবে আমে ফ্রুট ব্যাগের ব্যবহার নিয়ে কিছু করা হয়নি। এর ব্যবহার কতটুকু যুক্তিযুক্ত সে ব্যাপারে তিনি বলেন, এর ভালো বা খারাপ কিছু আমি বলতে পারব না। কারণ স্বাভাবিকভাবেই পরিমিত কীটনাশক ব্যবহার করলে আমের কোনো ক্ষতি হবে না।
ঢাকার কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে বিভিন্ন কেমিক্যাল মিশিয়ে থাকেন আমে। তার প্রভাবে ২০১৪ ও ১৫ সালে অনেক আম ধ্বংস করে প্রশাসন। তবে ফরমালিনের ব্যবহার আতঙ্ক এবারে তেমন নেই। তাই আম ব্যবসায়ীরা এবার ভালোভাবে আম ব্যবসা করতে পারবেন বলে জানান।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রমতে, গত ১০ বছরে দেশে আমের উৎপাদন চার গুণ বেড়ে হয়েছে ১০ লাখ টন। ২০০৫ সালে বাংলাদেশে মাত্র আড়াই লাখ টন আম উৎপাদন করে বিশ্বের ১৪তম উৎপাদনকারী দেশের তালিকায় ছিল। যা বর্তমানে সপ্তম স্থানে চলে এসেছে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে আমের চাষ। তবে প্রকৃতপক্ষে দেশের মোট কত একর জমিতে আম চাষ হচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দিতে পারেনি।

 

https://www.manobkantha.com

chap-gas-copy

গ্যাস সুবিধা না থাকা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমের প্রধান অঞ্চল চাঁপাইনবাবগঞ্জে গড়ে উঠছে না আম কেন্দ্রিক কোনো শিল্প কারখানা। জেলায় মৌসুমে কয়েক লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হলেও ঝরে যাওয়াসহ নানা কারণে এর অধিকাংশ আম নষ্ট হয়ে যায় পরিপক্ব হওয়ার আগেই।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব আম প্রক্রিয়াজাত করার ব্যবস্থা করা হলে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি শত কোটি টাকার আমজাত পণ্য উৎপাদন সম্ভব। যা জেলার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী জেলায় প্রতিবছর আম উৎপাদন হয় আড়াই লাখ মেট্রিক টন। আর জেলা চেম্বারের হিসাব অনুযায়ী এর পরিমাণ চার লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি। তবে বাজারের আসার আগে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিসহ বিভিন্ন কারণে কি পরিমাণ আম ঝরে পড়ে তার কোনো হিসেব নেই কারো কাছেই।

বাগান মালিকদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ব্যবহার উপযোগী হওয়ার পর ঝরে যাওয়া আমের পরিমাণ ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। যার বাণিজ্যিক কোনো ব্যবহার না থাকায় কাজে আসেনা বাগান মালিকদের। স্থানীয়রা এই আম সংগ্রহ করলেও তা নামমাত্র দামে বিক্রি করেন আড়ৎদারদের কাছে। যা সরবরাহ হয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।

এর সামান্য কিছু অংশ ব্যবহার হয় স্থানীয়ভাবে। আমসত্ত্ব ও  আমচুর বা আম শুটকি কেনাবেচা হয় বলে জানান আমসত্ত্ব ও আমচুর আড়ত মালিক সাদিকুল ইসলাম।

দেশের মোট উৎপাদিত আমের ৬০ভাগ আম এই জেলায় উৎপাদন হলেও গ্যাস সংযোগ না থাকায় আম ভিত্তিক শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছেনা বলে জানান বাংলাদেশ ম্যাংগো প্রডিউসার মার্চেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি মোঃ আব্দুল ওয়াহেদ।

রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের দূরত্ব ৪৩ কিলোমিটার। ব্যবসায়ীরা জানান, এই দূরত্বে গ্যাস সংযোগের অভাবে সম্ভাবনাময় এই শিল্পকে কাজে লাগানো যাচ্ছেনা।

ফরমালিন ব্যবহারের ভুল ধারণার কারণে ২০১৩ সালে প্রচুর পরিমাণে আম ধ্বংস করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) ডাই প্রকল্পের টিম লিডার মো. শোয়েব চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ফরমালিন ব্যবহার নিয়ে কিছু ভুল ধারণা ছিল। ওই কারণেই ২০১৩ সালে প্রচুর পরিমাণে আম ধ্বংস করা হয়েছিল। ওই সময় আমে ফরমালিনের উপস্থিতি শনাক্ত করার যন্ত্রগুলোও ঠিক ছিল না। ফলে ফরমালিনের নামে আম ধ্বংস করা ছিল ভুল।’
বুধবার (২৪ মে) ঢাকা চেম্বারে আমের বাজারজাতকরণে নীতি সহায়ক পরিবেশ বিষয়ক এক আলোচনা সভায় শোয়েব চৌধুরী এসব কথা বলেন। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এবং ইউএসএআইডি’র এগ্রিকালচার ভ্যালু চেইনস (এভিসি) প্রজেক্ট যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক।
আলোচনা সভায় বাংলাদেশে আম পাকানোর জন্য ফরমালিন ব্যবহার করা হয় না বলে জানান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যানবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘আম পাকানো এবং সংরক্ষণে ফরমালিন কোনও কাজেই আসে না। বরং প্রাকৃতিকগতভাবেই আমে ১.২২ থেকে ৩.০৮ পিপিএম পরিমাণে ফরমালিন থাকে, যা আমকে পাকতে সাহায্য করে।’
বিপরীতে আম পাকাতে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার প্রসঙ্গে আব্দুর রহিম বলেন, ‘দেশে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও কিছু অসৎ ব্যবসায়ী আম পাকাতে এটি ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু এটি মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’ বরং আম পাকানোর জন্য ২শ থেকে এক হাজার পিপিএম পরিমাণ ইথিফোনের ব্যবহার নিরাপদ বলে জানান তিনি।

 

বিশ্বে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম এবং বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকার আমের বাজার রয়েছে। এ তথ্য উল্লেখ করে ড. আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমাদের দেশে সঠিক সংরক্ষণ ও পরিবহন ব্যবস্থার অভাবে আহরণের পর প্রায় ৩৩ ভাগ আমই নষ্ট হয়ে যায়।’ বরং বর্তমানে কৃষি পণ্য চাষাবাদে কীটনাশকের ব্যবহার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সভায় প্রধান অতিথি মুন্সী শফিউল হক বলেন, ‘জনগণের জন্য নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে সরকার মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আম চাষীদের আর্থিক ও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ার ফলে রাজশাহীর পর সাতক্ষীরাতেও বিস্তৃত পরিসরে আমের উৎপাদন হচ্ছে।’ তিনি আমচাষীদের কীটনাশক ব্যবহারের সচেতন করার কার্যক্রম গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

ডিসিসিআই’র মহাসচিব এ এইচ এম রেজাউল কবির বলেন, ‘প্রতিটি নাগরিকের পণ্য কেনায় ব্যবহৃত অর্থের মূল্য রয়েছে। তাই ভোক্তা পর্যায়ে আমের গুণগত মান নিশ্চিত করা আবশ্যক।’ তিনি বলেন, ‘আমে ফরমালিন বা কার্বাইড ব্যবহার না করার ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের আরও সচেতন হতে হবে।’

আলোচনায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এ হাশেম, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন অংশ গ্রহণ করেন।

হিমাগারের অভাবে আম নষ্ট হচ্ছে রাজশাহীর তানোরে সংরক্ষণের অভাবে প্রতিদিন প্রায় নষ্ট হয় লাখ টাকার আম। আম উৎপাদনে রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পরই বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রাণকেন্দ্র তানোরের স্থান। এ অঞ্চল থেকে প্রতি বছর এলাকার চাহিদা পূরণের পরেও বিপুল পরিমাণ আম দেশের সর্বত্র বাজারজাত করা হয়ে থাকে। অথচ এখন পর্যন্ত আধুনিক পদ্ধতিতে আম সংরক্ষণের জন্য হিমাগারের কোন ব্যবস্থা নেই এ অঞ্চলে। ফলে প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার আম নষ্ট হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কৃষকরা। তানোর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানা বড় ছোট মিলে এ অঞ্চলে দুই হাজারেরও বেশি আম বাগান রয়েছে। বর্তমানে এসব বাগান আরো সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। আম উৎপাদন করার জন্য প্রতিবছর প্রশিক্ষণ, আম গাছের পরিচর্যা, সার প্রয়োগ, বয়স্ক আম গাছের পরিবর্তে ফলনশীল জাতের নতুন নতুন চারা রোপণ করা হচ্ছে। রোগবালাই ও পোকামাকড় দমন করার জন্য নিয়মিত কাজ করছে চাষিরা। তানোর পৌর এলাকার বেলপুকুরিয়া গ্রামের আম বাগান মালিক মোজাম্মেল হক জানান, আমের ফলন বেশি হলেও প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতার অভাবে চাষিরা আমের দাম ভালো বঞ্চিত হয়। বাগান মালিকরা বিভিন্ন দালালের খপ্পরে পড়ে আম অল্প দামে বিক্রি করে। অনেক বাগান মালিক আম সংরক্ষণ করতে না পারায় প্রতি বছর আম পচে নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আম বাগানের উপর বা বাগান করার জন্য সরকার কোন ঋণ প্রদান করে না। তবে সরকার ঋণ প্রদান করলে আম চাষি ও বাগান মালিকেরা লাভবান হতে পারবে বলে জানান তিনি। জানতে চাইলে কৃষি অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, আমের ফলন বাড়ানোর জন্য গত কয়েক বছর ধরে কৃষি বিভাগ গাছে মুকুল আসা থেকে নিয়মিত পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় চাষিদের। আমের ফলন বৃদ্ধির জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে উন্নত জাতের সুবর্ণ, মল্লিকা, হাইব্রিড-১০, আমকলি, বার মাসি, রত্না, খিরষা, গোপালভোগ, ফজলি, ল্যাংডা আমরোপালী ইত্যাদি আমের চারা আমদানি করে রোপণ করা হয়। তিনি আরও বলেন, আম উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও সংরক্ষণ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক অবস্থা থাকায় আম চাষিদের প্রতিবছর লাখ লাখ টাকার ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। আর এ ক্ষতি এড়াতে আম সংরক্ষণে আধুনিক প্রক্রিয়া চালু করা হলে চাষিরা আম চাষে উৎসাহী হবে বলে মনে করেন তিনি

চারঘাট (রাজশাহী) সংবাদদাতা : রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া, বাগমারা, গুগাদাগাড়ী এলাকায় ইটভাটার আশপাশের আমচাষিরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে আমের গায়ে কালো দাগ দেখা দিয়েছে। এতে ভালো আমের চেয়ে অর্ধেক দামে বাজারে আম বিক্রি করতে হচ্ছে। ফলে যারা বাগান নিয়েছেন তাদের পড়তে হচ্ছে লোকসানের মুখে। 

রাজশাহীর চারঘাট, বাঘা, পুঠিয়া, বাগমারা ও গোদাগাড়ীতে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ৭০ থেকে ৮০টি ইটভাটা আছে। ইটভাটাগুলোর বেশিরভাগ আমের বাগান ও ফসলি জমির আশপাশে গড়ে উঠেছে। ইটভাটার পাশে যেসব আমের বাগান অবস্থিত সেসব বাগানের মালিক ও বাগান ক্রেতারা পড়েছেন বিপদে। অন্য বাগানের তুলনায় আমের উৎপাদন কম। সেই সঙ্গে আমের গায়ে দেখা দিয়েছে বড় বড় কালো দাগ। এতে ওই সব বাগানের মালিকরা বাজারে আম বিক্রি করতে পারছেন না। চারঘাট উপজেলার হলিদাগাছি এলাকার বাবর আলি বানেশ্বর হাটে চার মণ আম দুটি টুকরিতে করে বিক্রির উদ্দেশ্যে নিয়ে এসেছিলেন। তার আমগুলোতে কালো দাগ ছিল। বাজারে আসা ভালো আম ভালো দামে বিক্রি হলেও তার দুই টুকরি আম ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হয়েছে। বাবর জানান, ভালো আম হলে ২ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেত। কিন্তু আমের গায়ে দাগ থাকায় মাত্র মাত্র ৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। তার বাগানে ২২টি গাছ আছে। সব গাছের আমগুলোতে কালো দাগ পড়েছে। রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল আলিম জানান, ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি করে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পাতার পত্ররন্ধন বন্ধ কওে দেয় এবং উদ্ভিদের সালোকসংশে¬ষণ ও শোষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও সালফার-ডাই-অক্সাইড মিশ্রিত ছাই ফসলের ফুলের রেণু, যথা ধান, আম, কাঁঠাল, লিচু, শিম, কুমড়া, সরিষাসহ নানাবিধ ফসলের ফুলের রেণুকে বিনষ্ট করে এবং এই দূষণের কারণে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়। দেখা যায় যে, বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটার আশপাশের বৃক্ষের ফুল ঝরে যায় এবং পরাগায়নে বিঘœতার জন্য ফলবতি গাছের ফল ধারণক্ষমতা হ্রাস পায়। তাছাড়া আম, কাঁঠাল, লিচু, শিম, লাউ-কুমড়া ইত্যাদি ফলের গায়ে কালো দাগ পড়ে। অবৈজ্ঞানিক ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় চিমনির উচ্চতা কম থাকায় পরিবেশ দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন-২০০১-এর ৩(চ)৫ ধারা অনুযায়ী, আবাদি জমি ও ফলের বাগান থেকে তিন কিলোমিটার এলাকার ভিতওে কোনো ইটভাটা স্থাপন করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

http://www.dailysangram.com/post/284818

তিন মেট্রিক টন আম ইংল্যান্ডের উদ্দেশে পাঠানো হলো। তারা নিজ খরচে বাগান থেকে কাভার্ডভ্যানে করে এই আম অতিযত্নসহকারে ঢাকায় নিয়ে যাবেন। পরে তারাই আম পাঠাবেন। রোববার পাঠানো আমগুলো সবই ক্ষিরসাপাত (হিমসাগর)। প্রথম চালানে সফলতা আসলে পর্যায়ক্রমে আরও আম পাঠানো হবে। রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক আমগুলো পরীক্ষা করে প্রত্যয়নপত্র দেন, বলেন আনোয়ারুল হক।
রাজশাহীর পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা বলেন, গাছ থেকে নামানোর পর তারা আমগুলো পরখ করে দেখেন। মূলত ফ্রুট ব্যাগিং করা আমগুলো কোনো ধরনের কীটনাশক স্প্রে ছাড়া বিষমুক্ত। এই আমের গুণগতমান অনেক ভালো এবং সুস্বাদু। এই পদ্ধতির মাধ্যমে আমের শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়। এরপরও বিদেশে রপ্তানি করা হচ্ছে বলে বাড়তি সাবধানতা হিসেবে ফ্রুট ব্যাগিং করা আম নামানোর পর তারা বাগানে যান। এ সময় আমগুলো পরখ করে দেখেন। যেগুলো রপ্তানি উপযোগী, সেগুলো বাছাই করে অন্যগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রির জন্য আলাদা করে দেন তারা।
এরপরও রপ্তানিকারকের মাধ্যমে ঢাকায় যাওয়ার পর কৃষি অধিদপ্তরের অধীনে থাকা উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধকেন্দ্রের ল্যাবে এই আমগুলো আবারও পরীক্ষা করা হবে। সেখানে প্রথমে দেখা হবে আমগুলো পাকা কিনা এবং পোকা-রোগমুক্ত ও পচা কিনা। এরপর সেখানকার ল্যাবেই আমগুলোর ফরমালিন, ব্রিক্স, পি-এইচসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রাসায়নিক পরীক্ষা করা হবে। এরপরই মিলবে চূড়ান্ত প্রত্যয়ন। খুব কম সময়েই পরীক্ষাগুলো সম্পন্ন হয়। এ জন্য রপ্তানিকারকদের সমস্যা হয় না। দেশের সুনাম রক্ষার স্বার্থে সরকারি নির্দেশে এই প্রক্রিয়ার মধ্যেই আম রপ্তানি করতে হয় বলেও জানান এই কৃষি কর্মকর্তা।
এক প্রশ্নের জবাবে কৃষি কর্মকর্তা মঞ্জুর-এ-মাওলা বলেন, আম গবেষণা কেন্দ্রে দুই বছর ধরে ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে প্রায় ১৮ জাতের আমের ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। শেষে ব্যাপক সফলতা পাওয়ায় দুই বছর আগে আমচাষিদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে এটি উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। ৪০-৫০ দিন ব্যাগিং করার পর গাছ থেকে ভাঙা হয়। এই আম সংগ্রহের পর ১০-১৫ দিন পর্যন্ত অনায়াসেই সংরক্ষণ করে সেটা খাওয়া যায়। এখানে আম ভাঙার পর দ্রুত নষ্ট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেন তিনি।
এর আগে গত দুই বছর থেকে ইংল্যান্ডে রপ্তানি করা হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফ্রুট ব্যাগিং করা আম। গত বছরের ৮ জুন ৩ মেট্রিক টন ক্ষিরসাপাত আম রপ্তানির মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় বছরে পা রাখে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। চলতি বছরও এই প্রযুক্তিতে উৎপাদিত আম মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। তবে রাজশাহী থেকে এবারই প্রথম পাঠানো হলো ফ্রুট ব্যাগিং করা আম।


http://www.jaijaidinbd.com/

আমকে বলা হয় ফলের রাজা। আর গরমকালে আম না খেলে আমরা যেন আত্মার শান্তি পাইনা। তা চাটনি হিসেবে টক আম হোক বা পাকা আম। আম মানেই আমাদের মনে তৃপ্তি। কিন্তু জানেন কি একটু বেশিমাত্রায় আম খেলে হতে পারে শরীরের ক্ষতি।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পাকা আম খাওয়া ভালো, তবে খুব বেশি খাওয়া ঠিক নয়। পাকা আমে রয়েছে নানা ভিটামিন যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন, ভিটামিন এ বা বিটা ক্যারোটিন। আবার রয়েছে উচ্চমাত্রার চিনি, কার্বোহাইড্রেড ও গ্লাইসেমিক। তাছাড়া পাকা আমে ফিনোলিকস জাতীয় উপাদান থাকার কারণে তা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভালো উৎস।

পাকা আমে চিনির পরিমাণ বেশি থাকার ফলেই শরীর খারাপ হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। চিকিৎসকের কথায়, যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তারা একেবারেই দূরে থাকুন আমের থেকে। কেননা রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়িয়ে আম ক্ষতি করতে পারে শরীরের।

চিকিৎসকের কথায়, যারা অ্যাজমার সমস্যায় ভুগছেন তারা প্রয়োজনে কম খান আম। কিডনির সমস্যা যাদের রয়েছে তাদের পক্ষেও বেশি আম খাওয়া উচিত নয়।

পাকা আম অতিরিক্ত খেলে ওজন বেড়ে যাবে। বেড়ে যাবে রক্তে শর্করার পরিমাণ। রক্তে সুগারের পরিমান ও বেড়ে যাবে। আমের আরও উপাদান হচ্ছে, ফিটোকেমিকেল কম্পাউন্ড তথা গ্যালিক অ্যাসিড, ম্যাঙ্গফেরিন, কোয়ার্নেটিন এবং টেনিন বা কষজাতীয় উপাদান। এ উপাদানগুলো ক্ষতিকর।

http://www.bd-pratidin.com/health-tips/2017/06/11/239246

রাজশাহীর খিরসা (হিমসাগর) আমটি পরিপক্ব হতে আরো এক সপ্তাহ বাকি। গাছগুলোতে এখনো পাকতে শুরু করেনি আম। অথচ এখনই ঢাকার অলিতে-গলিতে মিলছে রাজশাহীর এই আমটি। হলদে রঙের আম দেখে লোভ সামলানো দায়। তাই ক্রেতারাও দেদারসে কিনে বাসায় নিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীবাসী অপরিপক্ব জ্যৈষ্ঠের রসালো ফল আমের স্বাদ নিচ্ছেন সপরিবারে। কেমিক্যাল মিশ্রিত এসব আমে ছয়লাব হয়ে গেছে বাজার।
রাজশাহীতে আম পরিপক্ব না হলেও এমন লোভনীয় রঙের আম বাজারে কিভাবে এলো এমন প্রশ্ন করা হয় মতিঝিলের এক আমবিক্রেতাকে। তার জবাবে বেরিয়ে আসে লোভনীয় রঙের রহস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, রাজশাহীর বাগানের আমগাছগুলোতে এখনো ৪০ ভাগ এখনো অপরিপক্ব। বাকি ৬০ ভাগ আম পরিপক্ব হয়েছে। এখন বাজারে আমের চাহিদা অনেক। তাই আমগাছ থেকে নামিয়ে কেমিক্যাল ¯েপ্র করা হচ্ছে আমে। এরপর তা খাচি বা ক্যারেটে সাজিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে রাজধানীতে। এই সময়ের মধ্যেই পাকা আমের মতো লোভনীয় রঙ ধরছে। বাজারে এই আমের চাহিদাও অনেক বেশি।
 দেশের শীর্ষ আম উৎপাদনকারী জেলাগুলোর বিভিন্ন স্থানে তিকারক কার্বাইড দিয়ে আম পাকানো থামছে না। প্রশাসনের মাইকিংসহ নানা প্রচারণা উপেক্ষা করে বেশি মুনাফার লোভে কাঁচা আমই কার্বাইড দিয়ে পাকিয়ে বাজারজাত করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। 
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশীদ জাহান বলেন, প্রতিটি মানুষ মওসুমি ফল খেতে চায়। কিন্তু অসৎ ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে ফলে কেমিক্যালের মিশ্রণ দেয়। সেই ফলে খেলে কিডনি লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ ছাড়াও পরিপক্ব আম আর কেমিক্যাল মিশ্রিত আমের স্বাদ ও গন্ধ এক নয়। কেমিক্যাল মিশ্রিত আম দৃশ্যত পাকলেও তাতে পরিপক্ব আমের উপাদান থাকে না। এজন্য মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের ঠেকাতে সংশ্লিষ্টদের শক্ত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
এ বিষয়ে সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা: মো: ছায়েদুল হক বলেন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানি বা জলীয় বাষ্পের সঙ্গে মিশে ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড ও এসিটাইলিন গ্যাস সৃষ্টি করে। এই এসিটাইলিন গ্যাস ইথিলিনের মতো কাজ করে। ফলে সহজেই আমসহ যেকোনো কাঁচা ফল পেকে যায়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড দামে খুব সস্তা হওয়ায় দেশের ফল ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফার লোভে সহজলভ্য ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে ফল পাকিয়ে থাকে। ফল পরিণত হওয়ার আগেই ফল পাকানোর কাজটি সহজেই সম্পন্ন হয়ে যায় কৃত্রিমভাবে।
এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, সাধারণত পানিতে ক্যালসিয়াম কার্বাইড মিশিয়ে সেই পানিতে ফল ভেজানো হয়। ক্যালসিয়াম কার্বাইড পানির সঙ্গে মিশে এসিটিলিন নিঃসৃত করে ফল পাকিয়ে দিচ্ছে। একই সঙ্গে ক্যালসিয়াম কার্বাইড ফলের ত্বক ভেদ করে ফলের ভেতরে শাসে ঢুকে যায়। এই ক্যালসিয়াম কার্বাইডে মারাত্মক বিষ হিসেবে মিশ্রিত থাকে আর্সেনিক ও ফসফরাস। এই আরসেনিক ও ফসফরাসও ফলের ভেতর ঢুকে যায়। ফল পাকার পরও ভেতরে এই আর্সেনিক ও ফসফরাস থেকে যায়। এভাবে কার্বাইড দিয়ে পাকানো ফল খেলে শরীরের ভেতর বিষক্রিয়া চলতে থাকে। তাৎণিকভাবে হয়তো কোনো প্রতিক্রিয়া নাও দেখা দিতে পারে, অথবা অনেক সময় ত্বকে এলার্জি (রেশ) দেখা দিতে পাড়ে। তবে দীর্ঘমেয়াদে কিডনি অথবা লিভারের সমস্যা ছাড়াও সেগুলো বিকল হয়ে যেতে পারে। সবচেয়ে ভয়াবহ হলো ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া। এই সমস্যাগুলো হয়তো দেখা দেবে ১৫-২০ বছর বা তারও পর।
আশঙ্কা হচ্ছে, বর্তমানে যেভাবে নৈতিকতাবিহীনভাবে বিষ মেশানোর কাজটি জনসমে বাধাহীনভাবে চলছে এবং সবাই বিশেষ করে শিশুরা যেভাবে ফলের সঙ্গে বিষ খাচ্ছে, তাতে কয়েক দশক পরে প্রায় প্রতি পরিবারে না হলেও সবার আত্মীয়স্বজন এক বা একাধিক পাওয়া যাবে, যারা কিডনি নষ্ট বা লিভারের সমস্যা অথবা দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে।

Page 43 of 58