x 
Empty Product

আর দিন ২০ বাদে এলেই আম খেতে পারতেন৷' হাসতে হাসতে বললেন মালদহ বাজার সমিতির সভাপতি কমল সরকার৷ মালদহের আম চেখে দেখার সুযোগটা হল না৷ কিন্তু বাঙালির অতিপ্রিয় এই অমৃতসম ফলটি নিয়ে যা শুনলাম, তাতে আম খেতে গিয়ে একটু হলেও ভাবতে হতেই পারে৷ সৌজন্যে একটি মারাত্মক রাসায়নিক৷

বাজার সভাপতি সাফ জানালেন, এ বছর আমের ফলন ভালো হয়নি৷ গতবারের চেয়ে ৫০ শতাংশ কম৷ তাই আম বাগানের মালিকরা আম তাড়াতাড়ি পাকাতে ও অধিক লাভ করতে, দেদার সালফার ব্যবহার করছেন৷ কমল সরকারের কথায় সালফারে কী হয়? বাজার সমিতির সভাপতির কথায়, 'দেখুন, সালফার শরীরের জন্য ক্ষতিকারক৷ সালফারে পাকানো আম ২ থেকে ৩ দিনের বেশি ভালো থাকে না৷ নরম হয়ে যায়৷ রাজ্য তো বটেই, অন্যান্য জায়গাতেও ওই আমই রফতানি করা হবে৷ এতে চাষিদের লাভ নেই৷ মালদহে সবচেয়ে সুস্বাদু ও বিখ্যাত হল হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম৷ এই আম ভারতের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রফতানি হয় বিহারে৷ মালদহে আমের গুণগত মানে এগিয়ে কোতুয়ালি৷ বাজারের ব্যবসায়ীদের কথায়, 'প্রশাসন একটু নজর দিক৷ নেতারা ভোট চাইতে আসেন৷ কিন্তু মালদহের এই বিখ্যাত ফলটির ব্যবসা নিয়ে কেউ কিছু জিগ্গেস করেন না৷ বলেও লাভ হয় না৷'

সু: https://bengali.news18.com

মীর মোস্তফা আলী: ঋতুরাজ বসস্তের সাথে সাথে উপকুলীয় জেলা সাতক্ষীরায় আমের মুকুলেই জানান দিচ্ছে মধুমাসের আগমনী বার্তা। সোনালি-হলুদের মিশ্রণে মৌ মৌ গন্ধে মুকুলের পাগল করা ঘ্রাণ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। যে গন্ধ মানুষের মন ও প্রাণকে বিমোহিত করে। শহর থেকে গ্রাম-গঞ্জে সর্বত্র আম গাছগুলো তার মুকুল নিয়ে হলদে রঙ ধারণ করে সেঁজেছে এক অপরূপ সাঁজে। যে কারণে সুবাসিত হয়ে উঠেছে পুরো জেলা। বর্তমানে আমের নাম বলতেই আসে সাতক্ষীরার নাম। মাটি, আবহাওয়া ও পরিবেশগত কারণে সাতক্ষীরার উৎপাদিত আম অনেক সুস্বাদু হওয়ায় এবং অন্যসব জেলার আগে এ জেলার আম পাকায় এর কদর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের বাজারেও বেড়েছে চাহিদা। সাতক্ষীরায় বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে তাকে তার মধ্যে হিমসাগর, ন্যাংড়া, গেবিন্দভোগ, আ¤্রপলি, মল্লিকা, সিদুর রাঙ্গা, ফজলি, কাচামিঠা, বোম্বায়, লতাআম বেশি চাষ করা হয়।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার মানুষ ধানের জমি ও বরেন্দ্র এলাকায় জমি কিনে বানাচ্ছেন আমবাগান এবং গড়ে উঠেছে হাজার হাজার আম বাগান। ফলে দিনে দিনে এ অঞ্চলে আম চাষে নীরব বিপ্লব ঘটছে। শ্রমিক দিয়ে সারা বছর পরিচর্যা করছেন বাগানের। এতে বহু বেকার লোকের কর্মসংস্থান ঘটেছে। হিমসাগর আর ন্যাংরা আমের রাজধানী সাতক্ষীরার মানুষ বহুকাল ধরেই আম চাষে জড়িত। দেশের জন্য আম একটি মৌসুমি ফল হলেও সাতক্ষীরা জেলা এটি প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে পরিণত হয়েছে।
এ খাতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা হয়। গাছের পরিচর্যা থেকে আম কেনাবেচা পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়ে থাকে সাতক্ষীরা অঞ্চলে। এদিকে গাছে গাছে মুকুলের সমারোহে আমবাগান হাতবদল হতে শুরু করেছে। আমের মুকুল বেশি হওয়ায় এবার বেশি দামে বাগান বিক্রি হচ্ছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের আমের ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে সাতক্ষীরার বিভিন্ন উপজেলায় বাগান কিনতে শুরু করেছে।
সাতক্ষীরার আম বিদেশে চাহিদা বাড়াই গতবারের চেয়ে এবার ব্যবসায়ীরা বেশি আসছেন। সাতক্ষীরার আম ব্যবসায়ীরা জানান, মুকুলের ওপর ভিত্তি করেই বাগান কেনাবেচা হয়ে থাকে। এজন্য আমগাছ পরিচর্যার সাথে সাথে মুকুল রক্ষায় বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহারে ব্যস্ত সময় পার করছেন আমচাষীরা। এবার আমের মুকুল বেশি হওয়ায় বাগানের দামও বেশি।
এবছর সদর উপজেলা কৃষিবিভাগের মাধ্যমে ১০০ হেক্টর জমিতে ৬০টি আম বাগানের ২০জন মালিককের ২১ হাজার আমগাছকে অধিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের বিষমুক্ত হিমসাগর, ন্যাংড়া ও মল্লিকা আম প্রস্তুত করা হচ্ছে যুক্তরাজ্যের জন্য।
এছাড়া ইউএসএআইভি জেলার ৫০০ বেশি আম চাষিকে বিদেশে বাজার যাত করনের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। গতবছর এ জেলা থেকে ২৩ টন আম যুক্তরাজ্যের বাজারে রপ্তানি হলেও এবার ১৫০টন আম রপ্তানি করা হবে বলে মনে করেন সদর উপজেলা কৃষিবিভাগ। এজন্য হটএক্্র ফাউন্ডেশন প্রতিনিধি দলেরর সাথে সাতক্ষীরার আম বাগান পরিদর্শন করেন এফএও ফুড সেল প্রগ্রামঅফিসার বিদেশি নগরিক ম্যাক ডিলন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এবার আমের আবাদ করা হয়েছে ৩৮২৫ হেক্টর জমিতে। যা গতবারের তুলনায় ২০৪ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ করা হয়েছে। আর আম উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার মেট্রিক টন। যা গতবারের চেয়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন বেশি।
মৌসুমের শুরুতেই সরেজমিনে বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, আম গাছে শোভা পাচ্ছে কেবলই মুকুল। এ যেন হলুদ আর সবুজের মহামিলন। মুকুলে মুকুলে ছেয়ে আছে গাছের প্রতিটি ডালপালা। চারদিকে ছড়াচ্ছে সেই মুকুলের সুবাসিত পাগল করা ঘ্রাণ। তবে বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন এই জেলার আম চাষিরা। এই আমচাষে সাধারনত ব্যাক্তি মালিকানার পাশাপাশি লিজ নিয়ে আমচাষ করে জীবীকা নির্বাহ করেন অনেকে।
আম চাষিদের দাবি সরকার যদি আম পাড়া বা সংরক্ষণের উপর বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করে তাহলে আমাদের আমে দাগ হবে না। ডিমের খাচিরমত বিশেষ কায়দায় আম বাজার যাত করা গেলে ব্যবসায়িরা লাভবান হবে বিদেশেও এর চাহিদা আরো বাড়বে

ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই আম্র-মুকুলের গন্ধে সুশোভিত হয়ে উঠেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহীর বাগানগুলো। মুকুল ভালো আসায় এবারও ভালো ফলনের আশায় বুক বাঁধছেন চাষিরা। তবে অগ্রিম বাগান কেনাবেচা আগের তুলনায় নিতান্তই কম। আমচাষি ও বিপণন-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর স্থানীয় প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময়ের আগে আমপাড়ার নিষেধাজ্ঞা ও ফরমালিন আতঙ্কে এবার অগ্রিম বাগান বেচাকেনা কম হচ্ছে। রাজশাহীতে কোনো বাগানই এ পর্যন্ত বিক্রি হয়নি। অথচ প্রতিবছর এ সময় আমগাছের পাতা, মুকুল ও গুটি দেখে একেকটি আমবাগান তিন থেকে চারবার বেচাকেনা হতো। চাষিরা আশা করছেন, প্রশাসন গত বছরের সিদ্ধান্ত এবার পরিবর্তন করলে হাসি ফুটবে তাদের মুখে। পাশাপাশি পোষানো যাবে গতবারের লোকসান।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্র জানায়, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩২ হাজার ২৪০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। এতে ২৫ লাখেরও অধিক আমগাছ রয়েছে। গত দুই বছরে দুই হাজারের মতো নতুন বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এ বছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এখনো নির্ধারিত হয়নি। গুটি আসার পর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হবে। গতবছর আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার টন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাজদার রহমান জানান, এ বছর অফ-ইয়ার হওয়া সত্ত্বেও আমের বাগানগুলো ছেয়ে গেছে মুকুলে-মুকুলে। পাঁচ উপজেলার ২৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে ১৮ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭০টি গাছ রয়েছে। এবার ২ লাখ ৫০ হাজার টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। এখন প্রতিটি বাগানে মুকুল যাতে ছত্রাকজাতীয় রোগে আক্রান্ত না হয়, সে জন্য আমচাষিরা কীটনাশক স্প্রে করে পরিচর্যায় ব্যস্ত।

দেশের সিংহভাগ আম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের হরতাল, ২০১৫ সালে টানা অবরোধ-হরতালের কারণে ব্যবসায়ীরা লোকসানের মুখে পড়েন। বেশি আম উৎপাদনকারী এলাকা শিবগঞ্জ ও কানসাটে ট্রাকে পেট্রলবোমা ছুড়ে একাধিক চালক ও হেলপারসহ ট্রাক পোড়ানোর ঘটনায় জেলার বাইরের আম বেপারিরা কম আসেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

গত বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘায় ১৫ মে থেকে ৫ জুন পর্যন্ত আমপাড়া ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছিল স্থানীয় প্রশাসন। ক্ষতিকারক কেমিক্যালের সাহায্যে কাঁচা আম পাকিয়ে তাতে ফরমালিন মিশিয়ে বাজারজাত করার অভিযোগে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। নিষেধাজ্ঞার এ ২২ দিন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ফলে কোনো বাগান মালিক কিংবা ব্যবসায়ী বাগান থেকে যথাসময়ে আম নামাতে পারেনি। এতে আগাম জাতের অনেক বাগানের আমই নষ্ট হয়েছে বলে অভিযোগ বাগান মালিকদের।

সম্প্রতি বাঘা-চারঘাটের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম রাজশাহীর আম উৎপাদনকারী, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেই সভায় গত বছর বাঘা-চারঘাটে আমে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশানোর যে অভিযোগে ২২ দিন আমপাড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, সে অভিযোগ পুরোপুরি সঠিক নয় বলে ব্যবসায়ীরা জানান। প্রতিমন্ত্রীও বলেছেন, রাজশাহীবাসী আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন হয়েছেন।

আম ব্যবসায়ীদের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতি আম মৌসুমে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় এবং ছয় মাসে দুই লাখ লোকের কর্মসংস্থান হয়। আর বাগান মালিকরা তাদের বিক্রীত আমবাগানের টাকা দিয়ে সংসারসহ বাড়তি খরচ করে থাকেন। জেলার সর্ববৃহৎ আমের বাজার কানসাট আম ব্যবসায়ী সমিতি, ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশন, চেম্বার অব কমার্স, ম্যাংগো প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন চলতি বছরে আম ভাঙার সময় বেঁধে দেওয়া, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা ও প্রশাসনের অহেতুক হয়রানি বন্ধে বিভিন্ন ফোরামে জোরালো দাবি তুলছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানান, প্রাকৃতিকভাবে আম পেকে থাকে। কিন্তু গতবার জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোক্ত আম পাড়ার সময় বেঁধে দেওয়ায় অনেক চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ বছর এ সিদ্ধান্তটি বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন তিনি।

নবাগত জেলা প্রশাসক মো. জাহিদুল ইসলাম জনান, জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আম। এ আম নিয়ে অনেকেই গত বছর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। তাই এবার জেলা আম পরীবিক্ষণ কমিটির সামনের সভায় ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

ভোলাহাট আম ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক চুটু বলেন, এবারও আম ভাঙার সময় বেঁধে দেওয়া হলে ব্যবসায়ী ও আমচাষিসহ সবাইকে নিয়ে গণঅন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বলেন, এ জেলার সুমিষ্ট আম নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। চলতি বছর যাতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য তাদের পক্ষ থেকে কৃষিমন্ত্রী, এফবিসিসিআইসহ বিভিন্ন ফোরামে যোগাযোগ শুরু করেছেন।

ম্যাংগো প্রডিউসার অ্যাসোসিয়শনের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বলেন, গত বছরের আম মৌসুমে জেলা প্রশাসনের একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালালেও কোথাও ফরমালিন বা কার্বাইড মিশ্রিত আম জব্দ করতে পারেনি।

কানসাট আম আড়তদার ব্যবসায়ী সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী এমদাদুল হক জানান, প্রতিবছর এ সময় বাগান দুই থেকে তিনবার হাত বদল হয়ে থাকলেও এখনো একবারও বিক্রি না হওয়ায় বাগান মালিকরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

নবাবগঞ্জ আম ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. সেরাজুল ইসলাম জানান, এ জেলার অহঙ্কার হচ্ছে আম। এখানকার চাষিরা বরাবরই আমে ফরমালিন কিংবা কার্বাইড মেশান না। তারা সৎভাবে যুগযুগ ধরে আম ব্যবসা করে আসছে। অথচ একটি মহলের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে গত বছর প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয় আমচাষিদের। একই কারণে এবারও অধিকাংশ আমবাগান বেচাকেনা হয়নি।

রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিম উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে।

রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠ রায়পাড়া এলাকার আমচাষি কামাল হোসেন জানান, এ বছরের আবহাওয়া আমের জন্য অনুকূলে রয়েছে। গত বছরের চেয়ে টানা শীত ও কুয়াশার তীব্রতা এ বছর অনেক কম।

চারঘাট উপজেলার আমচাষি ও ব্যবসায়ী মো. শওকত আলী বুলবুল জানান, আমে ফরমালিনসহ অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থ মেশানোর যে প্রচার চালিয়ে আমপাড়া নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তা সঠিক ছিল না। এ ধরনের প্রচারণার ফলে এ বছর রাজশাহীর কোনো আমবাগানই এ পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়নি। এবার যাতে এমন প্রচারণা কেউ চালিয়ে রাজশাহীর আমশিল্পকে ধ্বংস করতে না পারে, সেজন্য প্রশাসনসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেন এ ব্যবসায়ী।

রাজশাহী ফল গবেষণাকেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. আলিম উদ্দিন জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার গাছে খুব একটা কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন নেই। তবে ছত্রাকজনিত রোগেও আমের মুকুল-ফুল-গুটি আক্রান্ত হতে পারে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, গত বছর অসাধু আম ব্যবসায়ীদের তৎপরতা বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবছর মাত্র আমের মুকুল এসেছে। তারপরও যাতে আমে কেউ ফরমালিন মিশিয়ে ব্যবসা করতে না পারে, সে ব্যাপারে প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে। সৎ ব্যবসায়ীদের বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।

Rajshahi Mango আমাদের ছোট বেলায় মে জুন মাসের দিকে ১ মাসের একটা ছুটি পাওয়া যেত। সেই ছুটি আমাদের কাছে আম কাঠালের ছুটি নামে পরিচিত ছিল। নানা বাড়ী গিয়ে আম কাঠাল খাওয়া ছাড়া আরো যে কাজটি আমরা তখন করতাম সেটা হল নিজের এলাকায় গাছ গাছালির নিয়মিত খোজ খবর রাখা। কোন বাড়ীতে কয়টা আম গাছ আছে, কয়টাতে এবার আম এসেছে, কোন গাছের আম কেমন এসব বিষয়ে আমরা তখন বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতাম। সারাদিন যযেহেতু স্কুল আর পড়াশুনার ঝামেলা নাই তাই দল বেধে হাতে চাকু নিয়ে পুরা পাড়া টহল দিয়ে বেড়াতাম। আমাদের অত্যাচারে খুব কম আমই পেকে উঠতে পারত। মগডালের ২/১টা আম পাকতে পারলেও সেগুলো চুরি করার ফন্দি বের করতে দেরী হত না।

তারপর ক্যাডেট কলেজ, আম কাঠালের ছুটিটা এবার সামার ভ্যাকেশন নামে পরিচিত হতে থাকল। চাক্কু হাতে পাড়া বেড়ানো ছেলাটা ছুটিতে এসে খুব একটা আর বাইরে বের হয় না। নিজের এলাকায় অপারেশন আম কাঠাল বন্ধ। কিন্তু ক্যাডেট কলেজের আম গাছতো আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। কাজেই এবার অপারেশন আর নিজের এলাকায় না, অপারেশন চলে ক্যাডেট কলেজে। ডাব, কাঠালের পাশাপাশি চলে আম চুরি। মনে আছে এইচ এস সি পরীক্ষার আগের দিন আমাদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সিলেট শহরে শাহ জালাল (রঃ) এর মাজার জিয়ারত করার জন্য। এর ফলে সবার পরীক্ষা ভাল হবে, কলেজ কর্তপক্ষ হয়তো এমনটই ভেবেছিল। যাই হোক এই মাজার জিয়ারতের ফলে আমার একটা লাভ হয়েছিল, সেটা হল শহর থেকে নিজের পছন্দমত একটা চাক্কু কিনে এনেছিলাম। আম, কাঠাল আর ডাব খাওয়া সংক্রান্ত সকল সমস্যা এতে অনেকখানিই সমাধান হয়েছিল।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আম চুরি করার প্রয়োজন পড়ে নাই। ইচ্ছে হলেই হল, কলাভবন, সেন্ট্রাল মসজিদ এলাকা থেকে দল বেধে আম ছিড়ে খেতাম।

সমস্যা হল চাকরী করতে গিয়ে। এখানে আম কাঠালের ছুটি নাই, তার থেকেও বড় কথা, ঢাকা শহরে এমন কোন অফিসও বোধ হয় নাই, যেখানে আম গাছ আছে। অগত্যা কি আর করা, আমি ভুলতেই বসেছিলাম যে আমি একদিন সশশ্র আম চোর ছিলাম। অতঃপর একদিন আমি সুযোগ পাইলাম। বছর খানেক আগে একটা অফিসে জয়েন করলাম। চারিদিকে গাছ গাছালিতে ভরা। কৃষ্ণচূড়া, রাধা চূড়া, কলা, বেল, আম, কাঠাল, ডাব সহ দেশী প্রায় সব গাছই এখানে আছে। মাঝে মাঝে আবার এখানে কোকিল ডাকে। এত গাছের ভীরে আমার অফিস বিল্ডিংটা প্রায় দেখাই যায় না। এইবার সেই মার্চ মাস থেকেই তক্কে তক্কে ছিলাম, আম গাছ গুলি মুকুলের ভারে নুয়ে পড়েছিল। তারপর কেটে গেল ২/৩ মাস। অফিস কম্পাউন্ডের ভিতরে আম গাছগুলোর দিকে তাকালেই পুরানো নেশাটা বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠত। খালি মনে হত একটা বার যদি গাছে উঠতে পারতাম! অবশেষে কাল এল সেই দিন। গাছে চড়ি নাই, কিন্তু গাছের ডালে ডালে ঝুলে থাক পাকা আমগুলা নিজের হাতে ছিড়লাম। আহা, কি যে শান্তি! কত্তদিন পর নিজের হাতে আম পেড়ে খাইলাম।

  •  Start 
  •  Prev 
  •  1 
  •  2 
  •  Next 
  •  End