http://www.prothom-alo.com/economy/article/561355
ফ্রুট ব্যাগিং (বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে আবৃত করা আম) পদ্ধতিতে উৎপাদিত রাসায়নিক বালাইনাশকমুক্ত নিরাপদ আমের রপ্তানি শুরু হচ্ছে যুক্তরাজ্যে। আজ বুধবার দুই হাজার কেজি ল্যাংড়া ও ফজলি আম রপ্তানির জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবার বিমানযোগে আমের এ চালান যাবে যুক্তরাজ্যে। এর মধ্য দিয়ে আরও আম রপ্তানির সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো। এগুলো যাচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় খুচরা পণ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমার্টের মাধ্যমে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (আম গবেষণা কেন্দ্র) ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শরফ উদ্দীন প্রথম আলোকে জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তেমনভাবে অতিরিক্ত রাসায়নিকের ব্যবহারমুক্ত আম উৎপাদন হতো না। এ ছাড়া প্রচার ছিল যে, এখানকার আমে অতিরিক্ত রাসায়নিক বালাইনাশক স্প্রে করা হয়ে থাকে। তাই রপ্তানিযোগ্য নিরাপদ আম উৎপাদনের লক্ষ্যে নিয়ে গত বছর চীন থেকে আমদানি করা ফ্রুট ব্যাগ আমে আবৃত করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এতে সুফল পাওয়ার পর এ বছর আমচাষিদের ওই ফ্রুট ব্যাগ ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়। চলতি বছর ১ লাখ ৫০ হাজার আমে ব্যাগিং করা হয়। এতে করে ১০০ মেট্রিক টন নিরাপদ আমের উৎপাদন নিশ্চিত হয়।
শরফ উদ্দীন আরও জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়াও এ মৌসুমে রাজশাহী, নাটোর, পাবনা, গোপালগঞ্জ, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানেও বাণিজ্যিকভাবে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম উৎপাদিত হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে রপ্তানিকারক ও ফল উৎপাদনে সহায়তাকারী সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁরাই খোঁজখবর নিয়ে প্রথম পর্যায়ে দুই হাজার কেজি আম রপ্তানির উদ্যোগ নেন।
রপ্তানিকারক মেসার্স দ্বীপ ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী পরিতোষ চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতির আম নিরাপদ জেনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আম রপ্তানির উদ্যোগ নিয়েছি। এ ব্যাপারে হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের সহায়তা পাওয়া গেছে। এভাবে উৎপাদিত আম রপ্তানিতে দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তিতে আম উৎপাদনকারী চাঁপাইনবাবগঞ্জের আমচাষি মো. মিলন, রবিউল ইসলাম, মো. হাসান ও পিন্টু মাস্টার রপ্তানিকারককে দুই হাজার কেজি আম সরবরাহ করেন। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে ল্যাংড়া প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফজলি আম এখনো বাজারের সেভাবে নামেনি। আগাম জাতের ফজলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে। চাষিরা ওয়ালমার্টের কাছে ল্যাংড়া ৭০ টাকা কেজি ও ফজলি ৫৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। চাষি রবিউল ও হাসান জানান, এ বছর আমের প্রত্যাশিত দর না পেয়ে তাঁরা হতাশ ছিলেন। তবে ফ্রুট ব্যাগিং করে উৎপাদিত আমে কিছুটা হলেও লাভবান হয়েছেন।
ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি কি?
ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতি সম্পর্কে শরফ উদ্দীন জানান, ফ্রুট ব্যাগিং হচ্ছে গাছে থাকা অবস্থায় বিশেষ ধরনের কাগজের ব্যাগ দিয়ে ফলকে আবৃত করে রাখা হয়। ৪০ থেকে ৫৫ দিন বয়সের আমে ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময়। ব্যাগিং করার আগে আমে কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করে শুকিয়ে নিতে হবে। তিনি জানান, রঙিন আমের জন্য সাদা ব্যাগ ও সবুজ আমের জন্য দুই আস্তরের বাদামি ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। ফল সংগ্রহের আগ পর্যন্ত লাগানো থাকে ব্যাগ। এসব ব্যাগ বৃষ্টি ও ঝড়ে ছিঁড়ে যায় না। তিনি আরও জানান, এই ব্যাগ ব্যবহারে আম বিভিন্ন ধরনের আঘাত, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক, রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা পায়।
শরফ উদ্দীন বলেন, আম সংগ্রহ করার পর থেকে পরের মৌসুমে আম সংগ্রহ করা পর্যন্ত অসচেতন আমচাষিরা ১৫ থেকে ৬২ বার পর্যন্ত বালাইনাশকের ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, তিন থেকে পাঁচবার স্প্রে করাই যথেষ্ট। অর্থাৎ গাছে মুকুল আসার ১৫ থেকে ২০ দিন আগে প্রথমবার। দ্বিতীয়বার মুকুল ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হলে এবং তৃতীয়বার আম যখন মটর দানার আকার ধারণ করে। পোকামাকড়ের আক্রমণ রোধে বিশেষ প্রয়োজন আরও দুবার হতে পারে।
শরফ উদ্দীন জানান, আমে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ বালাইনাশকের ব্যবহার কমানো সম্ভব। দেশে প্রচুর পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে রপ্তানি উপযোগী আম পাওয়া যায় না। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে রপ্তানি উপযোগী আম পাওয়া সম্ভব। এ ছাড়া এ প্রযুক্তি ব্যবহার করা আমের সংরক্ষণকাল বেশি এবং দেশি বাজারেও দাম পাবে বেশি।
http://www.prothom-alo.com/economy/article/561355
Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.