আম সংগহোত্তর পরিবহণ
- Published Date
- Written by Super Admin
- Hits: 10857
আমাদের দেশে বড় শহরে আমের প্রধান বাজার হিসেবে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এসকল এলাকায় আমভোক্তা
আমাদের দেশে বড় শহরে আমের প্রধান বাজার হিসেবে পরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর এসকল এলাকায় আমভোক্তা
বেশি অথচ এই এলাকাসমুহে ভাল জাতের আম উৎপন্ন হয় না। উন্নত জাতের আম উৎপাদন এলাকাগুলো থেকে আসল ভোক্তাদের কাছে আম পৌছানোর জন্য উন্নতমানের পরিবহণ ব্যবস্থার গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। বর্তমান বাংলাদেশে সড়কপথের প্রভুত উন্নতি হয়েছে। পূর্বে সড়কপথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খুব খারাপ ছিল। পূর্বে যখন সড়কপথে যোগাযোগ প্রায় অসম্ভব ছিল, সে আমলে এ দেশে নদীপথে বড় বড় নৌকা ও কার্গোতে আম পরিবহণ করা হতো। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, বরিশাল, ময়মনসিংহ ইত্যাদি এলাকা থেকে ব্যবসায়ীগণ বড় বড় নৌকা বা কার্গো নিয়ে সোজা পদ্মা বেয়ে বাঘা, চারঘাট, রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মালদহ, মুর্শিদাবাদ ইত্যাদি উন্নতমানের আম উৎপাদনকারী অঞ্চলে আসতেন। এসব এলাকার আমবাগান থেকে আম সংগ্রহ করে নৌপথে ভোক্তা এলাকায় ফিরে যেতেন। এ ব্যাপারে পুরাতন বইপুস্তক এবং সরকারি নদীতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়।
নব্বইয়ের দশক থেকে বাংলাদেশে সড়কপথে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। বাংলাদেশের হাজার হাজার ছোট বড় নদী-নালা, খাল-বিল ইত্যাদির উপর দিয়ে সেতু, কালভার্ট এবং বড় বড় হাইওয়ে তৈরি হয়েছে। যে কারণে বাংলাদেশের যে কোনো অঞ্চল থেকে ট্রাকযোগে মালামাল রাজধানী ঢাকা কিম্বা বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে সহজেই পৌছে যাচ্ছে। বর্তমান বাংলাদেশে বেশিরভাগ অঞ্চলের নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। একারণে আগের মতো নৌপথ ব্যবহৃত হচ্ছে না। পরিবহণ ক্ষেত্রে রেলপথের উপর ব্যবসায়ীগণের ভরসা খুব কম। রেলের সেবার মান আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এসব কারণে রেলপথে আমের পরিবহণ হয় না বললেই চলে। সড়কপথের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ের মধ্যেই আম নির্দিষ্ট স্থানসমূহে পৌছানো যায। একবার পন্য বোঝাই এবং একবার নামিয়ে ফেললেই হলো। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাঁশের ঝুড়িতে আম প্যাকিং করে খোলা ট্রাকে পরিবহণ করা হয়ে থাকে। এতে আমের বেশ ক্ষতি হয়। বাঁশের ঝুড়ি দাগাদাদি করে ট্রাকে সাজানো হয়। এতে নিচের ঝুড়ির আম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। খোলা ট্রাকে রৌদ্র এবং বৃষ্টিতে আমের ক্ষতি হয়। ট্রাকের মালামাল সকল সময়েই আচ্ছাদিত অবস্থায় রেখে পরিবহণ করা উচিত। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ট্রাকে পূর্ণ লোড দেবার পরেও কাগজের তৈরি শক্ত কার্টুন প্রায় অক্ষত থেকে যায়। কাঠের বা* বা প্লাস্টিকের ক্রেইটে আম পরিবহণে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে এ দুটো তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। রাত্রিকালে কিম্বা সকালবেলায় আম পরিবহণ করা ভাল। কারণ , সে সময় আবহাওয়া তুলনামূলকভাবে ঠাণ্ডা থাকে।
আমাদের দেশে উৎপাদিত আমের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ সংগহোত্তর পর্যায়ে নষ্ট হয়ে যায়। আমরা যদি শুধু সংগ্রহোত্তর পর্যায়ের ক্ষতি কমাতে পারি, তবে বর্তমান উৎপাদন ঠিক থাকলেও আমাদের মাথাপিছু আমের প্রাপ্যতা বেড়ে যাবে। আম চাষী, আম ব্যবসায়ী এবং ভোক্তা সকলকেই এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে।
Comments
- No comments found
Leave your comments