আমাদের দেশে অক্টোবর-মার্চ মাস পর্যটনের মৌসুম হিসেবে পরিচিত। তবে এর বাইরে সারা বছরই পর্যটকরা অঞ্চলভিত্তিক ভ্রমণ করেন। যেমন আমের সময় উত্তরবঙ্গে অনেকেই বেড়াতে আসেন। আমের ভরা মৌসুম শেষ হলেও বরেন্দ্র অঞ্চলে এখনও রয়েছে নানা প্রজাতির আম। হাতে ২ দিন সময় নিয়ে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন উত্তর বঙ্গের অন্যতম আম রাজ্য নওগাঁ জেলা থেকে। এখানকার আমের বাগান, আড়ত এবং আমকেন্দ্রিক মানুষের জীবনযাত্রা যে কোনো পর্যটককে আকৃষ্ট করবে। বছরের যে কোনো সময় এখানে এলে আপনি আমের বাগান দেখতে পাবেন। কিন্তু আমের মৌসুমে এলে পাবেন গাছ ভর্তি বাহারি সব আমের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ। বর্তমানে বাগানে দেখতে পাবেন আশ্বিনা, ফজলি, বারি-৭, বারি-৪ সহ লেট ভ্যারাইটি প্রজাতির বাহারি আম। দেশে প্রতিবছরই বাড়ছে আমের চাষ। কিন্তু দেশ থেকে আম পর্যাপ্ত রফতানি না হওয়ায় এবং সচেতনতার অভাবে রফতানিযোগ্য জাতের নতুন আম বাগান অনেক কম তৈরি হচ্ছে। অথচ আম রফতানিতে বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজন রফতানিযোগ্য আম উত্পাদন।
বরেন্দ্র অঞ্চলে রফতানিযোগ্য আমের চারা তৈরি, আমচাষিদের মাঝে চারা বিতরণ এবং বাগানে আম উত্পাদনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন অনেকেই। এর মধ্যে অন্যতম নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কোচকুড়লীয়া গ্রামের হাসান জামান। তিনি নিজ গ্রামে ১৯৮৯ সালে মাত্র ৪ বিঘা জমিতে শুরু করেন ‘সীমা ম্যাঙ্গো প্লান্ট সাপ্লাই সেন্টার’ নামক এক নার্সারি। বর্তমানে তার নার্সারিতে রয়েছে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির আমের প্রায় আড়াই লাখ চারার বিশাল সংগ্রহ। নার্সারির পাশাপাশি তিনি ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন উন্নত প্রজাতির বিভিন্ন আমের বাগান। এর মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করে রঙিন প্রজাতির রফতানিযোগ্য আমের বাগান। এসব আমের সঙ্গে পরিচিত হতে দেশের নানা অঞ্চল থেকে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। হাসান জামান বলেন, ‘রফতানিযোগ্য আমের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রঙিন হতে হয়। বিশ্ব বাজারে রঙিন আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’ হাসান জামান আমের দেশি প্রজাতিসহ আমেরিকা, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মায়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গো, হাইতি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১১০ প্রজাতির উন্নত আমের জাত সংগ্রহ করেছেন। তার নার্সারিতে রফতানিযোগ্য আমের মধ্যে বারি-৪, বারি-৭, বারি-২, রুবি, কারাবাউ, রাংগোয়াই, কেরালা, পাহুতান, র্যাট, পালমার, লকনা, নাকফজলিসহ রয়েছে ৩৫ প্রজাতির রঙিন আম। এছাড়া দেশি প্রজাতির ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, খিরসাপাত, ফজলি, আম্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগসহ বহুল প্রচলিত আমের প্রায় সব জাতই এখানে পাওয়া যাবে। ব্যক্তি উদ্যোগে আমের জাত সংগ্রহ, গ্রাফটিং পদ্ধতিতে চারা তৈরি, উন্নত জাতের আম চাষে সচেতনতা তৈরি এবং নিজস্ব বাগানে আম উত্পাদনে অবদান রাখায় পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষ সম্মাননা। হাসানের নার্সারি ইতিমধ্যেই আম গবেষক, শিক্ষক-ছাত্রদের মাঝে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। আম গবেষক এবং বাংলাদেশ আম গবেষণা ইনিস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম মর্তুজা হাসানের নার্সারি পরিদর্শন করেছেন। এ সম্পর্কে তিনি বলন, ‘বিশ্ব বাজারে রফতানিমুখী আমের বেশিরভাগই রঙিন। হাসানের নার্সারিতে রফতানিযোগ্য রঙিন আমের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের আম চাষিদের রফতানিযোগ্য আম চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এটি ভালো উদ্যোগ। ’
অন্যান্য দর্শনীয় স্থান
নওগাঁ কেবল আমের জন্য নয় বরং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য বিশ্বখ্যাত। নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ। নওগাঁ জেলায় একই দিনে একাধিক জায়গায় ভ্রমণ করা যায়। নওগাঁর নানা দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- পাথরনগরী জগদ্দল বিহার, আলতাদিঘি, ভীমের পান্টি, মহীসন্তোষ, ভীমসাগর, পাহাড়পুর, হলুদ বিহার, দুবলহাটি রাজবাড়ি, দিবরদিঘি, আগ্রাদ্বিগুণ বিহার, কুসুম্বা মসজিদ, মহাদেবপুর জমিদার বাড়ি, জবাই বিল, পতিসর রবীন্দ কাচারী বাড়ি ইত্যাদি।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি নওগাঁ ও সাপাহার যাওয়া যায়। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ঢাকার কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা থেকে এ পথের নানা প্রতিষ্ঠানের বাসগুলো ছাড়ে। ভাড়া ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা, লালমনি, নীল সাগর ও দ্রুতযান এক্সপ্রেসে চড়ে সান্তাহার স্টেশনে নেমে নওগাঁ আসা যায়। নওগাঁর বলুডাঙ্গা বাস স্টেশন থেকে দেড়-দুই ঘণ্টায় সাপাহার যাওয়া যায়। সাপাহার জিরো পয়েন্ট থেকে অটো রিকশায় হাসানের রঙিন আমের বাগানে যেতে পারবেন। ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা।