x 
Empty Product

চাঁপাই নবাবগঞ্জ জেলা

User Rating:  / 1
PoorBest 

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত একটি জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ। আম, মিষ্টান্ন এবং অন্যান্য ফসল যেমন- চাউল, আখ ইত্যাদির জন্য এই জেলা বিখ্যাত। আমের জেলা হিসেবে এটি সবার কাছে পরিচিত।

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত একটি জেলা চাঁপাই নবাবগঞ্জ। আম, মিষ্টান্ন এবং অন্যান্য ফসল যেমন- চাউল, আখ ইত্যাদির জন্য এই জেলা বিখ্যাত। আমের জেলা হিসেবে এটি সবার কাছে পরিচিত।

এলাকার বেশিরভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। এই জেলায় প্রবাহিত হয়েছে চারটি নদী - পদ্মা, পাগলা, মহানন্দা এবং পূনর্ভবা। শহরের পাশে মহানন্দা নদীর উপরে স্থাপিত হয়েছে ৩য় বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সেতু। চাঁপাই নবাবগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক স্থানও বটে। অতীতে এটি ততকালীন বাংলার রাজধানী “গৌড়”-এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোনামসজিদ এখানকার সর্বোৎকৃষ্ট ঐতিহাসিক নিদর্শন। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ শিক্ষিত। সবমিলিয়ে চাঁপাই নবাবগঞ্জ একটি সুন্দর জেলা। এজেলার বরেন্দ্র অঞ্চল এবং অন্যান্য যায়গার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অনন্য।

১৭৪৪.৩৩ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলাটির অবস্থান দেশের উত্তরাঞ্চলে। বাংলাদেশের মানচিত্রে দেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত। এ জেলার উত্তরে ভারতের মালদহ জেলা, দক্ষিণে পদ্মা নদী ও ভারতের মুর্শিদাবাদ জেলা, পশ্চিমে ভারতের মালদহ জেলা এবং পদ্মা নদী, পূর্বদিকে রাজশাহী ও নওগাঁ জেলাদ্বয়। ভৌগলিক মানচিত্রে এটি ২৪.৬২০ থেকে ২৫.০৬০ উত্তর দ্রাঘিমা এবং ৮৮.০৭০ থেকে ৮৮.৩০০ পূর্ব অক্ষাংশে অবস্থিত।

এখানকার মানুষের শিক্ষার হার পুরুষ ৫৫%, নারী ৫৩%, গড় ৫৪%। মুসলমান ধর্মাবলম্বী ৯৪%, হিন্দু ৫%, খৃস্টান ০.০৫% ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বাস করে। এখানে কৃষক ৭৫%, ব্যবসায়ী ৯%, চাকুরীজীবি ৬%, অকৃষি শ্রমিক ৭%, পরিবহন ৩%। এখানে ভূমিহীন ৩৫%, ক্ষুদ্র চাষী ৪৫%, মধ্যম চাষী ২৭%, বড় চাষী ৪%। মাথাপিছু আবাদী জমির পরিমান ০.১৮ একর। এখানে রয়েছে ০.০৫% সাঁওতাল নামক আদিবাসীর বসবাস।

এই‌ অঞ্চলে প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম সড়কপথ। অন্যান্য পথে চলাচল খুব কম। রেলওয়ে ব্যবস্খা নিম্নমানের। আর নদনদী অগভীর হওয়ায় শুধুমাত্র বর্ষাকালে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। রেলপথ ৫১.২০ কি.মি, পাকা রাস্তা ২৮৬ কি.মি, কাঁচা রাস্তা ২০০৬.৮১ কি.মি, নদীপথ ১২৮ কি.মি।

অন্য জেলা ও অন্য উপজেলার সাথে যোগাযোগে বাস, শহরের মধ্যে রিক্সা, ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা, কৃষি পরিবহনে গরুরগাড়ী ও ট্রলি (স্যালোমেশিন চালিত) এবং জেলা সদরের বাইরে বিবিধ প্রয়োজনে ভুটভুটি (স্যালোমেশিন চালিত) যানবাহন প্রধানত ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

এখানকার আবহাওয়া চরম ভাবাপন্ন। শীতকালে প্রচণ্ড শীত (৫০ সেলসিয়াস) এবং গরমকালে প্রচণ্ড গরম (৪৫০ সেলসিয়াস) অনুভূত হয়।

এজেলা বরেন্দ্র, দিয়াড় ও চরাঞ্চল নিয়ে গঠিত। এখানে পদ্মা ও মহানন্দা প্রধান এবং পাগলা, মরাগঙ্গা ও পুনর্ভবা নদী এই জেলায় প্রবাহিত হয়েছে। বিল ভাতিয়া, বিল চোড়ল, বিল হোগলা, বিল সিংড়া, শুক্রবাড়ি দামস, মরিচা দাঁড়া, বিল পুঁঠিমারি, কুমিরাদহ ইত্যাদি বিল রয়েছে এই জেলায়।

এখানে চাষযোগ্য জমি রয়েছে ৩,২৬,৮০০ একর এর মধ্যে এক ফসলি ১,৪৯,০০০ একর, দো-ফসলি ১,৪৬,৯১০, তিন ফসলি ৩১,৮৫০; পতিত জমি ৩১,৮৫০ একর। এখানে প্রচুর আমগাছ রয়েছে। ৬,৬৮৯ হেক্টর জমিতে আম উৎপাদন হয়ে থাকে।

প্রধান প্রধান কৃষি ফসলের মধ্যে আছে :
 ধান, পাট, ইক্ষু গম, পান, তৈলবীজ ও ডাল। এখানে ফলের মধ্যে রয়েছে আম, কাঁঠাল, লিচু, জাম, তাল, ডাব-নারিকেল, তরমুজ, বরই।


মৎস্য খামার ২, গরুর খামার ১৭, ভেড়ার খামার ২৭, ছাগলের খামার ৫২, হাঁসের খামার ২৪, মুরগীর খামার ১৫।

এখানে শিল্প কারখানার মধ্যে রয়েছে :
 ডিআর সিল্ক ফ্যাক্টরী, একরা টেক্সটাইল মিলস্‌, এগ্রো মহানন্দা কোল্ড স্টোরেজ, শিল্পনগরীতে রয়েছে এলুমিনিয়াম ফ্যাক্টরী।

কুটির শিল্প :
 জেলায় ৬৫০০টি কুটির শিল্প চালু রয়েছে। এসব শিল্পের মধ্যে রেশম, তামা-কাঁসা-পিতল, নকশী কাঁথা, নকশী শিকা, মৃৎ শিল্প, সখের পাখা, বাঁশ ও বেতের কাজ, লাক্ষা শিল্প অন্যতম। এ জেলা রেশম সুতা কাটা ও রেশমবস্ত্র তৈরীর জন্য কয়েক শতাব্দী যাবত বিখ্যাত।


মেলা :
জেলার বিভিন্ন স্থানে ২৫টির মত মেলা বসে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান :
 ৩টি সরকারী মহাবিদ্যালয় ও ৪০টি বেসরকারি মহাবিদ্যালয়, কারিগরী প্রতিষ্ঠান ২টি, মাদ্রাসা ৯৭টি , ৪টি সরকারী ও ১৭১টি বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৬, প্রাথমিক সরকারী ৩৭০ বেসরকারী ২৮২টি, প্রাথমিক শিক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট ২, ভকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, ফল গবেষণা কেন্দ্র ১। হর্টিকালচার সেন্টার ১।


উলেখযোগ্য কিছু বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান যেমন- হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৫ খৃ.), আদিনা ফজলুল হক কলেজ (১৯৩৮খৃ.) নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজ (১৯৫৫ খৃ.), নবাবগঞ্জ আলিয়া (কামিল) মাদ্রাসা (১৯৬৪ খৃ.), রহনপুর ইউসুফ আলী কলেজ (১৯৬৭ খৃ.) কানসাট সোলেমান ডিগ্রী কলেজ (১৯৬৮ খৃ.), নবাবগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজ (১৯৬৯ খৃ.) শাহ্‌ নেয়ামতুলাহ কলেজ (১৯৭৯ খৃ.)।

৫টি পাবলিক লাইব্রেরী, সিনেমা হল ১২, কমিউনিটি সেন্টার ৩ ও মিলনায়তন ৬, স্টেডিয়াম ২।
স্বাস্থ্য কেন্দ্র :

জেলা সদর হাসপাতাল ১, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপক্ষে ৫, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৬, বক্ষব্যাধি ও টিবি ক্লিনিক ১, ডায়াবেটিক হাসপাতাল (বেসরকারি) ১, হার্ট ফাউণ্ডেশন (বেসরকারি) ১, মাতৃমঙ্গল ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১।

বিশেষ খাবার :
এখানকার খাবার সমূহের মধ্যে কলাই রুটি (মাসকলাইয়ের ডাল ও চাউলে গুড়া দিয়ে তৈরী), শিবগঞ্জের চমচম, রসকদম, দমমিশরি, আন্ধাসা (তেলে ভাজা পিঠা), নসিপুরের দই, ভোলাহাটের কচরি দেশখ্যাত।

ইতিহাস :
অদূর অতীতের ইতিহাসে ১৮৩০-৩৫ খৃস্টাব্দে দেওয়ানতুলাহ্‌ চৌধুরীর নেতৃত্তে নবাবগঞ্জ নীল আন্দোলন এবং ১৯৪৯ খৃস্টাব্দে ইলা মিত্রের নেতৃত্বে নাচোল কৃষক আন্দোলন সংঘটিত হয়।


এখানকার প্রাচীন নিদর্শনগুলো হলো :
 ছোট সোনামসজিদ (১৪৯৩-১৫১৯ খৃস্টাব্দ), দারস বাড়ি মসজিদ (১৪৭৯ খৃষ্টাব্দ), রাজবিবি মসজিদ, ধুনিচক মসজিদ, হাজার দুয়ারী (হযরত শাহ্‌ নেয়ামতুলাহ্‌ (রঃ)-র মাজার) ও মসজিদ, তহাখানা, কোতওয়ালি বা দাখিল দরওয়াজা, বালুয়া দিঘি (৫০০গজ ও ২৫০গজ) খাঞ্জা দিঘি, কানসাট রাজবাড়ি, বারোঘরিয়া কাচারী বাড়ি, চাঁপাই এর প্রাচীন মসজিদ, নওদার স্তুপ, দাফেউল বালা, জোড়া মঠ ইত্যাদি।

আরও কিছু ছবিঃ

Leave your comments

0
terms and condition.
  • No comments found