x 
Empty Product

সামনে ছোটখাটো একটা জটলা। চন্দি মা উদ্যানে এ দৃশ্য বিরল নয়। ভোরের বাতাস গায়ে মেখে যারা হাঁটছে, দৌঁড়াচ্ছে কিংবা হা-হা, হি-হি করছে- ফেরার সময় এখান থেকে তারা এটা-সেটা কিনে নিয়ে যায়। এর মধ্যে কোনো জিনিস সস্তায় বিক্রির ঘোষণা এলে সেখানে মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এখানেও নিশ্চয়ই সে ধরনের কিছু একটা হয়েছে। সমাজের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো আমার জীবনও অর্থনীতির সস্তা সূত্রের ছকে আবদ্ধ। কাজেই পাশ কাটিয়ে যেতে যেতেও থেমে গেলাম। ভিড় ঠেলে দেখলাম, জটলার মধ্যমণি একজন আম বিক্রেতা।
এখন আমের মৌসুম। ঢাকা শহরের অলি-গলি-রাজপথে রকমারি আমের পসরা। এই আম বিক্রি হয় কেজির মাপে। দাড়িপাল্লা-বাটখারার মাপে পাওয়া আম কিনে খেতে গিয়ে মনটা খচখচ করে- বিষ খাচ্ছি না তো! বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হল। আমার মতো যাদের শৈশব-কৈশোর গ্রামে কেটেছে, এরকম দুর্ভাবনা নিয়ে এক সময় আম খেতে হবে- এমন কথা কেউ কি ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিল? তখন চিন্তার বিষয় ছিল একটাই- আমে পোকা আছে কিনা! পোকা থাকলেই বিপদ। এখন আমি বাজারে গিয়ে চকচকা-ফকফকা শাক-সবজি, ফলমূলের মধ্যে কোনোটায় পোকার আক্রমণের চিহ্ন রয়েছে কিনা, তা তালাস করি। পেলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় তো করিই না, বরং উৎফুল্ল হই। পোকামাকড়ের আক্রমণের চিহ্ন থাকার মানেই হল, সেগুলোর মধ্যে ভেজাল ও ক্ষতিকর বিষ বা রাসায়নিক মিশ্রণের আঁচড় লাগেনি। ভাবা যায়, মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই আমাদের জীবনধারা কেমন উল্টে গেছে। কী অদ্ভুত এ পরিবর্তন!
আমের দাম শুনে দমে গেলাম। সস্তার স-ও নেই। তাহলে লোকজনের হুমড়ি খেয়ে পড়ার রহস্যটা কী! খনিকক্ষণ বাদে আম বিক্রেতার কথায় সেটা পরিষ্কার হল। এক খদ্দেরকে আম দেয়ার ফাঁকে সে চিৎকার করে উঠল,
: লইয়া যান- লইয়া যান, গাছপাকা আম...
এই তাহলে ঘটনা! মানুষের হুমড়ি খেয়ে পড়ার এই ঘটনার পেছনেও আমি আমাদের পরিবর্তিত জীবনধারার রূপটিকেই খুঁজে পেলাম। গাছের পাকা আম ক্রেতার হাতে তুলে দিতে গেলে পচে-গলে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি আছে। সেই ঝুঁকি নেয়ার মানসিকতাসম্পন্ন বিক্রেতা-ব্যবসায়ী এ দেশে খুবই কম। নীতি-নৈতিকতাহীন অসাধু ব্যবসায়ী ও তাদের দোসরদের ভাবনায় শুধু থাকে- কাঁচা আম আড়তে আন, বাজারে ছাড়ার একদিন আগে তাতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল মেশাও, ক্রেতার হাতে যেতে যেতে সেগুলো পেকে যাবে। সেই আম খেয়ে কার কিডনি বিকল হল, কার লিভার পচে গেল, কে ক্যান্সারে আক্রান্ত হল, সেটা না দেখলেও চলবে। তাদের দেখার বিষয় একটাই- লাভের কড়ি। লাভের কড়ি গুনতে গিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অন্ধ-বিবেকহীন অমানুষ হয়ে গেছে। এ অমানুষদের দুষ্ট প্রবণতা সম্পর্কে যারা সম্যক অবহিত, তারা স্বভাবতই কেমিক্যালমুক্ত ফলমূলের অপেক্ষায় উন্মুখ থাকে। এরকম পরিস্থিতিতে কেউ যদি তার ঝাঁকার আমগুলো গাছপাকা বলে ঘোষণা দেয়, তখন সেখানে ভিড় তো জমবেই!
গাছপাকা আমের কথা শুনে আমি আবারও অতীতে ফিরে গেলাম। গাছের ফল গাছেই খাওয়া বলে একটা কথা আছে। বানর-কাঠবিড়ালী ছাড়াও নানা প্রজাতির পাখি এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত। আমার শৈশব-কৈশোরও এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিল। বন্ধুদের সঙ্গে গাছে উঠে পাকা আম খাওয়ার সময় হাতে থাকত ছোট্ট একটা চাকু। এই চাকু বাজার থেকে কেনার প্রয়োজন পড়ত না। আমরা নিজেরাই তৈরি করে নিতাম। একবার আমাদের লজিং মাস্টার চাকু তৈরির কাঁচামাল- এক টুকরা পুরনো লোহার রড আবিষ্কার করার পর অবাক হয়ে বললেন,
: তোমার বইয়ের চিপায় এইটা কী?
- শিক।
: শিক দিয়া তুমি কী কর?
- চাক্কু বানামু।
চাকু বানানোর কথা শুনে লজিং মাস্টারের চোখ কপালে উঠে গেল। ভীত গলায় তিনি বললেন,
: চাক্কু বানাবা মানে? চাক্কু দিয়া তুমি কী করবা?
- আম খামু।
আম খাওয়ার সেই চাকু তৈরির জন্য আমরা রেললাইনের পাশে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতাম। দূর থেকে ট্রেনের আওয়াজ ভেসে আসার সঙ্গে সঙ্গে লোহার ছোট্ট-চিকন রডটা রেললাইনের ওপর রেখে দিতাম। ভারী ট্রেন প্রবল বেগে চলে যাওয়ার সময় লৌহদণ্ডটিকে চ্যাপ্টা করে দিয়ে যেত। এরপর ঘষেমেজে সেটাকে চাকুর রূপ দেয়া হতো।
গাছে চড়ে শুধু পাকা আম নয়- পাকা পাকা জাম খাওয়ার উৎসবও চলত। জাম গাছে ওঠার সময় আমাদের সঙ্গে থাকত একটা ছোট্ট টিনের কৌটা বা পানির মগ, লবণ ও কাঁচামরিচ। চানাচুর বা ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের পদ্ধতি অনুকরণ করে লবণ-মরিচ সহযোগে পাকা জামে মুখ রঙিন করার ফাঁকে ফঁকে আমরা ছড়া কাটতাম- আম খাইও, জাম খাইও, তেঁতুল খাইও না। তেঁতুল খাওয়ার ব্যাপারে আমাদের ভীতি ছিল- কারণ বড়দের বলতে শুনেছি, তেঁতুল শরীরের রক্ত পানি করে দেয়।
নগরে আমার বাস ছোট্ট একটা খাঁচায়। খাঁচায় আবদ্ধ নাগরিক জীবনে শৈশবের সেই আম-জাম গাছ নেই। তবে রাস্তাঘাটে, বাজারে ও আধুনিক শপিংমলে এসব ফলের ছড়াছড়ি। থরে থরে সাজিয়ে রাখা ফলের গায়ে সর্বনাশের আলপনা দেখে আমি আমার শৈশবের ছড়া পুরোপুরি উল্টে যায়। তেঁতুল নিয়ে নয়, এখন আমি ভয় পাই আম-জাম নিয়ে। সম্প্রতি সরকার খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল ও রাসায়নিকের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে আইন পাস করেছে। আইন পাস হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় টেলিভিশনে এক ব্যবসায়ীকে বলতে শুনলাম-
: ফরমালিনের ব্যবহার বন্ধ হইলে তো ব্যবসাই করতে পারুম না...
কী আশ্চর্যজনক কথা! ব্যবসায়ীর কথা শুনে তাকে আমার মাছি বলে মনে হল। মাছির গল্পটা হচ্ছে এরকম-
স্কুলে পড়ার সময় একদিন ক্লাসে ফজল স্যার জিজ্ঞেস করলেন,
: এই- তোমরা বলতে পারবা, একটা বাঘ বেশি ভয়ংকর, না একটা মাছি বেশি ভয়ংকর?
ছাত্ররা বাঘের কথা বলল। ফজল স্যার মাথা নেড়ে বললেন,
: হইল না! শোন, বাঘ থাকে জঙ্গলে। সে যদি কোনো কারণে লোকালয়ে ঢুইক্যাও পড়ে, তবে আর কয়জন মানুষ মারতে পারবে? কিন্তু মাছি আমাদের আশপাশেই থাকে। সে প্রাণঘাতী কোনো জীবাণু ছড়ানোর মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের জীবন সংহার করতে পারে। তাইলে কী দাঁড়াইল? কে বেশি ভয়ংকর?
আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম,
: মাছি- মাছি।
কাড়াকাড়ি-ধাপাধাপির মধ্যেও আমার ভাগ্যে দুই কেজি আম জুটল। ওজন করার সময় আম বিক্রেতাকে বললাম,
: তোমার আম সত্যি সত্যি গাছপাকা তো?
- এইটা আবার জিগাইতে হয় নাকি? আমের গায়ে লাইগ্যা থাকা আঠা দেইখ্যা বুঝেন না!
: গায়ে লাইগ্যা থাকা চিহ্ন দেইখ্যা আজকাইল কিছু ঠাহর করা যায় না রে ভাই! বাজারে মাছের গায়ে গরু-ছাগলের রক্ত মাইখ্যা ঝকঝকা করা হয়। লাল রঙ মাখাইয়া সাদা আলুরে লাল আলু বানানো হয়। সবুজ রঙ মিশাইয়া অ্যাংকর ডালরে মটরশুঁটি বানানো হয়। তুমি বাজার থেইক্যা এক শিশি আঠা কিইন্যা আমের গায়ে ছিটাইয়া দেও নাই, তার নিশ্চয়তা কী!
: শতভাগ নিশ্চিত হইয়া লইয়া যান- ঠকবেন না। গাজীপুরে আমার কয়েকটা গাছ রাখা আছে। ওইসব গাছে যে আমগুলান পাকে, কেবল সেইগুলারই বোঁটা ছিইড়া বিক্রির জন্য লইয়া আসি...
বাসায় নিয়ে যাওয়ার পর আম প্রথম খেল আমাদের ছোট ছেলে জাহিন মিয়া। খাওয়ার কিছুক্ষণ পর সে মুখ-গলা-বুকে হাত দিয়ে তার মাকে বলল,
: আম্মু, আমার এইখানে- এইখানে ব্যথা করতেছে।
ছেলের কথা শুনে লবণ বেগম ধড়মড়িয়ে উঠে বলল,
: হায়, হায়! জহু এইসব কী বলতেছে!
ব্যাপারটা পরখ করার জন্য আমি একটা আম খেলাম। পুরো মুখ বিস্বাদে ছেয়ে গেল। কেউ যাতে আতংকিত না হয়, সে জন্য বিষয়টা গোপন করে লবণ বেগমের উদ্দেশে বললাম,
: সদ্য বোঁটা ছিঁড়া আম তো! এখনও কষ বাইর হইয়া সারে নাই। সেই জন্যই মুখে কষ-কষ লাগতেছে!
- সদ্য না ফদ্য- কষ না ফস, এই সব লইয়া গবেষণা না কইরা আমগুলান সোজা ডাস্টবিনে ফেলাইয়া দিয়া আস।
: ঠিক আছে ফেললাম। কিন্তু সেইখান থেইক্যা কেউ টুকাইয়া নিয়া খাইলে তারাও তো ক্ষতির সম্মুখীন হইতে পারে! আমগুলা যাতে মানুষের নাগালে না যায়, সেই ব্যবস্থা করতে হবে।
- কী করতে চাও?
: এক কাজ কর। আমগুলারে ব্লেন্ডার মেশিনের সাহায্যে জুস বানাইয়া কমোডে ঢাইল্যা দিয়া ফ্লাশ কইরা দেও। ব্যাস, ঝামেলা শেষ।
বাজার থেকে টাকা দিয়ে জিনিস কিনে আনার পর তা নিয়ে এরকম দুর্ভোগের মুখোমুখি হলে শুধু লবণ বেগম কেন, কোনো গৃহিণীরই মাথা ঠিক থাকার কথা নয়। লবণ বেগমের চেহারায় রণরঙ্গিনী ভাব ফুটে উঠতে দেখে আমি তাড়াতাড়ি বলে উঠলাম,
: ঠিক আছে, তোমার কিছু করার দরকার নাই। যা করার আমিই করতেছি...

জেনে নেই ফরমালিন বা কার্বাইডমুক্ত আম চেনার উপায় !
   
ঢাকা- বাজারে গেলেই এখন চোখে পরে বিভিন্ন রকমের সুন্দর সুন্দর ফল। এর মধ্যে আম, জাম,কাঁঠাল লিচু কোনো টাই যেন বাদ নেই। তবে এখন আমের প্রতিই যেন সবার আগ্রহটা একটু বেশি। কিন্তু এত আমের ভিড়ে কিভাবে বুঝবেন কোন আমটি ভালো এবং ফরমালিন বা কার্বাইডমুক্ত?

তো আসুন কিভাবে ফরমালিনমুক্ত আম চেনা যায় তার কিছু উপায় আমরা জেনে নেই-

১. প্রথমেই লক্ষ্য করুন যে, আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। যদি আমের গায়ে মাছি বসে তবে সেটা ফরমালিনমুক্ত আম, কারণ ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না।

২. আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছ পাকা আম হলে লক্ষ্য করে দেখবেন যে, আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।

৩. কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।

৪. গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।

৫. হিমসাগর ছাড়াও আরো নানান জাতের আম আছে যারা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

৬. আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আম হলে কোনও গন্ধ থাকবে না, কিংবা বিচ্ছিরি বাজে গন্ধ থাকবে।

৭. আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন যে কোনো সৌরভ নেই, কিংবা আমে টক/ মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, তবে তখন বুঝবেন যে আমটি ফরমালিনযুক্ত।

দোকানে দোকানে হাজার ফলের সমাহার জানান দিচ্ছে শুরু হয়েছে মধুমাস। তাল, বাঙ্গি, তরমুজ, জাম, কাঁঠাল কোনো কিছুই বাদ নেই এর থেকে। তবে এ সময় বেশি দেখা মিলছে কাঁচা-পাকা, ছোট-বড় বিভিন্ন আমের। আর মানুষ কিনছেও সমানতালে। কিন্তু এত আমের ভিড়ে বুঝবেন কিভাবে কোন আমটি ভালো? কোনটিতে দেয়া নেই কোনো ফরমালিন বা কার্বাইড?

 এর জন্য আপনাকে জানতে হবে নিচের দেয়া তথ্যগুলো-

 ১. প্রথমেই লক্ষ্য করুন যে, আমের গায়ে মাছি বসছে কিনা। কারণ ফরমালিন যুক্ত আমে মাছি বসবে না।

 ২. আম গাছে থাকা অবস্থায় বা গাছ পাকা আম হলে লক্ষ্য করে দেখবেন যে, আমের শরীরে এক রকম সাদাটে ভাব থাকে। কিন্তু ফরমালিন বা অন্য রাসায়নিকে চুবানো আম হবে ঝকঝকে সুন্দর।

 ৩. কারবাইড বা অন্য কিছু দিয়ে পাকানো আমের শরীর হয় মোলায়েম ও দাগহীন। কেননা আমগুলো কাঁচা অবস্থাতেই পেড়ে ফেলে ওষুধ দিয়ে পাকানো হয়। গাছ পাকা আমের ত্বকে দাগ পড়বেই।

 ৪. গাছপাকা আমের ত্বকের রঙে ভিন্নতা থাকবে। গোঁড়ার দিকে গাঢ় রঙ হবে, সেটাই স্বাভাবিক। কারবাইড দেয়া আমের আগাগোড়া হলদেটে হয়ে যায়, কখনো কখনো বেশি দেয়া হলে সাদাটেও হয়ে যায়।

 ৫. হিমসাগর ছাড়াও আরো নানান জাতের আম আছে যারা পাকলেও সবুজ থাকে, কিন্তু অত্যন্ত মিষ্টি হয়। গাছপাকা হলে এইসব আমের ত্বকে বিচ্ছিরি দাগ পড়ে। ওষুধ দিয়ে পাকানো হলে আমের শরীর হয় মসৃণ ও সুন্দর।

 ৬. আম নাকের কাছে নিয়ে ভালো করে শুঁকে কিনুন। গাছ পাকা আম হলে অবশ্যই বোটার কাছে ঘ্রাণ থাকবে। ওষুধ দেয়া আম হলে কোনও গন্ধ থাকবে না, কিংবা বিচ্ছিরি বাজে গন্ধ থাকবে।

 ৭. আম মুখে দেয়ার পর যদি দেখেন যে কোনো সৌরভ নেই, কিংবা আমে টক/ মিষ্টি কোনো স্বাদই নেই, বুঝবেন যে আমে ওষুধ দেয়া।

 ৮. আম কেনা হলে কিছুক্ষণ রেখে দিন। এমন কোথাও রাখুন যেখানে বাতাস চলাচল করে না। গাছ পাকা আম হলে গন্ধে মৌ মৌ করবে চারপাশ। ওষুধ দেয়া আমে এই মিষ্টি গন্ধ হবেই না।

পাহাড়ে নতুন জাতের সুমিষ্ট রাংগুয়াই বা বারি আম ৮ এর পরীক্ষামূলক চাষে সফল হয়েছে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষনা  ইনষ্টিটিউট। বিগত কয়েক বছর যাবৎ পাহাড়ের কৃষকদের মাঝে চারা সরবরাহ করে  নতুন জাতের রাংগুয়াই আমের চাষে সফল কাপ্তাই রাইখালী কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই ভাল ফলন দিচ্ছে রাংগুয়াই আম। পাহাড়ে কৃষকদের এই আম চাষে উৎসাহ জোগাচ্ছেন কাপ্তাই কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট। রাংগুয়াই আমের পরীক্ষা মূলক চাষাবাদে সফলতা আসায় কেন্দ্রের উদ্যোগে আগ্রহী চাষীদের মাঝে এই আমের চারা সরবরাহ কাজ শুরু হয়েছে।
 পাহাড়ে নতুন জাতের রাংগুয়াই আম চাষের সফলতা আসায় এবার ও পাহাড়েস আমের ফলন এসেছে ভালো। রাঙ্গামাটির বাজারে রাংগুয়াই আমের প্রচুর সরবরাহ । ফরমালিন মুক্ত এ পেয়ে সাধারণ মানুষ খুশী।
 পাহাড়ের আম বাগানে ছোট ছোট গাছে  থোকায় থোকায় ঝুলছে বাহারী  রাংগুয়াই আম । রাঙ্গামাটির কাপ্তাই কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ১০০ একরের একটি বড় এলাকা জুড়ে বারি আম এর বিভিন্ন প্রজাতির আমের ফলন হলে ও  রাংগুয়াই আমের বাগানের অংশ সকলের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। ২০১০ সালে পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে এই আমের চারা সংগ্রহ করার পর দীর্ঘ কয়েকবছর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার পর এই কেন্দ্রের রাংগুয়াই আমের স্বীকৃতি মেলে বারি আম ৮ হিসাবে।
 রাইখালী কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা. এ এস এম হারুন-অর-রশীদ, জানান গবেষনা কেন্দ্রের আম বাগানে পোকার আক্রমন থেকে আম গাছকে রার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বিশেষ পদ্ধতি। চাষীরাও সহজে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে সম বিধায় এই আমের বাগানে কোনরুপ কীটনাশক প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না। এবার পাহাড়ে রাংগুয়াই আম চাষ করে ফলন ভাল হওয়াতে কৃষকরা লাভবান হবে বলে জানিয়েছে। ।
 রাংগুয়াই আমের ফলন পার্বত্য জেলার পাহাড় গুলোতে স¤প্রসারিত করা গেলে এখানকার কৃষকেরা লাভবান হবেন এমনি প্রত্যাশার এখানকার কৃষি বিজ্ঞানীদের। পাহাড়ে অলসভাবে পড়ে থাকা কয়েক একর জমিতে কাপ্তাই কৃষি গবেষনা কেন্দ্রের পরামর্শ নিয়ে রাংগুয়াই আম চাষ করে  বাগান মালিক অরুন তালুকদার এখন স্বাবলম্বী। তার উৎপাদিত রাংগুয়াই আম এখানকার বাজারে বিক্রি করার পাশাপাশি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
 পাহাড়ের রাংগুয়াই আমের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশে জনস্ধারনের ব্যাপক আমের চাহিদা পূরণ  সম্ভব বলে জানিয়েছেন এখানকার কৃষি বিজ্ঞানী ও সচেতন মহল।