x 
Empty Product

উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এর প্রায় ৮৫% নাগরিক প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে জড়িত । কৃষিজাত দ্রব্য যেমন ধান, পাট, আখ, গম, ভুট্রা, শাক-সবজি প্রভৃতির পাশাপাশি নানা রকম ফলদ বৃক্ষের চাষও এ দেশে করা হয়ে থাকে । আবহাওয়া, জমি ও অঞ্চলভেদে বিশেষ বিশেষ ফল যেমন আম, কাঁঠাল, আনারস প্রভৃতি উৎপাদন হারের তারতম্য লক্ষ্য করা যায় । ফলের জগতে মিষ্টি, সুস্বাদু ও রসাল ফল হিসেবে আমের আধিক্য ও জনপ্রিয়তা সবার শীর্ষে । রসনার পরিতৃপ্তি, শরীরের পুষ্টি যোগান, পরিবেশবান্ধব ও জাতীয় অর্থনীতিতে আমের অবদান অনস্বীকার্য । বাংলার মানুষের প্রিয় আম লেংড়া, ফজলি, গোপালভোগ, হিমসাগর, আশ্বিনাসহ আরো বহু প্রজাতির আম রয়েছে । ঐতিহ্যবাহী আম সমূহের পাশাপাশি বাংলার মাটিতে বিপুল সম্ভাবনাময় অপর আরেকটি আমের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে এবং ইতিমধ্যে দেশে-বিদেশে সুখ্যাতি অর্জন করেছে যার নাম “হাড়িভাঙ্গা”। রংপুর এর মিঠাপুকুর উপজেলার ১০নং বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নের আখিরাহাট সংলগ্ন খামারবাড়ীতে এ আমটির চাষ, ফলন ও সম্প্রসারণে পরিণত বয়সেও যে ব্যক্তিটি নিরলস ও অনবদ্য শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তিনি হলেন জনাব আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সালাম সরকার ।

শ্রদ্ধেয় জ্যাঠা সহর উল্লাহ সরকার এর উৎসাহ-উদ্দীপনায় জনাব মোঃ আব্দুস সালাম সরকার ছাত্র জীবনের মতই চাকুরী জীবনেও বৃক্ষরোপণে অত্যন্ত আগ্রহী ও নিবেদিত ছিলেন । সরকারী চাকুরীর সুবাদে ঠাকুরগাঁও জেলায় থাকাকালীন জেলা শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া টাঙ্গন নদীর পশ্চিম তীরবর্তী গোবিন্দ নগর হিমাগার সংলগ্ন ঠাকুরগাঁও কেন্দ্রীয় ইক্ষু চাষী সমবায় সমিতি প্রাঙ্গণে তিনি আম, কাঁঠাল ও নারিকেল গাছ এর চারা রোপণ করেন যা স্মৃতিচারণের উপাদান হয়ে আজও শোভাবর্ধন করছে । চাকুরীরত অবস্থায় ১৯৮৪-৮৫ইং সালে লাগানো কয়েক শত ফলদ ও বনজ ঔষধী গাছ বিভিন্ন কারণে বিনষ্ট হলে মাঠে সার্বক্ষণিক তিনি নিজের উপস্থিতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । ইতিমধ্যে চাকুরী জীবনের প্রায় ৩০ বছর কেটে যায় । বৃক্ষ রোপণে অবদান রাখার জন্য সরকার কর্তৃক একাধিকবার পুরস্কার পাওয়ায় স্বেচ্ছায় অবসরে যেয়ে বৃক্ষরোপণে আরো সময় ও মনোনিবেশ করার মনস্থ করেন । এরই ধারাবাহিকতায় চাকুরী পূর্তির ০৮ বছর পূর্বেই ১৯৯৩ সালে অবসর গ্রহণ করে স্বপ্ন পূরণে মাঠে নেমে পড়েন । এমতাবস্থায় “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত একটি আমের প্রশংসা শুনে তিনি কিছু আম সংগ্রহ করেন এবং সত্যিকার অর্থেই আমটি এত সুস্বাদু যে এটি তাকে আন্দোলিত করে । তাৎক্ষণিক আমটির তথ্য সংগ্রহে তিনি বের হয়ে পড়েন এবং মিঠাপুকুর উপজেলার ১নং খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার, পিতা মৃতঃ তমির উদ্দিন পাইকার এর বাড়ীতে উপস্থিত হন যিনি মূলতঃ এ আমটি উদ্ভাবন করেন। ব-দ্বীপ সাদৃশ ত্রিকোণাকৃতি তেকানী গ্রামের এক কোণে মেঠো রাস্তা সংলগ্ন পশ্চিমে আধুনিক নকশার সুন্দর একটি মসজিদ এবং এর উত্তর-পশ্চিম কোণে প্রায় ১০০ ফুট দূরত্বে সনামধন্য সেই “হাড়িভাঙ্গা” আমের মূল/মাতৃ গাছটি মাথা উঁচু করে স্বগর্বে দাঁড়িয়ে আছে । গাছটির বেড় প্রায় ১০ ফুট, মূল কান্ডের উচ্চতা ৬ ফুট এবং তদুর্দ্ধ্বে মোটা মোট ডালপালা গাছটির চারপাশে প্রায় ৩৫/৩৬ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত ।

 

ইতিহাস থেকে (আলহাজ্ব মোঃ আব্দুস সালাম সরকার) এর সাথে কথা বলে জানা যায়, বালুয়া মাসিমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত জমিদার বাড়ীর বাগানে প্রজাবাৎসল, উদারমনা ও সৌখিন রাজা তাজ বাহাদুর শিং এর আমলে আমদানিকৃত ও রোপিত বিভিন্ন প্রজাতির সুগন্ধিযুক্ত ফুল ও সুস্বাদু ফলের বাগান ছিল যা ১৯৮৮ সালের বন্যা ও ভাঙ্গনে যমুনেশ্বরী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় । ১নং খোরাগাছ ইউনিয়নের তেকানী গ্রামের মৃত নফল উদ্দিন পাইকার, পিতা মৃতঃ তমির উদ্দিন পাইকার আমের ব্যবসা করতেন । তিনি জমিদারের বাগানসহ অন্য আম চাষীদের আম পদাগঞ্জসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি করতেন । জমিদার বাগানের আমদানীকৃত আমের মধ্যে একটি আম অত্যন্ত সুস্বাদু, সুমিষ্ট ও দর্শনীয় হওয়ায় তিনি উহার একটি কলম (চারা) নিয়ে এসে নিজ জমিতে রোপন করেন । বরেন্দ্র প্রকৃতির জমি হওয়ায় শুকনো মৌসুমে গাছের গোড়ায় পানি দেয়ার সুবিধার্থে একটি হাড়ি বসিয়ে ফিল্টার পদ্ধতিতে পানি সেচের ব্যবস্থা করেন কিন্তু অল্পদিনের ব্যবধানে কে বা কারা উক্ত হাড়িটি ভেঙ্গে ফেলেন । কালের বিবর্তনে বৃক্ষটি ফলবান ‍বৃক্ষে পরিণত হয় । মৃত নফল উদ্দিনের পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধব ও ভোক্তাবৃন্দ উক্ত গাছের আম খাওয়ার পর এত সুস্বাদু আমের উৎস সম্বন্ধে তাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, কে বা কারা যে গাছটির হাড়ি ভেঙ্গে দিয়েছিল এটি সেই গাছেরই আম । গাছকে সনাক্তকরণের লক্ষ্যে নফল উদ্দিন কর্তৃক উচ্চারিত বা মুখ নিঃসৃত হাড়িভাঙ্গা কথার সূত্র ধরেই পরবর্তীতে এটি “হাড়িভাঙ্গা” নামে পরিচিত লাভ করে ।

০৭ জুলাই, ২০১০ সালে হাড়িভাঙ্গা আমের বাগান পরিদর্শন শেষে রংপুরের সাবেক জেলা প্রশাসক জনাব বি.এম. এনামুল হক মহোদয়ের ভাষায়-“বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রজাতির আমের মধ্যে নতুন সংস্করণ “হাড়িভাঙ্গা” । নামের দিক থেকে তেমন সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলেও স্বাদে-গন্ধে আমটি অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত” ।

হাড়িভাঙ্গা আম গাছের চেহারা লক্ষ্যণীয় ও আকর্ষণীয় । ডগা বা ছায়ন পূষ্ট ও বলিষ্ঠ । উহার ছায়ন দ্বারা গ্রাফটিং করলে বা ডালে জোড়কলম লাগালের গাছ অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায় । অল্প দিনের মধ্যে ডালপালা বিস্তৃত হয়ে গাছের পরিধি লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যায় । চারা রোপনের পরবর্তী বছরেই মুকুল আসে, তবে প্রথম বছরে মুকুল ভেঙ্গে দিলে গাছের ডগার সংখ্যা বৃদ্ধি পায় ও বলিষ্ঠ হয়ে ওঠে । হাড়িভাঙ্গা আম গাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো গাছের ডালপালা উর্ধ্বমূখী বা আকাশচুম্বী হওয়ার চেয়ে পাশে বেশী বিস্তৃত হতে দেখা যায় । ফলে উচ্চতা কম হওয়ায় ঝড়-বাতাসে গাছ উপড়ে পড়েনা এবং আমও কম ঝড়ে পড়ে । আমটির উপরিভাগ বেশী মোটা ও চওড়া, নিচের অংশ অপেক্ষাকৃত চিকন । আমটি দেখতে সুঠাম ও মাংসালো, শ্বাস গোলাকার ও একটু লম্বা । আমের তুলনায় শ্বাস অনেক ছোট, ভিতরে আঁশ নেই । আকারের তুলনায় অন্য আমের চেয়ে ওজনে বেশী, গড়ে ৩টি আমে ১ কেজি হয় । কোন কোন ক্ষেত্রে একটি আম ৫০০/৭০০ গ্রাম হয়ে থাকে । পুষ্ট আম বেশী দিন অটুট থাকে । চামড়া কুচকে যায় তবুও পঁচে না । ছোট থেকে পাকা পর্যন্ত একেক স্তরে একেক স্বাদ পাওয়া যায় । তবে আমটি খুব বেশী না পাকানোই ভাল ।

আম জাতীয় স্বাস্থ্য বিনির্মাণে অবদান রাখতে সক্ষম । তদুপরি আম বাগান পরিবেশ বান্ধবও বটে । সম্ভাবনাময় হাড়িভাঙ্গা আম চাষ ও আম শিল্পকে আরো আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ ব্যবস্থাপনা সময়ের দাবী রাখে । প্রচারেই প্রসার-এ দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয় বৃহত্তর স্বার্থে হাড়িভাঙ্গা আমকে আরো জনপ্রিয়, গতিশীল এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পরিচিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার সক্রিয় ভূমিকা অতীব প্রয়োজন ও গুরুত্বপূর্ণ ।

Published in ব্লগ

আমে ফরমালিন আছে বলে গত ২ বছর ধরে আম শিল্প ধ্বংস করা হচ্ছে।বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে ৭ম।এবারো আম চাষিরা আতংকে আছেন। কারন ফরমালীন এর দোহাই দিয়ে সরকার নির্দিষ্ট সময়ের আগে আম পাড়তে দেয়না। যার ফলে আম পাকলেও কিছু করার থাকেনা। অথচ অধিকাংশ ফরমালিন হচ্ছে ন্যাচারাল। ফল ও মাছে ফরমালডিহাইড প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হয়।
১) হংকং’র সেন্টার ফর ফুড সেইফটি’র দেয়া তথ্য মতে: প্রতি কেজি আপেলে ৬.৩ থেকে ২২.৩ মিলিগ্রাম, প্রতি কেজি কলায় ১৬.৩ মিলিগ্রাম, আঙ্গুরে ২২.৪ মিলিগ্রাম, আলুতে ১৯.৫ মিলিগ্রাম, তরমুজে ৯.২ মিলিগ্রাম, গরুর গোশতে ৬.৪ মিলিগ্রাম, মুরগীর গোশতে ২.৫ থেকে ৫.৭ মিলিগ্রাম, গরুর দুধে ৩.৩ মিলিগ্রাম, চিংড়ি মাছে ১-২.৪ মিলিগ্রাম ন্যাচারাল ফরমালিন থাকে।
২) বাংলাদেশে ফরমালিন মাপতে যে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ, ঐ মেশিন কি ফরমালিন মাত্রা শো করে? না, রাসায়নিক উপাদানের মাত্রা শো করে? কারণ গাছে কিটনাশক ব্যবহার করা স্বাভাবিক। কিন্তু কিটনাশকের উপস্থিতি ধরা পরলেও সেটা ফরমালিন বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। ফল ও মাছে ফরমালিন পরীক্ষায় বিভিন্ন সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ফরমালডিহাইড মিটার (জেড-৩০০) ব্যবহার করেছে। কিন্তু এ যন্ত্রটি বাতাসে ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি পরীক্ষার জন্য কার্যকর, ফলের জন্য নয়।
৩।) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) হিসাবে, প্রাকৃতিকভাবে বিভিন্ন ফল ও সবজিতে গড়ে প্রতি কেজিতে ৩ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম ফরমালডিহাইড থাকে। আর সামুদ্রিক মাছেও গড়ে প্রতি কেজিতে ১ থেকে ১৪০ মিলিগ্রাম ফরমালডিহাইডের উপস্থিতি রয়েছে।
৪) বিএআরসির ওই গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে ফলে ইথোফেন বা ইথরেল ব্যবহার করা হচ্ছে। ইথোফেন একটি ফলের পক্বতা ত্বরান্বিত করার একটি বৈধ রাসায়নিক। ফলের পরিপক্বতা ও জাত অনুযায়ী এটি প্রয়োগ করা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। ল্যাবটেরিতে পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে, ইথোফেন প্রয়োগের এক ঘণ্টা পর তা ফলের দেহ থেকে দ্রুত বের হয়ে যায়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা নির্ধারিত মাত্রা ২ পিপিএমে চলে আসে।
৫) বিশ্বের অনেক দেশে মানবদেহের জন্য ফরমালডিহাইডের সহনীয় মাত্রাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন ইতালির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ১৯৮৫ সালে খাদ্য হিসেবে মাছ ও চিংড়ির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মাত্রা প্রতি কেজিতে যথাক্রমে ৬০ ও ১০ মাইক্রোগ্রাম নির্ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের মতে, একজন ব্যক্তি প্রতিদিন প্রতি গ্রাম দৈহিক ওজনের জন্য সর্বোচ্চ শূন্য দশমিক ২ মাইক্রোগ্রাম ফরমালিন গ্রহণ করতে পারে।
৬) ফরমালিন হলো ফরমালডিহাইডের দ্রবীভূত অবস্থা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘এজেন্সি ফর টক্সিক সাবস্টান্স অ্যান্ড ডিজিজ রেজিস্ট্রির (এটিএসডিআর)’ তথ্যানুযায়ী, যেকোনো ফলে প্রাকৃতিকভাবে ফরমালডিহাইড উৎপন্ন হতে পারে। হংকংয়ের ‘ফুড সেফটি অথরিটির’ ওয়েবসাইটে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আরো কয়েকটি সংস্থার তথ্য সংকলন করে কোনো ফল ও সবজিতে কত মাত্রার ফরমালডিহাইড প্রাকৃতিকভাবে উৎপন্ন হতে পারে তা বলা আছে। ইউরোপিয়ান ফুড সেফটি অথরিটির (ইএফএসএ) মতে, দিনে একজন মানুষের শরীরে ১০০ পিপিএম পর্যন্ত ফরমালডিহাইড সহনীয়।
দেখা যাচ্ছে প্রাকৃতিকভাবেই মানুষ ফরমালীণ খাচ্ছে যা তার বডিতে সহনীয় ও হচ্ছে। তাহলে কিসের ভিত্তিতে বাংলাদেশের আম শিল্পকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করা হচ্ছে? 
ভারতীয় আমকে বাংলাদেশে অবাধ প্রবেশ করানোই কি এ চক্রান্তের মুল লক্ষ্য নয় কি? 
Published in ব্লগ
Page 3 of 5