x 
Empty Product
Thursday, 22 August 2013 15:39

গ্রাফটিং পদ্ধতিতে শতবর্ষী আমগাছে ফলিয়েছেন ৩০০ প্রজাতির আম!

Written by 
Rate this item
(0 votes)

নিজের হাতে আমটা নিলেন হাজি সাহেব। একটা ছুরি দিয়ে নিখুঁতভাবে ছাড়ালেন সবুজ খোসা। বেরিয়ে এলো কমলা রঙের পয়লা স্তর। আগ্রহী কয়েকজন জানতে চাইলেন, এ আমের বৈশিষ্ট্য কী? কোনো উত্তর না দিয়ে ছুরি ঢোকালেন আমের গভীরে। খানিকটা কেটে দেখিয়ে দিলেন হলুদ খোসা। এটাই হচ্ছে আমের দ্বিতীয় খোসা। চোখ কপালে তুলে ফেলল একজন, 'তাহলে একটা আমে দুই খোসা!'
 সত্যি তা-ই। দুই খোসার এই আমের নাম আনারকলি। খানিকটা কেটে একজনের হাতে দিলেন। মুখে দিয়ে উচ্ছ্বসিত হয়ে তিনি বললেন, 'আরে! এটা তো চোষা আর লখনভি দশারির মিলিত স্বাদ।'
 গোপন কথাটা তখনই ফাঁস করলেন হাজি সাহেব, 'হুঁ। দুটি প্রজাতির সংকর করেই আনারকলির জন্ম।' দুই খোসার এই আমের উদ্ভাবক হাজি কলিমুল্লাহ খান।
 ভারতের উত্তর প্রদেশের মালিহাবাদ। জায়গাটা লখনৌ থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। এখানে রয়েছে অনেক আমবাগান। এমনই এক বাগানের গাছে ঝুলছে শচীন টেন্ডুলকার, ঐশ্বরিয়া রাই প্রমুখ নামের নতুন নতুন আম। বাগানটির মালিক ৭৩ বছর বয়সী আমচাষি হাজি কলিমুল্লাহ খান।
 কিশোর বয়স থেকেই আমের প্রতি কৌতূহল। তাঁর পূর্বপুরুষের প্রায় দেড় শ বছরের আমচাষের ঐতিহ্য। কিন্তু তাঁদের মতো গতানুগতিক আম উৎপাদনে জীবনটা পার করতে চাননি কলিমুল্লাহ খান। সে কারণেই শুরু করলেন নিত্যনতুন আমের জাত উদ্ভাবন। কাজের জন্য বেছে নিলেন শতবর্ষী একটি আমগাছ। ওই গাছে গ্রাফটিং পদ্ধতিতে ফলালেন ৩০০ প্রজাতির আম! প্রতিটি প্রজাতির আম আকার, আয়তন আর বর্ণে আলাদা। পাতলা টিনের নেমপ্লেটে নাম খোদাই করে প্রতিটি প্রজাতির পাশে লাগিয়েও দিয়েছেন। কলিমুল্লাহ খান বলেন, 'এই গাছটিই আমার হৃদয়। বেছে বেছে এই গাছে সেরা জাতের আম ফলিয়েছি।' গাছটি এতই বড় যে মনে হয়, একটা ফলবাগান। ৩০০ প্রজাতির আম ফলানো বাগানের খোঁজ পাওয়া যেখানে দুষ্কর, সেখানে একই গাছে ৩০০ জাতের আম- ফলবাগানের চেয়ে কম কী? নতুন জাতের আমের নামকরণও করতে লাগলেন বিখ্যাতদের নামে। শচীন টেন্ডুলকারের নামের আমটি উদ্ভাবন করেছিলেন ২০১০ সালে। চোষাসহ ভারতের সবচেয়ে ভালো দুই ধরনের আমের সমন্বয়ে উদ্ভাবিত আম মাখন ও মিষ্টি স্বাদের 'শচীন আম'।
 তাঁর উদ্ভাবিত 'ঐশ্বরিয়া' দেখতে খুবই সুন্দর। কলিমুল্লাহ খানের মতে, "দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দরীর মতো 'ঐশ্বরিয়া আম'ও দেখতে খুব সুন্দর।" চলচ্চিত্রজগতের আরো কয়েকজন তারকার নামেও উদ্ভাবন করেছেন আম- আনারকলি, নয়নতারা, নার্গিস, জাহানারা। কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও উত্তর প্রদেশের গভর্নর টি ভি রাজেশ্বরের নামেও রয়েছে আম।
 ভারতের যে অঞ্চলে যে আম বিখ্যাত, সেখান থেকে জোগাড় করেছেন সেই জাতের চারা। উত্তর প্রদেশের পূর্বাঞ্চল থেকে ল্যাংড়া, পশ্চিমবঙ্গ থেকে হিমসাগর, মহারাষ্ট্র থেকে আলফনসো। সেরা জাতের এসব আমের সম্মিলনই ঘটেছে তাঁর বাগানে।
 নেই উদ্যানবিদ্যা বা কৃষিবিদ্যায় প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। লেখাপড়াও করতে পারেননি বেশিদূর। আম নিয়ে এই উদ্ভাবনী দক্ষতা তাঁর কাছে 'গড গিফটেড'। এই বয়সেও হাজির হচ্ছেন ভারতের নানা স্থানে অনুষ্ঠিত আম উৎসবে। সঞ্চয় করছেন অভিজ্ঞতা। ফলটি সম্পর্কে বাড়িয়ে নিচ্ছেন জ্ঞান। অন্যদের মাঝে বিলিয়ে দিচ্ছেন নিজের জ্ঞানটুকু। গন্ধ শুঁকে আর একবার মাত্র দেখেই শনাক্ত করতে পারেন যেকোনো আমের জাত।
 কলিমুল্লাহ খানের ফলবাগানের নাম 'আবদুল্লাহ নার্সারি'। বাগানটি মালিহাবাদ রেলস্টেশনের কাছেই। ১৪ একর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত এই বাগানের আম ভারতের বিভিন্ন জায়গাসহ রপ্তানি করা হয় বিশ্বের নানা দেশে। নানা জাতের আম উদ্ভাবনের জন্য ২০০৮ সালে পেয়েছেন ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান- পদ্মশ্রী। ইরানে স্থায়ী অভিবাসী হওয়ার আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন কেবল আমের জন্যই। আমই তাঁর 'অক্সিজেন'।
 দিল্লির গণধর্ষণের শিকার সেই আলোচিত শিক্ষার্থীর নামে এ বছর কলিমুল্লাহ খান উদ্ভাবন করেছেন নতুন জাতের আম 'নির্ভয়া'। কেন এই নাম রাখলেন? 'সাহসী মেয়েটা যেভাবে বেঁচে থাকার জন্য লড়াই করেছিল, তা সব সময় মনে রাখার মতো। তাকে মনে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আমের সঙ্গে তার নামটি জুড়ে দেওয়া।' বললেন কলিমুল্লাহ খান।
 তিন বছর আগে নিজের আমবাগানে 'নির্ভয়া'র গাছ লাগিয়েছিলেন। তাঁকে অবাক করে এ বছরই প্রথম ফল এসেছে। প্রথম ফলন হিসেবে এ বছর আমের আকার ছোট হলেও আশা করছেন আগামী বছর থেকে 'নির্ভয়া' সঠিক আকার পাবে। শুধু আম নয়, একটি গাছে ৫৪ রকম ফুল ফলিয়েও চমক দেখিয়েছেন কলিমুল্লাহ খান। ১৯৯৯ সালে এমনই এক ফুলের গাছ উপহার দিয়েছিলেন তখনকার প্রেসিডেন্ট কে আর নারায়ণনকে। দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনের মোগল গার্ডেনে এখনো আছে গাছটি।

Read 4082 times Last modified on Tuesday, 03 September 2013 04:29

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.