আম্রপালি
- Published Date
- Written by Super Admin
- Hits: 380597
নাবি জাতের আম। উৎকৃষ্ট এবং উচ্চ মানসম্পন্ন এই আমটি শংকর জাতের। উত্তর ভারতের (লখনৌ অঞ্চল) বিখ্যাত আম দুসেহরী এবং দক্ষিণ ভারতের অপর একটি বিখ্যাত জাত নীলম। এই দুটির মধ্যে শংকরায়ণ ঘটিয়ে আম্রপালি জন্ম।
নাবি জাতের আম। উৎকৃষ্ট এবং উচ্চ মানসম্পন্ন এই আমটি শংকর জাতের। উত্তর ভারতের (লখনৌ অঞ্চল) বিখ্যাত আম দুসেহরী এবং দক্ষিণ ভারতের অপর একটি বিখ্যাত জাত নীলম। এই দুটির মধ্যে শংকরায়ণ ঘটিয়ে আম্রপালি জন্ম।
ফল বিজ্ঞানীগণ নীলম জাতের পুরুষ মুকুল (ফুল) এবং দুসেহরী জাতের স্ত্রী মুকুল (ফুল) একত্রিত করে পরাগায়ন ঘটিয়ে সৃষ্টি করেছেন মনোলোভা অভিজাত শ্রেণীর আম আম্রপালি। ১৯৭৮ সালে আমটির নামকরণ করে ভারতে প্রথম ছাড় করা হয়েছে। ফলটির নামকরণের মধ্যে রয়েছে ঐতিহাসিক একটি প্রেক্ষাপট।
ভারতের বিহার রাজ্যে প্রাচীনকালে (খ্রি.পূ. ৫০০ অব্দে) বৃজি নামে একটি গনযুক্তরাষ্ট্র ছিল। এই রাষ্ট্রের রাজধানী ছিল বৈশালী (মুজফ্ফরপু রেল স্টেশন থেকে ৩৫ কি.মি দক্ষিণ-পশ্চিমে)। বৈশালীর রাজোদ্যানে আম্রবৃক্ষের পাদমূলে অম্বপালির (পলিভাষায় আম্রকে অম্ব বলা হয়) জন্ম হয়। নগরের উদ্যান পালক অম্বপালীর ভরণপোষণের ভার গ্রহন করেন। উদ্যান পালকের কন্যা বলে তার নাম হয় অম্বপালি বা আম্রপালি। বৃদ্ধির সাথে সাথে আম্রপালির সমস্ত অঙ্গ অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে গড়ে উঠতে থাকে। কোথাও এতটুকুও খুঁত নেই। এরপর আম্রপালি হলেন রাজ্যের সভানর্তকী। কারণ সে আমলে বৈশালীতে আইন ছিল, অনিন্দ্য সুন্দরী নারী কখনও পরিণয় সূত্রে আবদ্ধ হতে পারবেন না। জনসাধারণেরআনন্দের জন্য থাকে উৎসর্গ করা হবে। আম্রপালি সুন্দরী, মহিমাময়ী, মনোহারিনী এবং সর্বোৎকৃষ্ট বর্ণসুষমার অধিকারী ছিলেন। নাট, গান ও বীণাবাদনে সেকালে তার তুলনা ছিল না। তিনি পালি ভাষায় কবিতাও রচনা করতেন। সেকালের বহু পদমর্যাদাশীল গুণীজন তার ভক্ত ছিলেন। মগধের রাজা বিম্বিসার নিজেও আম্রপালির গুণমুগ্ধ ছিলেন। আম্রপালি গৌতম বুদ্ধের বানী শুনে ভিক্ষু সংঘে যোগ দিয়ে নিজের আম্রকানন সংঘকে দান করেছিলেন। শেষ জীবনে তিনি দিব্যজ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করেছিলেন। স্বীয় দেহের ক্রমধ্বংস প্রকৃতি তার দৃষ্টিগোচরে আসে। পৃথিবীর সকল বস্তুর রশ্বরত্ব তিনি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বিজ্ঞানীরা আমটির নামকরণ করে আম্রপালিকে অমরত্বদান করেছেন সন্দেহ নেই। আম্রপালি তার পিতৃ ও মাতৃ গুণের (দুসেহরী ও নীলম) চেয়ে অনেক উন্নত। ফলটি দেখতে লম্বাটে, নিন্মাংশ অনেকটা বাঁকানো। দুই জাতের আম্রপালি রয়েছে। একটির গড়ন ছোট অপরটি তুলনামূলকভাবে বড়। ঠোচ জাতের গড় ওজন ১৭০ গ্রাম। বড়টির ওজন ২৫০ গ্রাম। পোক্ত অবস্থায় ত্বকের রং সবুজ, পাকলে ঈষৎ হলুদ রং ধারণ করে। ত্বক মসৃণ, খোসা পাতলা। খোসার রং কমলা, অত্যন্ত রসাল, সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত আমটিতে কোনো আঁশ নেই। অত্যন্ত কড়ামিষ্টির এই আমে খাদ্যাংশ রয়েছে ৭৫%। মিষ্টতার পরিমাণ ২৪%। আমটি কেটে খাবার উপযোগী। আমের গাছ বামনাকৃতির। কম দূরত্বে অর্থাৎ ২.৫ মিটার পর পর রোপণ করা সম্ভব। এভাবে প্রতি হেক্টরে ১৬০০ গাছ রোপণ করা যাবে। গাছে প্রচুর ফল ধরে। প্রতি বছর ফল আসবে, ফলন হেক্ট প্রতি ১৬ টন। আষাঢ় মাসের শেষ সপ্তাহে ফল পাকা শুরু হয়। ফুল আসা থেকে পরিপক্ব হতে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফল সংগ্রহের পর পাকতে ৫-৬ দিন সময় লাগে। সংরক্ষণশীলতা ভাল। বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতেই এই জাতের আম চাষ করা যাবে। বাণিজ্যিকভাবে সবচেয়ে সফল এবং বাংলাদেশে বর্তমানে অন্যতম জনপ্রিয় আম হচ্ছে আম্রপালি।
আরও কিছু ছবিঃ
Comments
- No comments found
আমের বাজার দর
ফজলি
হিমসাগর
গোপাল ভোগ
ল্যাংড়া
ক্ষিরসাপাত (জি আই পণ্য)
হাড়িভাংগা
বোগলা গুঠি
লখনা
আম্রপলি
আশ্বিনা
ফজলি কমেন্ট

Leave your comments