নিজ জায়গা-জমি ছাড়া আম গাছ লাগানো যায় না। তবে আমপ্রেমি মানুষদের জন্য সুখবর দিয়েছেন আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র, বারি, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শরফ উদ্দিন। আম চাষ প্রসঙ্গে আলাপে তিনি ইত্তেফাককে বলেন, বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন আম চাষের জন্য অবশ্যই জমির প্রয়োজন। শুধু জমি হলেই হবে না, জমি হতে হবে সুনিষ্কাশিত, মাটি হতে হবে দোঁআশ বা বেলে দোঁআশ, আবহাওয়া ইত্যাদি। কিন্তু না, আম চাষের জন্য আলাদা কোনো জমির প্রয়োজন নেই। ইচ্ছা থাকলে টবেই উত্পাদন করতে পারবেন রসালো আম। তিনি আরো বলেন, প্রায়ই দেখা যায়, অনেকে বারি আম-৩ (আম্রপালি) জাতটি ছোট টবে লাগিয়ে রাখেন। যেখানে ১৫-২০ কেজি পরিমাণ মাটি বা জৈব পদার্থ ও মাটির মিক্সার থাকে। কিন্তু কয়েক বছর পর ওই গাছে কাঙ্ক্ষিত ফলন পান না বা গাছটি বাঁচে না। অথচ ফল বিজ্ঞানিরা চেষ্টা করছেন কীভাবে আমের উত্পাদন বাড়ানো যায়? নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে সরবরাহ করা যায়। নিজেদের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ড. শরফ উদ্দিন বলেন, শুধু বারি আম-৩ (আম্রপালি) জাতই নয়, পছন্দের অন্যান্য আমও চাষ করা যায় কনক্রিটের তৈরি বিশেষ ধরনের টবে। এ টবে যে কোনো জাতের আম ১০/১২ বছর এবং অন্যান্য ফল (কুল, পেয়ারা, আমড়া, কামরাঙ্গা, ডালিম, জামরুল, আতা, শরিফা, বিভিন্ন ধরনের লেবু, মাল্টা প্রভৃতি) ১৫/২০ বছর পর্যন্ত সফলভাবে উত্পাদন করা সম্ভব। কীভাবে বাসা-বাড়ির ছাদে আম বাগান করা যায়? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিশেষ টব স্থাপনের সেই রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। যদি জায়গাটি নিচু, অনুর্বর, অনাবাদি এবং উলু বা কাশ দ্বারা আবৃত থাকে সেখানেও বিশেষ টবে আম চাষ করা যাবে। তবে বাড়ির ছাদে স্থাপনের জন্য টবের ওজনের বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে। টবের বাইরে বেলে মাটি না এঁটেল মাটি, পানির স্তর উপরে বা নিচে, আগাছায় ভরা সেটি মুখ্য নয়। টবের গাছে জন্মানো ফলগুলো একটু কষ্টের তাই রোগ ও পোকা, কবুতর, পাখি যেন নষ্ট করতে না পারে সেজন্য সময়মত ফ্রুট ব্যাগিং অথবা নেটের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে টবে আম চাষের জন্য যে জাতগুলো যে এলাকায় ভালো ফলন দেয় সেগুলো নির্বাচন করতে হবে। ড. শরফ উদ্দিন বলেন, বিশেষ ধরনের টবটি খোয়া (ইটের টুকরা), সিমেন্ট, বালি ও চিকন রডের প্রয়োজন হয়। টবের আকার ৩২ বাই ৩২ বাই ৩০ ইঞ্চি (দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও উচ্চতা) এবং টবের ভেতরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে ২৫ ইঞ্চি হতে হবে। টবের উপরের প্রান্তে চার ইঞ্চি পাড় বা কিনারা করলে দেখতে সুন্দর হয়। টবটি ভালোভাবে স্থানান্তরের জন্য চার প্রান্তে চারটি হুক রাখতে হবে। টবের নিচের প্রান্তে তিনটি পানি নিষ্কাশনের ছিদ্র রাখতে হবে। টবটি ভরাট করার সময় নিচের অংশে ছোট ইটের টুকরা ব্যবহার করতে হবে। এরপর ৫০ ভাগ দোঁআশ মাটি এবং ৫০ ভাগ পচানো গোবর সার অথবা জৈব সার ব্যবহার করতে হবে। এরপর পছন্দের আমের জাতের কলম সংগ্রহ করে লাগাতে হবে। টবে আম গাছ তো জন্মানো যায়, তবে ফলন কেমন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফলনও সন্তোষজনক। একেকটি বারি আম-৩ (আম্রপালি) ও বারি আম-২ (লক্ষণভোগ) জাতের গাছে আমের ফলন সবচেয়ে বেশি (৪০ কেজি)। বারি আম-৪ জাতটির ফলন ৩৫ কেজি। আর সবচেয়ে কম ফলন হয় বারি আম-১ জাতের আমের। ১০-১২ বছরের একটি গাছে ২৫ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত আম হতে পারে। তবে জাতভেদে আরো কমবেশিও হতে পারে। আমগাছ আমাদের জাতীয় বৃক্ষ এবং আম সর্বাধিক পছন্দনীয়। তাই আমের চাহিদা পূরণে শুধু বাগানের দিকে তাকিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই, টবে জন্মানো আম গাছই একটি পরিবারের আমের চাহিদা পূরণ করতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
Published in
ব্লগ
Latest from Super Admin
Leave a comment
Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.