আমের মুকুল ঝরা সমস্যা ও করণীয়
- Published Date
- Written by Super Admin
- Hits: 16869
আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশে আমই হচ্ছে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফল। আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙ্খিত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য।
আমকে ফলের রাজা বলা হয়। বাংলাদেশে আমই হচ্ছে সর্বাধিক জনপ্রিয় ফল। আমের মুকুল আসা ও ফল ধরার সময়টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাঙ্খিত ফলন পেতে এ সময় যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অপরিহার্য।
আম চাষ করতে গিয়ে আমচাষিরা যেসব সমস্যায় পড়েন তার মধ্যে আমের গুটি ঝরা অন্যতম। গুটি আসার পর নানা কারণে গুটি ঝরে যায়। এসবের কারণ ও তার প্রতিকার নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো :
প্রাকৃতিক কারণ : সাধারণত আমগাছে প্রতি মুকুলে এক হাজার থেকে ছয় হাজার পর্যন্ত পুরুষ ও স্ত্রী ফুল থাকে। তার মধ্যে প্রাথমিকভাবে প্রতি থোকায় জাতভেদে এক থেকে ৩০টি আমের গুটি ধরতে দেখা যায়। গুটি আসার ২৫ থেকে ৫০ দিনের মধ্যে প্রতি থোকায় মাত্র এক থেকে দু’টি গুটি থাকে। বাকি গুটি প্রাকৃতিক বা অভ্যন্তরীণ কারণে ঝরে যায়। তবে কোনো কোনো মুকুলে কদাচিৎ চার থেকে পাঁচটি আম ধরতে দেখা যায়। এক্ষেত্রে আমের আকার ছোট হয়।
করণীয় : অতিরিক্ত গুটি ঝরে না পড়লে আমের আকার ছোট হয় এবং আমের গুণগত মান ও ফলন কমে যায়। প্রতিটি মুকুলে একটি করে গুটি থাকলে সে বছর আমের বাম্পার ফলন হয়। তবে প্রতি মুকুলে আমের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য ফুল ফোটার ১০ ও ২০ দিন পর দুইবার ১০ লিটার পানিতে ছয় গ্রাম হারে বোরিক অ্যাসিড স্প্রে করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। আবার ফুল ফোটা অবস্থায় জিবেরেলিক অ্যাসিড প্রতি লিটার পানিতে ৫০ মিলিগ্রাম হারে স্প্রে করলে আমের গুটি ঝরা কমে যায়।
মাটিতে রসের অভাব হলে : মাটিতে রসের অভাব হলেও আমের গুটি ঝরে যায়। আমের বৃদ্ধির প্রাথমিক পর্যায়ে অর্থাৎ মার্চ-এপ্রিল মাসে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাটিতে রসের অভাব দেখা দেয়। মাটিতে রসের অভাব হলে আমের বোঁটায় তাড়াতাড়ি নির্মোচন স্তর গঠিত হয়। ফলে আমের গুটি ঝরে যায়।
করণীয় : মাটিতে রসের অভাবে আমের গুটি ঝরে গেলে গাছের চার পাশে নিয়মিত সেচ দিতে হবে। আমের গুটি মটরদানার মতো হলেই প্রথমে একবার গাছের গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। প্রথম সেচ দেয়ার পর থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়া পর্যন্ত ১৫ দিন পরপর সেচ দিতে হবে। সেচের পাশাপাশি হরমোন প্রয়োগ করেও আমের গুটি ঝরা কমানো যায়। যেমন, আমের গুটি মটরদানার মতো হলে প্রতি লিটার পানিতে ২০ গ্রাম ইউরিয়া সার অথবা প্রতি ৪.৫ লিটার পানিতে দুই মিলিলিটার হারে প্লানোফিক্স হরমোন পানিতে মিশিয়ে আমের গুটিতে স্প্রে করলে গুটি ঝরা কমে যায়।
পোকার আক্রমণ হলে : গুটি আসার পর প্রাথমিক পর্যায়ে আমের গুটিতে হপার পোকার আক্রমণ হতে পারে। এ পোকার আক্রমণে ২০ থেকে ১০০ ভাগ পর্যন্ত আমের উৎপাদন কমে যেতে পারে। মুকুল আসার সময় প্রতিটি মুকুলে অসংখ্য হপার নিম্ফ দেখা যেতে পারে। এ পোকার পূর্ণবয়স্ক মথ ও কিড়া গুটির রস শোষণ করে খায়, ফলে আমের গুটি শুকিয়ে ঝরে যায়। মুকুল আসার পরপরই হপার পোকার আক্রমণ হতে পারে। সে েেত্র মুকুলের ফুল শুকিয়ে যায় এবং কোনো ফল ধরে না। এ পোকা যখন মুকুলের রস চুষতে থাকে তখন এদের মলদ্বার দিয়ে প্রচুর আঠালো রস নিঃসরণ হয়। এ রস মুকুলের ফুল ও পাতায় আটকে যায়। এতে শুটি মোল্ড নামে এক প্রকার ছত্রাক জন্মে এবং দ্রুত বংশবিস্তার করে পাতার উপরিভাগ ছেয়ে ফেলে। ফলে পাতা কালো দেখায়। সবুজ পাতা কালো আস্তরণে ঢাকা থাকে বিধায় সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে গাছ দুর্বল হয় এবং ফলন কমে যায়।
এ ছাড়াও আমের গুটি মার্বেল আকৃতির হলে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হতে পারে। এক্ষেত্রে পূর্ণবয়স্ক পোকা আমের নিচের অংশে খোসার ওপরে ডিম পাড়ে। কয়েক দিনের মধ্যে ডিম ফুটে লার্ভা বের হয় এবং লার্ভা খুব ছোট বিন্দুর মতো ছিদ্র করে আমের ভেতর ঢুকে পড়ে। প্রথমে শাঁস ও পরে আঁটি খাওয়া শুরু করে। পরে আক্রান্ত স্থান কালো হয়ে যায় এবং কোনো কোনো সময় আম ঝরে পড়ে।
করণীয় : আমবাগান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, আগাছামুক্ত ও খোলামেলা অবস্থায় রাখতে হবে । মরা ডালপালা ছেঁটে ফেলতে হবে। হপার পোকা থেকে আমের গুটি রার জন্য দুইবার কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। প্রথমবার আমের মুকুল আসার পর কিন্তু ফুল ফোটার পূর্বে এবং দ্বিতীয়বার আমের গুটি মটরদানার মতো হলে। কীটনাশক পানিতে মিশিয়ে গুটিতে স্প্রে করতে হবে। কীটনাশকের মধ্যে সাইপরমেথ্রিন ১০ ইসি (রিপকর্ড, ফেনম, বাসাড্রিন) বা ল্যামডা সাই হ্যালাথ্রিন ২.৫ ইসি বা ফেন ভেলারেট ২০ ইসি গ্র“পের যেকোনো একটি কীটনাশক প্রতি লিটার পানিতে এক মিলিলিটার হারে গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে। ডেল্টামেথ্রিন (ডেসিস) বা একতার স্প্রে করেও হপার থেকে আমের মুকুলকে রা করা যায়।
রোগের আক্রমণ হলে : সাধারণত মাঘ-ফাল্গুনে আমগাছে মুকুল-ফুল-গুটি আসে। আমের এ অবস্থায় ছত্রাকজনিত নানা রোগের আক্রমণে উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হতে পারে। এসব ছত্রাকজনিত রোগের পাউডারি মিলডিউ অন্যতম। আক্রান্ত অংশে পাউডারের গুঁড়ার মতো একপ্রকার জিনিস দেখা যায়। রোগের ব্যাপক অবস্থায় আক্রান্ত অংশ সাদা পাউডারে মুকুল ঢেকে যায় এবং আমের গুটি ঝরে পড়ে। এ ছাড়াও অ্যানথ্রাকনোজ রোগের কারণেও আমের গুটি ঝরে যেতে পারে। মুকুল বা ফুল এ রোগে আক্রান্ত হলে তা কালো হয়ে ঝরে পড়ে। গুটি বা ছোট অবস্থায় আক্রান্ত হলে আমের গায়ে ধূসর বাদামি বা কালো দাগ পড়ে। বেশি আক্রান্ত হলে এগুলোও ঝরে পড়ে। আমের মুকুলে এ রোগের আক্রমণ হলে গাছের সব মুকুল নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
করণীয় : পাওডারি মিলডিও রোগের জন্য ফুল আসার আগে একবার এবং ফুল ধরার পর একবার সালফারজাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন কুমুলাস, ম্যাকসালফার, থিওভিট, রনভিট দুই গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করতে হয়। অ্যানথ্রাকনোজ রোগের ক্ষেত্রের প্রতি লিটার পানিতে এক মিলি প্রোপিকনাজল (টিল্ট) বা এক গ্রাম কার্বেন্ডাজিম (ব্যাভিস্টিন) বা দুই গ্রাম ডাইথেন এম৪৫ মিশিয়ে ১০ দিন অন্তর গাছের পাতা, মুকুল ও ডালপালা ভালোভাবে ভিজিয়ে স্প্রে করতে হবে।
আম পূর্ণাঙ্গ ফলে রূপ নেয় কয়েকটি পর্যায় অতিক্রম করে। প্রথমে মুকুল, মুকুল থেকে ফুল, ফুল থেকে গুটি এবং গুটি বড় হয়ে আম ফলে রূপ নেয়। প্রতিটি পর্যায়েই আমগাছের বালাই ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। তবে মুকুল আসার আগে এবং পরে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। কেননা, মকুল ঝরে পড়েই আমের উৎপাদন বহুলাংশে হ্রাস পায়।
লণীয় বিষয় : কৃষকদের মনে রাখতে হবে যে, গাছে মুকুল আসার আগে যেমন স্প্রে করার প্রয়োজন নেই তেমনি মকুল ফোটা অবস্থায় কোনোভাবেই স্প্রে করা ঠিক নয়। এ সময় প্রচুর সংখ্যক উপকারী পোকা আমবাগানে আসে এবং পরাগায়ণে সহযোগিতা করে। মনে রাখতে হবেÑ গাছে মুকুল আসার পর সঠিকভাবে দুইবার স্প্রে করতে পারলে গাছে প্রচুর আম থাকবে। ।
Comments
- No comments found
ফজলি আপডেট
- অনলাইন আম সেলারদের তালিকাঃ
- আমের জন্য ই-কমার্স ব্যবসা: কিভাবে করবেন বিস্তারিত জনুন
- আমের ই-কমার্স ব্যবসা কি ভাবে শুরু করা যায়? | আমের ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর গাইডলাইন
- চালু হতে যাচ্ছে ই-আম সেলারদের প্লাটফরম
- ই-ক্যাব ফেক ক্রেতার একটা লিস্ট তৈরি করতে পারে
- Bangladesh Rapid eTrade Readiness Assessment
- একটি সফল ই কমার্স ওয়েবসাইট এর হোমপেজ
- একটি প্রতারণার এবং অন্যদের প্রতি সাবধানতা
- খুব শীঘ্রই ৬৪ জেলায় হবে ই-কমার্স ওয়্যার হাউস
- আমার পেজ এর পিক অন্য পেজে ব্যবহার করছে
- কিভাবে ফেসবুক পেজ বিজনেসের জন্য ব্যাবহার করবেন
- ই-ব্যবসার পাইকার জিলিঙ্গো আসছে সর্বোচ্চ বিনিয়োগ নিয়ে
- মার্কেটিং নয় যেন টাকা ছাপানোর লাইসেন্স হাতে পাওয়া
- ফেসবুকে এড দিলে লাইক কমেন্ট আসে কিন্তু সেল আসে না। কি করবেন?
- আমি আধা পাকা কলা দেয়ার কথা উল্লেখ করে দিলেও তারা পাকা গলা কলা নিয়ে আসে
- স্যামসাং অফিসিয়াল কেউ কি আছেন, কিছু কি করবেন?
- ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪৮১০০ টাকা ছিল সেটি এখন ৬% মূল্যছাড়ে ৫৩০০০ টাকা
- ড্রপশিপিং কোম্পানীগুলোর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ভেন্ডর ম্যানেজমেন্ট
- ২০১৯ সালে ফেসবুক মার্কেটিং এর জন্য ৯ টি প্রয়োজনীয় পরিসংখ্যান
- লোকাল বিজনেসের জন্য সোশ্যাল মিডিয়ার ম্যাজিক
আরোও কিছু আম

Leave your comments