ফাল্গ–নের হাওয়া। কৃষ্ণচূড়ার রং আর কোকিলের ডাক। ফুলে ফুলে ছেয়েছে চারদিক। সঙ্গে যোগ হয়েছে আমের মুকুল। হয়েছে গাছে গাছে সৌন্দর্যের প্রতীক। সোনালি হলুদ রঙের এ মুকুল কেড়ে নেয় সবার মন। এমন কোনো বাঙালি নেই যাকে দেয় না দোলা। যেমন তার সৌন্দর্য তেমনি তার ঘ্রাণ। মৌ মৌ এ ঘ্রাণে সত্যিই ডানা মেলে আমের মুকুল।
মৌমাছির দল ঘুরে বেড়ায় গুন গুন শব্দে। তারপর মুকুলে বসে মনের আনন্দে। করে মধু আহরণ। মৌমাছির এ গুন গুন সুর কেড়ে নেয় মন। এ অদৃশ্য এক আকর্ষণ কাছে টানে। যে কারণেই হয়তো আমের মুকুল, আম নিয়ে অনেক কবিই লিখেছেন কবিতা, কিংবা তাদের কবিতায় স্থান পেয়েছে প্রকৃতির এ উপাদানটি। তারা লিখেছেন, ‘সবুজে কৃষ্ণচূড়া, শিমুল রং মিশে যেন হয়েছে পতাকা, বিমুগ্ধ বসন্ত আজ উড়ে এসে হাঁটছে শহরে, আমের মুকুল ডালে পাতাদের প্রিয় হাতছানি।’
যে সব গাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে তার বাগানমালিকরা আম গাছের পরিচর্যাও শুরু করেছেন। গাছের প্রাথমিক পর্যায়ের পরিচর্যাও শুরু করেছেন চাষিরা। বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে আমের বাম্পার ফলন হবে বলে আশা করছেন চাষি ও বাগান মালিকরা। আম চাষিরাও আশাবাদী আবহাওয়া অনুকূল থাকলে নিশ্চিতভাবে আমের ফলন রেকর্ড পরিমাণ হবে।
উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, রংপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী জেলার প্রায় সব এলাকাতেই রয়েছে বড় বড় আমবাগান। প্রতিবছর আমবাগানের সংখ্যা ক্রমশই বাড়ছে। তবে গড়ে ওঠা নতুন আমবাগানগুলোর প্রায়ই বনেদি জাতের। বিশেষ করে নিয়মিত জাত ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাত, আশ্বিনা জাতের বেশি।
পৃথিবীতে ৫শ’ জাতের আম চাষ হলেও উত্তরাঞ্চলে ৩৫ থেকে ৪০ জাতের আম চাষ হয়। আর বাংলাদেশে ২৫০ জাতের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সূর্যপুরি, ফজলি, গোপালভোগ, মোহনভোগ, ন্যাংড়া, ক্ষিরসাপাত, হিমসাগর, কৃষাণভোগ, মল্লিকা, লক্ষণা, আম্রপলি, দুধসর, দুধকলম, বিন্দাবনী, আরজান, রানী পসন, মিশ্রীদানা, সিন্দুরী, আশ্বিনা এবং সে সঙ্গে নানা প্রকার গুটি আম।
এছাড়া আমের রাজধানী হিসেবে পরিচিত চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রতিবারের মতো এবারো বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে এমনটাই মনে করছেন আম চাষিরা। এ জেলায় প্রতিবছর আমের বাগান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। আর ফলবান আম গাছের সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অফিস ও আমচাষি সূত্রে জানা গেছে, একসময় বলা হতো বরেন্দ্রের মাটিতে আমবাগান ভালো হবে না। সে কথা এখন অচল। কেননা বরেন্দ্র অঞ্চলের ধানি জমিতে আমবাগানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। বর্তমান বছর অন ইয়ার হওয়ায় আবহাওয়ার কারণে আমের ফলন বাম্পার হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জেলায় আমবাগান থেকে প্রতি বছর ১ হাজার ৫শ’ কোটি থেকে ১ হাজার ৯শ’ কোটি টাকার আমের ব্যবসা হয়। সাধারণত আমের মুকুল বেশি হলে তাতে পোকার আক্রমণও বেশি হয়। আমের ফলন সাধারণত এক বছর অফ ইয়ার এবং আরেক বছর অন ইয়ার। বর্তমান মৌসুম অন ইয়ার। অফ ইয়ারে আমের ফলন কম হয় এবং অন ইয়ারে বেশি হয়। অন ইয়ারে বাগানগুলোর গাছের পাতা পর্যন্ত মুকুলে ঢেকে গেছে। তাই এবার ধারণা করা হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা।
এদিকে ফল ক্রেতারা লাভের জন্য আমবাগান পরিচর্যার নামে গাছে ব্যবহার করছে ‘কালটন’ ও শক্তি নামের দুটি রাসায়নিক দ্রব্য। যা এখন আমবাগানগুলোর জন্য মহাদুর্যোগ নেমে এসেছে। ফলে আমবাগানের মালিকরা দুর্ভাবনায় পড়েছেন। ভারত থেকে চোরাইপথে আনা হচ্ছে এ দুটো হরমোন বৃদ্ধিতে সহায়ক রাসায়নিক ওষুধ। বিশেষ করে হুমকির মুখে পড়েছে ফজলি, খিরসাপাত, ল্যাংড়া, গোপালভোগ। সব বড় আমগাছে এ জাতীয় হরমোন ব্যবহারের ফলে আমগাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফলন হলেও গাছের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। একসময় বয়স্ক গাছ অক্ষত থাকবে না। শুকিয়ে মারা যাবে। এভাবে ছোট ছোট অর্থাৎ কম বয়স্ক গাছে ফল বৃদ্ধির জন্য এ হরমোন ব্যবহারের ফলেও অপ্রাপ্ত বয়স্ক গাছও মারা যাবে। বেশি লাভের আশায় গাছের কালচার ও শক্তি জাতীয় হরমোন ব্যবহারের ফলে আমবাগানগুলোর ধ্বংস ডেকে আনছেন মালিকরা। এ ধরনের আচরণ নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। এদিকে আমবাগানের ক্রেতারা আমবাগান পরিচর্যার নামে মুকুল আসার পূর্বেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নামের রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করছেন। আবার মুকুল আসার পর বাগানে আমের গুটি আসার পর গুটি বড় হলে একবার এবং আম পাকার পূর্বে একবার আর ফল পাড়ার সময় একবার রাসায়নিক ওষুধ ব্যবহার করছেন।
শত বাধা সত্ত্বেও আমবাগানকে নিয়ে সরকারী মহল সচেষ্ট না হলে একসময় আমবাগানগুলো হুমকির মুখে পড়বে। আমপাকা শুরু হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কর্মকর্তাদের অফিস পরিদর্শন এমনকি অনেকে শখ করে পরিবার নিয়ে আমবাগান দেখতে এসে আম নিয়ে ফেরেন। এ সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জের কর্মকর্তারা পড়েন বিভিন্ন ধরনের অসুবিধায়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের খুশি করার জন্য আম পাঠানো এক রকম বাধ্যতামূলক। তবুও আম ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও আম ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের মুখে থাকে হাসি।
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
আরও পড়ুন
-
রাজশাহীর ল্যাংড়া আম এবার ইউরোপে রফতানি
-
আম সম্পর্কে ১৩টি অজানা মজাদার তথ্য
-
আম গবেষণা কেন্দ্রটি কোথায়?
-
মধু মহালাহা হপার পোকা সম্পর্কে জানুন
-
আম রপ্তানিতে সমস্যাগুলো কোথায়?
-
করোনায় আম পেড়ে বিক্রি করবো কোথায়
-
আহা, কি যে শান্তি! কত্তদিন পর নিজের হাতে আম পেড়ে খাইলাম।
-
পুর্ব শক্রুতার জের, সাপাহারে বাগানের আম গাছ উপড়ে ফেলে অর্ধলক্ষ টাকার ক্ষতি সাধন
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আমের মূল্য নিয়ে বেকায়দায় ব্যবসায়ীরা
-
ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে বিশ্বে যাবে রাজশাহীর আম
-
শরীর সুস্থ রাখতে গরমে চুটিয়ে খান কাঁচা আম
-
ধানের জমিতে আম চাষ
-
হাটে হাঁড়িভাঙা
-
পাকা আম খান, তবে বেশি নয়
-
আমের মুকুল ঝরা রোধে করনীয় কি
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ফাউন্ডেশের আমবাগানের ভিতর অবস্থিত একটি কবরস্থান হতে শিবমূর্তি উদ্ধার
-
দেশে অনেক জাতের দুর্লভ আম আর নেই
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জের হাজার কোটি টাকার আম ব্যবসায়িক ঝুঁকিতে
-
বারোমাসি আম
-
চুলের যত্নে আম
-
আমের বাগানে মাল্টা চাষ
-
বানেশ্বর বাজারে আমে মেশানো হচ্ছে বিষযুক্ত কেমিক্যাল; জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে!
-
ফরমালিনের বিকল্প চিংড়ির খোসা
-
পৌষেও মিলবে সুমিষ্ট আম
-
কাঁচা আম আর মাছের কম্বিনেশন! রইল ২টো রেসিপি
-
ভারত দখল করে নিচ্ছে ফজলি আম
-
আমচাষিদের মুনাফা নিশ্চিতের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার
-
দেশে অনেক জাতের দুর্লভ আম আর নেই
-
আমের জাত নিয়ে কিছু তথ্য
-
আম খেয়ে হাসপাতালে
-
ভারতের আম ও সবজি ইউরোপে রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা
-
মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে সেই আম গাছটি
-
আল্লাহর ইচ্ছায় লিচু গাছে আম!
-
সহজভাবে আমের জোড় কলম করবেন যেভাবে
-
আম কুড়াতে সুখ
-
আম এর মুকুল ঝরা সমস্যা ও করণীয়
-
৪২ প্রজাতির আম চাষে সফল তিনি
-
রাজশাহীর আম গাছ গুলোতে গুটি আসতে শুরু করেছে
-
কবিতা-আম পেকেছে গাছে
-
আমে ভালো লাভের আশা রাজশাহীর চাষিদের
-
আমের সময়ে আমের দেশে
-
আমের নতুন রাজধানী নওগাঁর সাপাহার
-
শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীতে এটাই সম্ভবত সব থেকে বড় আম গাছ
-
বছরে ৩ বার ফলবে যে আম
-
দেশের সবচেয়ে বড় আমগাছটি দেখতে যাবেন কিভাবে? কোথায় থাকবেন, কোথায় খাবেন বিস্তারিত
-
কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন প্রতিবন্ধী খায়রুলের
-
গৌড়মতি আমে রঙিন স্বপ্ন
-
চিনে নিন ফরমালিনমুক্ত আম
-
কুয়েতের মরুভুমিতে বাংলাদেশের আম গাছ ‘বিমান’
-
আম গাছের পরগাছা প্রতিকারের উপায়
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল -
Nice post, very interesting. Good work , If you have…
-
এই আম কোন মাসে পাকে
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
How can this be done?
-
মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
-
হিমসাগর কত করে??
-
5kg am lak ba gser
-
আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
-
খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
-
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
-
চিন্তা করা যায়??
-
কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
-
আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?
