পাঁচ বছরে লোকসান ৬০ কোটি টাকা : পুঠিয়ায় পচন রোগে হতাশ আম ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা
রাজশাহীর পুঠিয়ায় এ বছরও আমে ব্যাপক হারে পচন রোগে দেখা দিয়েছে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশক ওষুধ ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার না হওয়ায় বেশিরভাগ আম বাগান মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এ পচন রোগে গত ৫ বছরে বিভিন্ন এলাকায় আম বাগানে প্রায় ৬০ কোটি টাকার আম লোকসান হয়েছে বলে মালিক দুঃখ প্রকাশ করেন।
সরেজমিন ঘুরে ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে নতুন ও পুরাতন মিলে ৮শ’ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২০ হেক্টর বেশি। গত মৌসুমে আমের উত্পাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ হাজার ৫০ মে. টন। উত্পাদন হয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার মে. টন আম। এ বছর বেশিরভাগ গাছে আম দেখা দেয়ায় এবং অনুকূল আবহাওয়া বিরাজ করায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার মে. টন। কিন্তু চলতি মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে আবারও আমে পচন রোগের প্রভাব দেখা দিয়েছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অর্ধেকেরও কম ফলন হওয়ার আশঙ্কা করছেন আম বাগান মালিকরা। এলাকার বিভিন্ন আম বাগান ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ আমের গঠন দু’ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি আমের উপরের অংশ স্বাভাবিক থাকলেও নিচের অংশ কুচকে এবং বিবর্ণ কালো রং ধারণ করছে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই নিচের অংশ থেকে আস্তে আস্তে পচন শুরু হয়। ৭/৮ দিনের মধ্যে পুরো আম পচে ঝরে পড়ছে।
ধাধাশ গ্রামের আম বাগান মালিক মাসুদ করিম জানান, তার প্রায় দু’একর আম বাগান রয়েছে। বিগত দিনে আমে কোনো প্রকার রোগ-বালাই না থাকলেও গত ৫ বছর ধরে বিভিন্ন প্রকার রোগে আম বাগান আক্রান্ত হচ্ছে। আমের মুকুল থেকে শুরু হয় অজ্ঞাত এই রোগ। কৃষি অফিসের নির্দেশনা মোতাবেক সঠিক পরিচর্যা এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রকার ওষুধ ৫/৬ দফা ব্যবহার করেও কোনো প্রকার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এই পচন রোগে গত পাঁচ বছরে আমার বাগানে প্রায় ১৫ লক্ষাধিক টাকার আম নষ্ট হয়ে গেছে। পুঠিয়া সদর এলাকার আম চাষী সরদার আরিফ, মাজেদ আলী ও জিল্লুর রহমান দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তার আম বাগানগুলোতে দু’বছর ধরে পচন রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে। এই আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে বাজার থেকে বিভিন্ন প্রকার বালাইনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রকার সুরাহা হচ্ছে না। বরং বাগানের একটি আম গাছে আক্রমণ শুরু হলেই রাতারাতি বাগানের সব আমে পচন ছড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকায় নিয়মভহির্ভূতভাবে গড়ে ওঠা ইট ভাটার কালো ধোঁয়ার প্রভাবের কারণে আমে এই রোগের আক্রমণ শুরু হয়েছে বলে তারা অভিযোগ তুলছেন।
অপরদিকে বানেশ্বর এলাকার আম ব্যবসায়ী শফিকুল আলম জানান, বিগত দিনে বাগানে কোনো প্রকার রোগবালাই না থাকায় এই অঞ্চলের আমের অনেক চাহিদা ছিল। কিন্তু কয়েক বছর ধরে আমের নিচের অংশে কুঁচকে এবং পচনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে। তিনি আরও জানান, আমাদের সরবরাহ করা আমের মূল মোকামে পরিপকস্ফ ও সঠিক গঠনের আম না হওয়ায় চাহিদা অনেক কমে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কর্মকর্তা মন্জুর রহমান জানান, প্রথমত কৃষকদের আম বাগানগুলোতে মাত্রাতিরিক্ত ঝাপড়া বা পাতা পরিষ্কারে অবহেলা। বাগানে আলো-বাতাস চলাচলের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় সেখানে হোপার পোকা অবস্থান করে। আম বাগানের পাতার নিচের অংশ ও গাছের গোড়ায় সঠিক মাত্রায় স্প্রে করলে এই পোকা থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। তাছাড়া বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এবং মাত্রাতিরিক্ত গরমে আম বাগানগুলোতে পোকার আক্রমণ বেশি দেখা দিয়েছে। সাফসিন ও নিপাসিন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করলে অনেক অংশে পোকার আক্রমণ থেকে আম রক্ষা করা সম্ভব।
এই মৌসুমে নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার আম ব্যবসায়ী, আমের আড়ৎদার এবং আম চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। নাটোর শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত বাগাতিপাড়া উপজেলার ব্যবসায়ীক প্রাণকেন্দ্র তমালতলাতে অবস্থিত এই বাজার। প্রতি শুক্র ও সোমবার হাট থাকলেও এখন প্রতিদিনই হাট বসছে। উপজেলাতে প্রচুর পরিমাণে আম, লিচু, কাঠালসহ অন্যান্য ফলের বাগান থাকলেও শুধু এই মৌসুমকে ঘিরে এই বাজারে ২৫টির মত আমের আড়ৎ রয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চুক্তিভিত্তিক বিভিন্ন এলাকায় আমের বাগান ক্রয় করে। সেই আম ভেঙ্গে আড়তে নিয়ে আসে। অনেক বাগান মালিক রয়েছে যারা সরাসরি আড়তে আম বিক্রি করে, তাতে তারা লাভও পাচ্ছে বেশি। ঢাকা থেকে অনেক পাইকারি ব্যবসায়ী আড়তের মাধ্যমে আমগুলো ক্রয় করে। পাইকার ব্যবসায়ী আব্দুল জলিল, হাওলার, শিপন জানান, এখানে সবরকম আম দেখে কেনার সুযোগ রয়েছে। তাই আমরা এই আম ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশাল, ফেনী, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠাই। দিনে প্রায় দুই হাজার টনের মত আম বেচা-কেনা হয় এখানে। তাতে প্রায় ৮০লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এই আমগুলো রাজশাহীর বাঘা, আড়ানি, পুটিয়া, তাহেরপুর, নওগাঁর আত্রাই, রানীনগর, জয়পুর হাট, আক্কেলপুর, দিনাজপুরসহ দূর দূরান্ত থেকে আসে। আড়ৎ হওয়ায় এলাকার অনেক শ্রমিকও কাজের সুযোগ পেয়েছে। একজন শ্রমিক কমপক্ষে ছয় থেকে নয়শত টাকা মজুরি পায়। এখানে যে সমস্ত আম আসে তার মধ্যে আম হিসাবে খেরসা, কালুয়া, রানীপছন্দ, লকনা, কৃঞ্চকলী, আম্রপালী, ফজলি, আশ্বিনা, কৃষানভোগ, মোহনভোগ, গোপালভোগ, কুয়াপাহাড়ী, ফোনিয়া, মল্লিকা উল্লেখ্য। আড়ৎদার, পাইকার ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, বাগান মালিক সকলে বললেন এলাকার ব্যবসায়ীক পরিবেশ ভালো কিন্তু টাকা লেনদেন করার জন্য এখানে ব্যাংক নেই। তাই এলাকাবাসী ব্যাংক স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন জাতের আম বাজারে কেনাবেচা শুরু হওয়ায় জমে উঠেছে আমের বাজার। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার শঙ্কায় হাজার কোটি টাকার আম ব্যবসা নিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার বৈরী আবহাওয়া এবং আমের অনইয়ার হওয়ায় জেলায় প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদিত হবে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। জেলার বৃহত্তম আমবাজার কানসাট, শিবগঞ্জ বাজার, রহনপুর, মলি্লকপুর, ভোলাহাট ও জেলা শহরের সদরঘাট এখন ভোর হতে গভীর রাত পর্যন্ত আম চাষি ও ব্যাপারীদের ভিড়ে মুখরিত থাকছে। বাগান থেকে আম পাড়া, টুকরি তৈরি ও ট্রাকবোঝাই থেকে শুরু করে বিভিন্ন কর্মকা-ে মেতে উঠেছেন বাজারের লক্ষাধিক আম চাষি ও ব্যবসায়ী। সুস্বাদু আম কেনার জন্য ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, চৌমুহনী, সিলেট, খুলনাসহ বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যে এই আম প্রধান এলাকায় আসা শুরু করেছেন। লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও হাজার কোটি টাকার লেনদেনে চাঙা হয়ে উঠেছে জেলার গ্রামীণ অর্থনীতি।
কৃষি বিভাগের ধারণা, জেলায় ২ লাখ মেট্রিক টনের বেশি আম উৎপাদন হলে এর মূল্য হবে বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। এর পাশাপাশি পরিবহন, হোটেল ও শ্রমিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও ব্যবসা হবে প্রায় কোটি টাকার।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম জানান, শুরুতে অনাবৃষ্টি আর টানা খরায় বিপাকে পড়েছিল আম চাষিরা। কিন্তু সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় আম ব্যবসায়ীরা আমের ফলন নিয়ে বেজায় খুশি। জেলার ৫টি উপজেলায় ২৩ হাজার ৮শ' হেক্টর জমিতে প্রায় ১৭ লাখ ৮৫ হাজার আম গাছ রয়েছে। তবে আম ব্যবসায়ীরা জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টানা খরা আর অনাবৃষ্টিতে ক্ষতির মুখে পড়লেও এখন পর্যন্ত বড় ধরনের ঝড়ের মুখে পড়েনি আম বাগানগুলো।
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
আরও পড়ুন
-
আম সম্পর্কে ১৩টি অজানা মজাদার তথ্য
-
গাছে গাছে আগাম আমের মুকুল
-
রাজশাহী অঞ্চলে ইটভাটার সৃষ্ট দূষণে বাগানগুলোতে পচে যাচ্ছে কাঁচা আম
-
রাজশাহীর ল্যাংড়া আম এবার ইউরোপে রফতানি
-
আমে হপার পোকার আক্রমণ করেছে- কি করবেন
-
ফাল্গুনের হঠাৎ বৃষ্টি,কক্সবাজারে আমের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
-
অভিনব আম চাষ!
-
গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার ঝুঁকি আছে
-
আমের রোগ মহালাগা
-
ডায়াবেটিসবান্ধব আম উদ্ভাবন
-
আম নিয়ে নিষেধাজ্ঞাঃ আতঙ্কে আম ব্যাবসায়ীরা
-
মিষ্টি হয়েছে আশ্বিনা আম
-
মেহেরপুরে আম রপ্তানিতে হতাশা
-
ফরমালিনমুক্ত আম চেনার উপায়
-
আম ছাড়াই আমের জুস বিক্রি করছে প্রাণ গ্রুপ!
-
আম রফতানি বাড়ানোর পরিকল্পনা ভিয়েতনামের
-
বরেন্দ্র অঞ্চলে রফতানিযোগ্য রঙিন আম
-
জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধিত হতে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের হিমসাগর নামে ক্ষ্যাত ‘খিরসাপাত’ আম
-
টবে আম গাছ চাষ
-
বিষ মুক্ত আমের গল্প!
-
মৌসুম নয়, তবুও বাজারে মিলছে পাকা আম
-
আশ্বিনা আম প্রতি কেজি ৪০০ টাকা…কানসাট আমবাজারে
-
আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেও দেখা নেই আমের মুকুলের
-
রংপুরের বিখ্যাত হাড়িভাঙ্গা আম
-
পাকা আম খান, তবে বেশি নয়
-
ভোলাহাটে বছরজুড়ে পাওয়া যাবে আম
-
বারমাসী আমের বাগান
-
স্বপ্ন দেখাচ্ছে আম ফাউন্ডেশন
-
আম পাতার ১০টি বিস্ময়কর ঔষধি গুনাগুণ
-
০৬ মাস পর্যন্ত ঘরেই সংরক্ষণ করুন পাকা আম
-
কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম চিনবেন কীভাবে?
-
ইউরোপে আম রফতানির সম্ভাবনা
-
মাগুরায় নতুন জাতের আম “ইয়াসমিন” উদ্ভাবন
-
সাধারণ চাষীরা নয়, আমে ক্ষতিকর রাসায়নিক প্রয়োগে জড়িত অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট
-
বিষাক্ত কেমিক্যালে পাকছে আম, সাতক্ষিরার কালিগঞ্জে ৪৯ ক্যারেট বিনষ্ট
-
আমের গুটি ঝরার কারণ ও প্রতিরোধে করণীয়
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ল্যাংড়ার চেয়ে সুমিষ্ট নতুন জাতের আমের সন্ধান
-
আম সুরক্ষায় ফ্রুট ব্যাগিং প্রযুক্তি
-
প্রচারের অভাবে পাচ্ছে না পরিচিতি নওগাঁয় আম
-
আম ও কাঁঠাল গাছে মুকুল ঝরা রোধে করণীয়
-
বগুড়ায় বাড়ছে বাণিজ্যিক আম উৎপাদন
-
আম খেয়ে এক পরিবারের ৯ জন হাসপাতালে
-
খানসামায় মুকুলে ভরে গেছে আম গাছ, বাম্পার ফলনের আশা
-
আমের ভালো ফলন পেতে রোগবালাই প্রতিকার
-
বাচ্চাদের জন্য আমের সহজ রেসিপিগুলি
-
এক গাছে ২১৭ জাতের আম!
-
একটি অর্গানিক আম বাগান
-
ভারতে আম দিয়ে মদ তৈরী শুরু হয়েছে
-
মাছি পোকা থেকে আম রক্ষা করবেন যেভাবে
-
মধুময় ফল আম
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল -
Nice post, very interesting. Good work , If you have…
-
এই আম কোন মাসে পাকে
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
How can this be done?
-
মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
-
হিমসাগর কত করে??
-
5kg am lak ba gser
-
আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
-
খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
-
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
-
চিন্তা করা যায়??
-
কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
-
আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?
