পৌষেও মিলবে সুমিষ্ট আম
জৈষ্ঠ্য মাসের মধুফল আম যদি পৌষের শিশিরে ভিজে থাকে তাহলে একটু আশ্চর্য হতেই হবে। চোখ কপালে উঠলেও সত্যটা এমনি যে, বগুড়ায় এখন বারোমাসি আম চাষ শুরু হয়েছে। জেলার শেরপুর উপজেলায় ৩ বন্ধু মিলে প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে প্রায় ৯ হাজার বারোমাস আম চাষ করে ফলন পেতে যাচ্ছে। শীতকালেও আম চাষে সফলতা পাওয়ায় এলাকায় আম দেখতে ভিড় করছে সাধারণ মানুষ।
বারোমাসি আম বাগানটি গড়ে উঠেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের মাগুড়াতাইর গ্রামে। প্রায় চল্লিশ বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই মিশ্র ফলের বাগান। এরমধ্যে আঠার বিঘাতে জমিতে বারোমাসি আম চাষ করা হয়েছে। সেখানে নয় হাজার আমের গাছ রয়েছে। সেসব গাছে মুকুল ধরেছে। আবার কোন কোন গাছে আম ঝুলছে। কোন গাছে কাঁচা আবার কোন গাছে পাকা আম। বারোমাসি এই বাগানচি গড়ে তুলেছে তিন বন্ধু মামুন রশিদ, সোহেল রেজা ও শহিদুল। এরমধ্যে মামুন ও সোহেল মাস্টার্স পাস করেছেন। আর এইচএসসি পাস করেছেন শহিদুল। বাগানটির নাম দিয়েছে ‘ফুল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড’। এই ফার্মে আম ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার শীত সবজি, পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফলের চাষও করে।
তিন বন্ধু মামুন, সোহেল ও শহিদুল জানান, ২০০৫ সালে ছোট পরিসরে নিজেদের পাঁচ বিঘা জমির ওপর বাগানটি গড়ে তোলা হয়। পরবর্তীতে আরও ৩৫বিঘা বিশ বছরের জন্য জমি লিজ নিয়ে বাগানের পরিসর বাড়ানো হয়। তাদের বাগানে প্রায় ১৫ হাজার রকমারি ফলমূলের গাছ রয়েছে। এরমধ্যে বারোমাসি আম কার্টিমন ও বারি-১১, মাল্টা, পিয়ারা ও কুল। অন্যান্য ফলের উৎপাদন ভাল হলেও বর্তমানে বারোমাসি আম বিক্রিতে ব্যস্ত তারা। অসময়ে পাওয়া এই ফলের চাহিদাও বাজারে অনেক বেশি। তাই এই বগুড়া জেলা ছাড়াও আশপাশের জেলাগুলোতেও এই আম বিক্রি হচ্ছে।
পাইকারি আগে তিনশ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এখন পাঁচশ’ টাকায় বিক্রি করছেন। ইতিমধ্যে দুই লাখ টাকার আম বিক্রি করেছেন। আরও অন্তত এক লাখ টাকার আম বাগানে রয়েছে। সবমিলে এখন লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছেন। অনেকেই বারোমাসি আমের চারা কিনতে আসছেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এই মিশ্র ফলের বাগান থেকে এক কোটি টাকার আম, কুল ও পিয়ারা বিক্রি করতে পারবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
মিশ্র বাগানের উদ্যোক্তাদের একজন মামুনুর রশিদ জানান, তারা কৃষক পরিবারের সন্তান। তাই ছোট বেলা থেকেই কৃষিকাজের তাদের প্রতি আগ্রহ ছিল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেশসেরা কৃষক হিসেবে নির্বাচিত করে মামুনকে থাইল্যান্ডে ফুড প্রডাকশন ও ম্যানেজমেন্টের ওপর প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। তিনি সেখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে আসেন। এরইমধ্যে সোহেল রেজা বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমী (আরডিএ) থেকে বারোমাসি আম চাষের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। এছাড়া আরেক উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম জীবিকার তাগিদে মালয়েশিয়ায় গেলেও ২০০১ সালে দেশে ফেরেন। পরবর্তীতে এই তিন বন্ধু যৌথভাবে বিভিন্ন নার্সারি থেকে চারা সংগ্রহ করে নিজেদের পাঁচ বিঘা জমির ওপর মিশ্র ফলের বাগান গড়ে তোলেন। এরপর আরও জমি লিজ নিয়ে সেখানে লাগান বারোমাসি আম, পিয়ারা, মাল্টা ও কুল গাছের চারা। সময়ের ব্যবধানে বাগানটিতে লাগানো রকমারি ফলমূলের পনের হাজার গাছ রয়েছে। সেসব গাছে উৎপাদিত ফল বিক্রিও শুরু হয়েছে। তবে তাদের মিশ্র ফলের বাগানের বারোমাসি আম বেশ সাড়া জাগিয়েছে।
বগুড়া হর্টিকালচার সেন্টারের উপ-পরিচালক আব্দুর রহিম জানান, বারোমাসি আম চাষ বাড়ছে। তাই চাষীদের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেকেই এই জাতের ফলের বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন। যার দৃষ্টান্ত হচ্ছেন এই তিন শিক্ষিত তরুণ উদ্যোক্তা। এই বারোমাসি আমের বাগান করে নিজেরা বেকারত্ব ঘুচিয়েছেন।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার জানান, এ উপজেলায় মিশ্র ফলের বাগান বাড়ছে। তার দপ্তর থেকে পরামর্শসহ সব ধরণের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় মাগুড়াতাইর গ্রামটিতে গড়ে ওঠা ফুল এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামের মিশ্র ফলের বাগানেও একইভাবে সহযোগিতা করছেন। শিক্ষিত তিন বন্ধুর এই মিশ্র ফলের বাগানটি মডেল হতে পারে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বিভিন্ন জাতের আম চেনার উপায়
চলতি মাসে বাজারে পাওয়া যাবে পাকা আম। সুস্বাদু ও মিষ্টি রসালো ফল আম সবারই পছন্দ। তবে বাজার থেকে আম কেনার পর অনেকে ক্রেতা বুঝতে পারেন না তিনি কোন আম কিনছেন।
কিনেছেন গোপালভোগ কিন্তু বাসায় এসে জানা গেলো এটি লক্ষণভোগ। আবার দেখা যায় ফজলীর জেনে কিনে এনেছেন আশ্বিনা।
অনেকেই আম কিনতে গিয়ে এসব সমস্যার সম্মুখীন হন।তাই পছন্দের আম কিনতে চাইলে আম চেনা জরুরি।
আসুন জেনে নিই কোন আম দেখতে কেমন?
গোপালভোগ
গোপালভোগের গায়ে হলুদ ছোপ ছোপ দাগ আছে। এটির নিচের দিকে একটু সরু হয়ে থাকে। এই আম পাকার পর হলুদ হয়ে যায়। মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে পাওয়া যায় এই আম।।
রাণী পছন্দ
রাণী পছন্দ দেখতে অনেকটা গোপালভোগের মতই। এর গায়েও হলুদ দাগ আছে কিন্তু আকারে ছোট। ফলে গোপালভোগের সঙ্গে রানী পছন্দ মেশালে আলাদা করা কষ্টকর।
খিরসাপাত আম
এই আম বাজারে পাওয়া যায় মে মাসের শেষে বা জুনের প্রথম সপ্তাহে। খুবই মিষ্টি খিরসাপাত আম অনেকে হিমসাগর বলে বিক্রি করেন। এই আম আকারে একটু বড় হয়। আমে হালকা দাগ আছে।
আশ্বিনা ও ফজলী
আশ্বিনা আর ফজলী আম দেখতে একই রকম। তবে আশ্বিনা আম একটু বেশি সবুজ ও ফজলী আম একটু হলুদ হয়। আশ্বিনার একটু পেট মোটা হয় ও ফজলী দেখতে লম্বা ধরনের হয়।
বারি আম-২ বা লক্ষণভোগ
বারি আম-২ বা লক্ষণভোগ চেনার সহজ উপায় হলো নাক আছে মাঝামাঝি স্থানে। মিষ্টি কম ও পাকলে হলুদ রং আসে। সাধারণত জুন মাসের শুরুর দিকে এই আম বাজারে পা্ওয়া যায়।
রুপালী আম বা আম্রপালি
রুপালী আম বা আম্রপালি নিচের দিকে একটু সুঁচালো, উপরে একটু গোল। এই আমরা মিষ্টি বেশি ও স্বাদে ভিন্নরকম।
ল্যাংড়া
ল্যাংড়া আম দেখতে কিছুটা গোলাকার ও মসৃণ। এটির নাকটি দেখা যায় নিচের দিকে। এর চামড়া খুবই পাতলা।
পরিপক্ক আম যেভাবে চিনবেন
পাকা আম সাধারণ হলুদাভ হয় এবং পানিতে রাখলে ডুবে যায়।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
আরও পড়ুন
-
বাম্পার ফলনে হাঁড়িভাঙ্গা আমে নতুন স্বপ্ন
-
এবছর করনার কারনে বিদেশে আম রপ্তানিতে অনিশ্চয়তা
-
ভাল আম চেনার সহজ উপায়
-
স্বপ্ন দেখাচ্ছে আম ফাউন্ডেশন
-
গিনেজস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে সবচেয়ে বড় আমের রেকর্ড
-
চার দিনে ১৫৯টি আমের চারা নষ্ট, বাগান নিয়ে উদ্বেগে চাষিরা
-
আমের প্রধান ক্ষতিকারক পোকাসমুহ ও তাদের দমন ব্যবস্থাপনা
-
বাংলাদেশের আম রপ্তানির সম্ভাবনা
-
ফকিরহাটে আমের মুকুলের মৌ মৌ গন্ধ
-
ক্যামিকেলমুক্ত পরিপক্ক আম কীভাবে চিনবেন? khaasfood এর পেজ থেকে
-
রঙিন আমের বাগান
-
আম মিলবে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ২০ মে থেকে
-
মৌসুমি রাজশাহীর আম
-
মৌসুমী ফল আম
-
তালতলীতে গাছে গাছে আমের মুকুলের সমারোহ
-
বাংলাদেশের বারোমাসি আম- বারি আম ১১ এর বিশেষ কিছু বিশিষ্ট্য
-
চীন ‘মহাশূন্যের আম’ উৎপাদন করেছে
-
আমে চাঙ্গা অর্থনীতি
-
ভারত ছাড়া কোন দেশে সবচেয়ে বেশি আম হয় জানেন?
-
৩ স্বাদের কাঁচা আম ভর্তা
-
ফরমালিন মেশানো আম খেয়ে একই পরিবারের চারজন হাসপাতালে
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ফাউন্ডেশের আমবাগানের ভিতর অবস্থিত একটি কবরস্থান হতে শিবমূর্তি উদ্ধার
-
চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাজারজাতকরণে ‘ম্যাংগো ক্যালেন্ডার প্রনয়ণ’
-
সৈকতে ‘রুপালি’ আম
-
আম ও আমতলা নিয়ে মুর্শিদাবাদের গ্রাম্য জীবন
-
কুমিল্লার চারপাশে গাছে গাছে আমের মুকুল
-
বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে আম চাষ বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা
-
মানুষ অতীতকালে আম পাকাতে বরুন গাছের পাতা ব্যবহার করতেন
-
আমে আর পোকা ধরবে না, নষ্টও হবে না
-
কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো আম চিনবেন কীভাবে?
-
আমের তেল mango Oil
-
ফ্রুট ব্যাগিং: আমে কাঙ্ক্ষিত রং, উল্লসিত আমচাষি
-
৩ লাখ মেট্রিক টন আম উৎপাদনের আশা
-
দিনের কোন সময়ে আম খাবেন
-
আম বাছাইয়ে কড়াকড়ি, ৪০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা
-
চার (০৪) কেজি ওজনের আম!
-
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আম বাগানে থাকবে পুলিশ
-
আমের কাঙ্ক্ষিত ফলন পেতে মুকুলের যত্নে করণীয় ২০২০
-
জৈব ও অর্গানিক উপায়ে আম চাষ পদ্ধতি
-
ক্ষিরসাপাত না ক্ষিরসাপাতি না খিরসাপাত নাকি খিরসাপাতি- কোনটা ঠিক?
-
আম সম্পর্কে ১৩টি অজানা মজাদার তথ্য
-
আম চাষিদের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি ৩শ’ কোটি টাকা
-
বারোমাসি আম
-
মিঠাপুকুরে আম চাষে আব্দুস সালামের সাফল্য
-
সুবাস ছড়াচ্ছে স্বর্ণালি মুকুল
-
আম গাছের দৈহিক বিকৃতি রোগের খুটিনাটি
-
জেনে নিন ফলের রাজা আম চাষের টুকিটাকি নানা জরুরি বিষয়
-
কানসাটে আমের দেশে আম কুড়োতে
-
আমদানীকৃত ফলে রাসায়নিক সনাক্ত করতে বন্দরে 'কেমিক্যাল টেস্টিং ইউনিট' বসানোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ
-
আমের গুটি ঝরা রোধে করণীয়
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল -
Nice post, very interesting. Good work , If you have…
-
এই আম কোন মাসে পাকে
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
-
How can this be done?
-
মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
-
হিমসাগর কত করে??
-
5kg am lak ba gser
-
আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
-
খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
-
ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
-
চিন্তা করা যায়??
-
কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
-
আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?
