x 
Empty Product

ফরমালিনের বিকল্প চিংড়ির খোসা

User Rating:  / 0
PoorBest 

বাজারে আম সহ মাছ, ফল, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণে যখন হরহামেশাই ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ফরমালিন, ঠিক তখনই এর বিকল্প আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মদ খান।

বাজারে আম সহ মাছ, ফল, সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য সংরক্ষণে যখন হরহামেশাই ব্যবহার হচ্ছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান ফরমালিন, ঠিক তখনই এর বিকল্প আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মোবারক আহম্মদ খান।

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের প্রধান এই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তার দীর্ঘ গবেষণায় আবিষ্কার করেছেন, খাদ্য সংরক্ষণে ফরমালিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যাবে কাইটোসেন। চিংড়ির ফেলে দেওয়া খোসা থেকে প্রাকৃতিকভাবেই তৈরি হয় এ কাইটোসেন। এটি ব্যয়সাশ্রয়ী এবং মানবদেহের জন্য ক্ষতিকরও নয়। ড. মোবারক এরই মধ্যে বিভিন্ন রকম ফল ও সবজি সংরক্ষণে চিংড়ির খোসা থেকে তৈরি কাইটোসেন ব্যবহার করে সফল হয়েছেন। এখন তার এ গবেষণা প্রয়োগ করা হবে মাছের ওপর। তার পর শুরু হবে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার। তিন বছর ধরে গবেষণার পর তিনি কাইটোসেন ব্যবহার করে আম দুই থেকে তিন সপ্তাহ, লিচু ১২ থেকে ১৩ দিন, আনারস ১০ থেকে ১২ দিন, করলা হিমায়িতভাবে প্রায় ১৮ দিন এবং টমেটো ২১ দিন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছেন।

এতে খাদ্যের গুণগত মান, আকৃতি, রঙ ও স্বাদে পরিবর্তন হবে না।

গত চার বছরে এক হাজার কেজির বেশি ফরমালিন আমদানিতে বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হয়েছে উল্লেখ করে ড. মোবারক বলেন, দেশীয় কাঁচামাল ব্যবহার করেই চাহিদা অনুযায়ী কাইটোসেন উৎপাদন সম্ভব। বাণিজ্যিকভাবে প্রতি কেজি আমে এক টাকার কাইটোসেন যথেষ্ট। সবজি সংরক্ষণে খরচ পড়বে ৪০ পয়সা। প্রতি কেজি চিংড়ি থেকে ৬০ গ্রাম খোসা পাওয়া যায়। সে হিসাবে ছয় কেজি চিংড়ির খোসা থেকে এক কেজি কাইটোসেন তৈরি হবে, যা তৈরিতে খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে রাসায়নিকভাবে কাইটোসেন তৈরিতে এক লাখ টাকা খরচ হয়। এটি তৈরিতে চিংড়ির খোসা ধোয়ার জন্য ৩ শতাংশ হারে সোডিয়াম হাইড্রো-অক্সাইড (কস্টিক সোডা) ব্যবহার করা হয়। খোসা ধুয়ে পরিষ্কারের পর তৈরি করা হয় কাইটিন। গবেষণায় তিনি গামা রশ্মির রেডিয়েশনের মাধ্যমে কাইটিন থেকে কাইটোসেন তৈরি করেন। খাদ্য সংরক্ষণে রেডিয়েশন প্রযুক্তি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবি্লউএইচও) ও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (ইউএসএফডিএ) অনুমোদিত একটি নিরাপদ প্রক্রিয়া। অন্য রাসায়নিক ব্যবহার হয় না বলে এতে পরিবেশ দূষণ হয় না।ড. মোবারক আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সম্প্রতি এক বৈঠকে তার আবিষ্কারের বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। পরে এটি বাস্তবায়নে তিনিসহ এ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব, দপ্তরের মহাপরিচালক, বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের নিয়ে ১৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির বৈঠকে বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে খতিয়ে দেখতে অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে। পাশাপাশি মাছের ওপর কাজ শুরু করার জন্যও অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে বছরে গড়ে আড়াই টন চিংড়ি উৎপাদিত হয়। এ থেকে খোসা হয় ১৫ হাজার টন। এ থেকে কাইটোসেন উৎপাদন হবে ২৫০ টন। খাদ্য সংরক্ষণের জন্য ওই পরিমাণকে যথেষ্ট মনে করেন বিজ্ঞানীরা।বাংলাদেশে কাইটোসেন তৈরি প্রক্রিয়া পেটেন্ট করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছেন বলেও জানান ড. মোবারক আহম্মদ খান।

Leave your comments

0
terms and condition.
  • No comments found