নিচু জায়গায় আম বাগান তৈরির কলাকৌশল

User Rating:  / 0
PoorBest 

বাংলাদেশে আম একটি অর্থকরী ফসল। বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমানে এটি একটি আদর্শ ফল। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আম বাগান স্থাবর সম্পত্তির মতো। কারণ বাগান থেকে বছরের পর বছর আয় আসতে থাকে।

বাংলাদেশে আম একটি অর্থকরী ফসল। বৈচিত্র্যপূর্ণ ব্যবহার, স্বাদ-গন্ধ ও পুষ্টিমানে এটি একটি আদর্শ ফল। তাই আমকে ফলের রাজা বলা হয়। আম বাগান স্থাবর সম্পত্তির মতো। কারণ বাগান থেকে বছরের পর বছর আয় আসতে থাকে।

বাংলাদেশে ৭০ হাজার হেক্টর জমি থেকে ৪ লাখ ৯৪ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদন হয় (বিবিএস, ২০০৯)। লক্ষ করা গেছে, অনেক আম বাগান নিচু জমিতে হওয়ায় বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির ফলে জলাবদ্ধতায় এবং কখনো কখনো বন্যার পানির জন্য আমগাছ মারা যায়। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময় বর্ষাকালে। তাই নিচু জায়গায় বর্গাকার পদ্ধতিতে আম বাগান তৈরিতে নিম্নলিখিত কলাকৌশল গ্রহণ করা দরকার।



ক. ইনসিটু গ্রাফটিং
যখন স্বস্থানে আঁটি থেকে চারা গজানোর পর সেই চারায় কলম বাধা হয়। এ ৰেত্রে তৈরি কলমের গাছ প্রতিস্থাপন বা পুনরায় রোপণের দরকার হয় না। অর্থাৎ জোড়া লাগানোর পরে কলমের চারাটি স্বস্থানেই স্থানীয়ভাবে বেড়ে উঠে এবং ফুল-ফল দিতে থাকে। যেসব জায়গা নিচু অর্থাৎ বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি জমে থাকে অথবা কখনো কখনো বন্যার পানি উঠে, সেসব জায়গায় প্রথমেই জমির নকশা অনুযায়ী কেবলমাত্র আঁটি লাগানোর পয়েন্ট এর চতুর্দিকে (১.৫-২.০ হাত পর্যন্ত) মাটি দ্বারা ঢিবি তৈরি এবং ঢিবি পরিমাণ মতো অর্থাৎ দাঁড়ানো পানি থেকে উঁচু করে গাছের জন্য স্থায়ী জায়গা তৈরি করতে হবে। তারপর প্রথম বছর আঁটি স্থায়ী জায়গাগুলোতে লাগাতে হবে। চারা গজালে পছন্দ মতো বড় (৪-৫ ফুট উঁচু) করে সেই চারায় আমের ভালো জাতের সায়ন নিয়ে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করতে হবে। এ পদ্ধতিতে বাগান তৈরিতে সময় বেশি লাগে।



প্রযুক্তির সুবিধাজনক দিক
১.     এতে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
২.     তৈরি কলমের গাছ স্থানান্তর করে অন্যত্র লাগানোর দরকার হয় না। বলে এর সফলতা অনেক বেশি।
৩.    অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। বেশি টাকা দিয়ে কলমের চারা না কিনে অল্প টাকায় আঁটি কিনে তার থেকে রুট স্টক তৈরি করে এবং পরে সেখানে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করে বাগান করা সম্ভব।
৪.     কলমের জোড় উঁচুতে (পছন্দ মতো ৪-৫ ফুট উপরে) থাকায় জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় না।
৫.     উঁচুতে কলম করা হয় বিধায় গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচার প্রয়োজন হয় না।



প্রযুক্তির জরুরি দিকগুলো
১.    আঁটি সংগ্রহ করতে হয়।
২.    আঁটি থেকে কাঙ্ক্ষিত রুটস্টক তৈরি করতে হয়।
৩.    কাঙ্ক্ষিত সায়ন সংগ্রহ করতে হয়।
৪.    কলম বাঁধায় দক্ষ ও এরকম লোক খুঁজে বের করতে হয়।



খ. মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং

এ ক্ষেত্রে স্বস্থানে প্রথমে আঁটি ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে অন্য জায়গায় অর্থাৎ কোনো ফার্ম বা নার্সারি থেকে গুটি গাছ (সাধারণত ৪-৫ ফুট উঁচু যাতে কমপক্ষে ২/৩টি শাখা-প্রশাখা থাকে) এনে লাগিয়ে পরে সেই চারায় পছন্দের সায়ন দ্বারা ভিনিয়ার কলম বাঁধা এবং অন্যান্য কাজকর্ম সব ইনসিটু গ্রাফটিং এর মতোই। চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনেক জায়গায় এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে আম গাছ লাগিয়ে বাগান তৈরি করা হয়েছে। আজকাল বাজারে সঠিক জাতের চারা পাওয়া খুবই কঠিন। এক জাতের চারা নিয়ে লাগানোর পরে অন্য জাতের গাছ হয়ে যায়। এভাবে জনগণ অহরহ প্রতারিত হচ্ছে। এমতাবস্থায় মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং প্রযুক্তিতে আম বাগান তৈরি খুবই ফলপ্রসূ হবে।



প্রযুক্তির সুবিধাজনক দিক
১.  এতে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে না বললেই চলে।
২.   তৈরি কলমের গাছ স্থানান্তর করে অন্যত্র লাগানোর দরকার হয় না।
৩.   বেশি টাকা দিয়ে কলমের চারা না কিনে অল্প টাকায় পছন্দের সায়ন ও আঁটির গাছ (রুটস্টক) কিনে পরে সেখানে ভিনিয়ার গ্রাফটিং করে বাগান করা সম্ভব।
৪.    কলমের জোড় উঁচুতে (পছন্দ মতো ৪-৫ ফুট উপরে) থাকায় জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রানৱ হয় না।
৫.    উঁচুতে কলম করা হয় বিধায় গরু-ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের তৈরি খাঁচার প্রয়োজন হয় না।
৬.    বড় গুটি গাছে কলম করা হয় বিধায় অল্প সময়ে কম খরচে বাগান তৈরি হয় এবং গাছগুলো দেখতে একই রকম হয়।



প্রযুক্তির জরুরি দিকগুলো
১.    পছন্দের গুটি গাছ অর্থাৎ রুটস্টক সংগ্রহ করতে হয়।
২.    কাঙ্ক্ষিত সায়ন সংগ্রহ করতে হয়।
৩.    কলম বাঁধায় দক্ষ লোকের প্রয়োজন হয়।



গ. মাটি ঢিবিতে কলমের চারা রোপণ (মাটিকচারো)

যখন বাজার, নার্সারি কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পছন্দের কলমের চারা ক্রয় করে এনে স্বস্থানে বা নির্ধারিত জায়গায় নকশা অনুযায়ী সরাসরি লাগানো হয়। এক্ষেত্রেও একই রকম মাটির ঢিবি তৈরি করা হয়। তবে চারাটি বড় (৪-৫ ফুট উঁচু) এবং কলমের জোড়ের স্থানটি বেশ উপরে হলে ভালো হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং রাজশাহীর নিচু জায়গায়গুলোতে এ প্রযুক্তিতে বহু আম বাগান গড়ে উঠেছে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলে আম ধানের জমিতে অনেক আম বাগান গড়ে উঠেছে। দেখা গেছে, অনেক জায়গায় মাটির ঢিবি তৈরির নিয়ম মানা হয়নি। অর্থাৎ গাছের গোড়ায় অল্প মাটি দেয়া হয়েছে। ফলে গাছের রুট সিস্টেম ততটা উন্নত না হওয়ায় গাছের বৃদ্ধিও ভালো হয়নি। গাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য অর্থাৎ একটি ভালো বাগান তৈরির জন্য নিয়ম মেনে মাটির ঢিবি তৈরি করা উচিত। ২০০২ সনে জেলা কারাগার চাঁপাইনবাবগঞ্জ কর্তৃপক্ষ অফিসিয়াল চিঠির মাধ্যমে কারাগারের অভ্যন্তরে নিচু জায়গায় বাগান তৈরির পরামর্শ চাইলে মডিফাইড ইনসিটু গ্রাফটিং অথবা মাটিকচারো যেকোনো একটি পদ্ধতিতে বাগান তৈরির পরামর্শ দেয়া হয়। এতে বেশ সুফল পাওয়া গেছে।



প্রযুক্তি সুবিধাজনক দিক
১.    কম সময়ে বাগান তৈরি করা যায়।
২.    কাঙ্ক্ষিত সায়ন এবং রম্নট স্টক সংগ্রহ করতে হয় না।
৩.    কলম বাঁধায় দৰ লোকের প্রয়োজন হয় না।



প্রযুক্তির অসুবিধা
১.    প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে।
২.    খরচ বেশি পড়ে।
৩.    চারা ছোট হলে করমের জোড় নিচে থাকে। ফলে জলাবদ্ধতায় রোগ জীবাণু দ্বারা আক্রানৱ হয়।



এতোক্ষণ নিচু জায়গায় আম বাগান তৈরির কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হলো। আম বাগান তৈরি সম্পর্কে আরো জানার থাকলে লেখকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। এখন আমগাছের নানাবিধ সমস্যার মধ্যে ‘অন-ইয়ার’ ও ‘অফ-ইয়ার’ সমস্যা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।



আমগাছের ‘অন-ইয়ার’ ও ‘অফ-ইয়ার’ সমস্যা ও প্রতিকার
আমগাছের বহু সমস্যার মধ্যে একটি বড় সমস্যা হলো প্রতি বছর ফুল ও ফল না আসা। দেখা গেছে, একেবারেই ফুল হয় না বা হলেও কোনো কোনো বছর খুব কম হয়। যখন অনেক গাছে এক বছর খুব ফুল হয় আর পরের বছর একেবারেই হয় না বা খুব সামান্য হয় এবং তৃতীয় বছর আবার খুব বেশি ফুল আর চতুর্থ বছর কিছুই না বা কম অর্থাৎ এরা একটু ছন্দের মতো চলে। এই রকম হলে বলা হয় ‘অলটারনেট বা বায়িনিয়াল বেয়ারিং’। আবার যেসব গাছে হয়তো এক বছর খুব বেশি ফুল হলো, তারপর দু-তিন বছর হলো না বা কম হলো, কিংবা পরপর দু’তিন বছর বেশ ফুল হলো তারপর এক বছর বা কয়েক বছর  বন্ধ থাকে অর্থাৎ এরা একটু এলোপাতাড়ি ধরনের। এদের বলা হয় ‘ইরেগুলার বেয়ারার’। এই দুটি সমস্যা অনেক আমগাছে দেখা যায়। যে বছর খুব বেশি ফুল হয়, সেই বছরটিকে উদ্যান বিজ্ঞানে বলা  হয় ‘অন ইয়ার’, আর বিনা ফলন বা কম ফলনের বছরকে বলা হয় ‘অফ-ইয়ার’।



সম্ভাব্য কারণ

ক. জাতের বৈশিষ্ট্য- আমের যে জাতগুলো কেবল শাখার অগ্রভাগে ফুল ধারণ করে সে জাতগুলোর পর্যায় ক্রমিক অর্থাৎ এক বছর অন্তর ফল উৎপাদন হয়। এই সমস্যা সব জাতের আমের মধ্যে দেখা যায় না কিন্তু কিছু ভালো আমের জাতের মধ্যে যেমন ল্যাংড়া, খিরসাপাত, গোপালভোগ ইত্যাদিতে সমস্যাটি ভালোভাবে দেখা যায়। আর কিছু কিছু আমের জাত আছে যাদের ‘অফ ইয়ারে’ ফুল ও ফল হয়, তবে অপেৰাকৃত কম যেমন- ফজলি। আবার যে জাতগুলো শাখার অগ্রভাবে প্রথম বছর ও পরের বছর শাখার কৰে পুষ্পমুকুল উৎপন্ন করতে পারে সে জাতগুলো নিয়মিতভাবে কম/বেশি ফল উৎপাদন করতে পারে, যেমন- বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি।



খ. গাছের বয়স- যেসব জাতের মধ্যে সমস্যাটি দেখা যায় যেমন- ল্যাংড়া। কিন্তু যখন ওই ল্যাংড়া গাছের বয়স কম তখন সমস্যাটি থাকে না অর্থাৎ প্রথম দিকে প্রতি বারেই ফুল হয় কিন্তু সাধারণত ১৫-২০ বছর বয়সের পর তারা এই গুণটি হারিয়ে ফেলে।



গ. গাছের ডালের বয়স : মুকুল ধরার জন্য ডালের বয়স কমপৰে ৪-৫ মাস হওয়া দরকার। তবে যেসব ডালের বয়স ৮-১০ মাসের হয় সেসব ডালে বেশি মুকুল ধরে।



ঘ. পাতাওয়ালা মুকুল : আমের মুকুল বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ডালের ডগায় আসে এবং ওপর দিকে আস্তে আস্তে সুচালো হয়ে যায়, যা দেখতে পিরামিডের মতো। উপ-শাখাগুলো ফুলে ভরা থাকে, তাতে পাতা থাকে না। কিন্তু কিছু কিছু জাতের গাছ আছে, যাদের মুকুলে শুধু ফুলই থাকে না, সেই সঙ্গে পাতাও থাকে। বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদিতে বেশি পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। ফজলি গাছেও কিছুসংখ্যক পাতাওয়ালা মুকুল হয়, তাই এই জাতগুলো প্রায় প্রতি বছর মোটামুটি ফল আসে। অন্যান্য জাতেও মাঝে মধ্যে কিছু কিছু পাতাওয়ালা মুকুল দেখা যায়। পাতাওয়ালা প্যানিকলকে মিঙড প্যানিকল বলে।



ঙ. ডালে শর্করা ও নাইট্রোজেনের অনুপাত : আমের একটি ডালে মুকুল আসতে হলে, ফুল আসার আগে ডালটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে শর্করা ও নাইট্রোজেন দুই-ই থাকতে হবে আর শুধু তাই নয়, শর্করার ভাগ নাইট্রোজেনের ভাগের চেয়ে যথেষ্ট বেশি থাকতে হবে তবেই মুকুল আসবে। আর যদি দুটির ভাগ সমান হয় বা বিশেষ করে ডালটির নাইট্রোজেনের মাত্রা শর্করার চেয়ে বেশি হয়, তাহলে ঐ ডালটির ডগায়, বসন্তকালে মুকুল আসার বদলে পাতা এসে যাবে।



চ. উদ্ভিদ হরমোনের বৈষম্য (Phytohormone) : আম গাছের এই সমস্যাটির জন্য উদ্ভিদ হরমোন ‘অঙিন’, ‘জিম্বেরেলিন’ ও বিশেষ করে ‘গ্রোথ ইনহিবিটর’ জাতীয় হরমোনগুলো দায়ী বলে মনে করা হয়।



প্রতিকার

ক. বাণিজ্যিক জাত : যেমন- গোপালভোগ, ল্যাংড়া, খিরসাপাত, আশ্বিনা ইত্যাদির অলটারনেট বেয়ারিং হ্যাবিট আছে এবং বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৩, বারি আম-৪ ইত্যাদি রেগুলার বেয়ারর জাত। তাই বাগানে শুধু ‘অলটারনেট বেয়ারার’ জাতের গাছ না লাগিয়ে, অন্তত কিছুসংখ্যক ‘রেগুলার বেয়ারার’ জাতও লাগানো উচিত। এতে প্রতি বছরই বাগান থেকে কিছু না কিছু ফলন পাওয়া যাবে।



খ. বাগানের গাছগুলোকে অধিক উৎপাদনক্ষম করার জন্য অবশ্যই আম বাগান বছরে ৩ বার বর্ষার আগে, বর্ষার পরে ও শীতকালে লাঙল, পাওয়ার টিলার অথবা কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে গভীর চাষাবাদ করতে হবে। ফলে বাগানের আগাছা মারা যাবে এবং মাটির সাথে মিশে জৈবসারে পরিণত হবে। মাটির ভেতরকার পোকামাকড়ও মরে জৈব পদার্থ হিসেবে মাটিতে যোগ হবে। তাছাড়া মাটির আর্দ্রতা ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পুষ্টি উপাদানগুলো গাছের গ্রহণের উপযোগী হবে।



গ. গাছের বৃদ্ধি ও বেশি ফলনের জন্য সঠিক সময়ে, সঠিক পরিমাণে ও সঠিক পদ্ধতিতে সার ও সেচ দেয়া আবশ্যক। বিভিন্ন বয়সের আম গাছে সার প্রয়োগের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি ছক-১ এ দেখানো হলো।



বছরে দু’বার সার প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার শুরুতে একবার এবং বর্ষার শেষে আর একবার। একবারেও সব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। তবে ভাগ করে প্রয়োগ করলে বেশি লাভবান হওয়া যায়। মাটিতে প্রয়োজনীয় পানি/রসের অভাব হলে সার প্রয়োগের পর সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। ফিডার রম্নটগুলো গাছের গোড়া থেকে দূরে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে গাছের বয়স অনুযায়ী এ দূরত্ব (মাঝামাঝি থেকে বড় গাছ) ১.৫-৩.০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। তবে ছোট চারা গাছের ক্ষেত্রে ১৫-৩০ সেমি. হতে পারে। কাজেই যেখানে ফিডার রুটটগুলো থাকে সেখানেই সার দিতে হবে। দুভাবে সার দেয়া যায়। নালা পদ্ধতিতে গাছের গোড়া থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী ২-৩.০ মিটার দূরে ৩০ সেমি. প্রশস্ত ও ১৫-২০ সেমি. গভীর করে চক্রাকারে নালা তৈরি করে তাতে সার দিতে হবে। পরে মাটি দ্বারা ঢেকে দিতে হবে। অথবা দুপুর বেলা যে জায়গায় গাছের ছায়া পড়ে সেই জায়গায় সার ছিটিয়ে কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। কোদাল দ্বারা কুপানোর সময় সোজা না কুপিয়ে পার্শ্বভাবে কোপাতে হবে যাতে করে গাছের শিকড় না কাটে।



ঘ. বাগানে নিয়মিতভাবে সেচ দিতে হবে। জমিতে কখনই যেন রসের টান না পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, ফলন্ত আম গাছে দুইবার বেসিন পদ্ধতিতে সেচ দেয়া প্রয়োজন। প্রথমবার প্যানিকল যখন ৬-৮ ইঞ্চি (১৫-২০ সেমি.) লম্বা হয় এবং দ্বিতীয়বার যখন ফল মটর দানার মতো হয়। এতে ফল এর আকার, মান ও ফলন ভালো হয়। প্রচণ্ড খরা দেখা দিলে এবং ফল ঝরার পরিমাণ বেশি হলে তখনও সেচ দিতে হবে। গাছে ফুল আসার কমপক্ষে ২-৩ মাস আগে সেচ দেয়া বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সময় বাড ডিফারেনশিয়েশন হয়। ফলে গাছ অল্প পানির অভাব পছন্দ করে। কিন্তু যদি সেচ দেয়া হয় অথবা বৃষ্টি হয়ে যায় তাহলে গাছের ফুলের পরিবর্তে নতুন পাতা গজাবে বেশি করে কারণ বিটপে (Shoot) বিদ্যমান কার্বন ও নাইট্রোজেনের অনুপাত বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে গেলে নতুন পাতা গজাবে।



ঙ. সাধারণত আম গাছের ডাল ছাঁটাই প্রয়োজন হয় না। কারণ আমের মুকুল আসে ৪-৫ মাস বয়সের বিটপ এর মাথায়। তবে ছোট এবং বয়স্ক গাছের মৃত, শুকনা রোগাক্রান্ত শাখা ও কেবলমাত্র বয়স্ক গাছের পরজীবী উদ্ভিদ দ্বারা আক্রান্ত শাখা আম পাড়ার পর পরই ছাঁটাই করা দরকার। তাছাড়া গাছের ভেতরের অনেক সুস্থ ডাল থাকে যেগুলোতে ফুল ধরে না সেগুলো ছাঁটাই করা দরকার। ছাঁটাই এমনভাবে করতে হবে যেন গাছের ভেতরে প্রচুর পরিমাণে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। কাটা ডালের মাথায় বোর্দোপেস্টের প্রলেপ দিতে হবে যাতে করে রোগের  আক্রমণ হতে না পারে। পেস্ট তৈরি জন্য তুঁত ২৫০ গ্রাম ও চুন ২৫০ গ্রাম নিয়ে এমনভাবে এক লিটার পানিতে মিশাতে হবে যাতে করে পেস্ট তৈরি হয়। এ পেস্ট তৈরির ১২ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশের মাধ্যমে ডালের কাটা অংশে প্রয়োগ করতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে, ডাল ছাঁটাই এর আগে গাছ নিয়মিত এবং যথেষ্ট পরিমাণে গুণসম্পন্ন ফল দেয়। এতে প্রতি বছর ফল না আসার সমস্যা কিছুটা কমানো যায়।



চ. যে বছর গাছে প্রচুর ফুল আসে, সে বছর যদি গাছের অধের্ক ফুল ভেঙে দেয়া হয়, তাহলে গাছের সেই অংশ নতুন শাখা উৎপন্ন করবে। আগামী বছর সেই অংশে ফুল ও ফল উৎপন্ন করবে। এভাবে আম গাছ থেকে নিয়মিত ফলন পাওয়া যেতে পারে।

Leave your comments

0
terms and condition.
  • No comments found