x 
Empty Product
Wednesday, 04 September 2013 07:46

আমের সময়ে আমের দেশে

Written by 
Rate this item
(0 votes)

আম আর আম। গাছে গাছে ঝুলছে কাঁচা-পাকা আম। রাস্তার দুই ধারে যত দূর চোখ যায়, কেবলই আমের বাগান। ইচ্ছা করলেই মাটিতে দাঁড়িয়ে, এমনকি শুয়ে-বসেও ছোঁয়া যায়। চাইলে দু-একটা পেড়ে খেতেও পারবেন। যাঁরা এই অভিজ্ঞতা নিতে চান, তাঁরা এখনই চলে যেতে পারেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ কিংবা রাজশাহীর আমের বাগানে। প্রখর এই রোদেও ছায়াঘেরা বাগানগুলোতে পাবেন স্নিগ্ধ, শান্তিময় এক পরিবেশ। দেখবেন বিস্তৃত বাগানে একের পর এক গাছ থেকে পাড়া হচ্ছে আম। ঝুড়িতে করে নিয়ে সেই আম তোলা হচ্ছে ভ্যানে। এরপর সেই ভ্যান যাচ্ছে হাটে। সেখানে সারি সারি মানুষ মণকে মণ আম বিক্রি করছেন। তবে ৪০ কেজিতে নয়, এখানে ৪৫ বা ৪৮ কেজিতে মণ ধরা হয়। কারণ, কিছু আম নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
Rajshahi Mango
রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘায় অনেক আমের বাগান থাকলেও আমবাগানের আসল মজা পেতে হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যেতে হবে। এখানকার শিবগঞ্জ উপজেলাকে বলা হয় আমের রাজধানী। রাজশাহী শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরত্বে চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সড়কপথে ঘণ্টা দেড়েক লাগবে। একসময় চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পুরোটাই নাকি ছিল আমের বাগান। এখনো শহরের আদালতপাড়া, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং কলেজের পুরো অংশই আমবাগান। শহরটা ঘুরলে মনে হবে, আমবাগানের মধ্যেই যেন মানুষের বসতি। সদর উপজেলা ছাড়াও শিবগঞ্জ, ভোলাহাট ও গোমস্তাপুর—এই উপজেলাগুলোও আমবাগানের মধ্যে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে বের হয়ে মহানন্দা সেতু পেরিয়ে শিবগঞ্জের দিকে রওনা দিলে রাস্তার দুই পাশে চোখে পড়বে হাজার হাজার আমের বাগান। শহর থেকে শিবগঞ্জের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। সঙ্গে গাড়ি থাকলে আধা ঘণ্টারও কম সময়ে পৌঁছে যেতে পারবেন। রাস্তায় যেতে যেতে চোখে পড়বে আমের ভ্যান, আমের গাড়ি, মানুষের হাতে আম, মাথায় আম।

শিবগঞ্জের সেনের বাগান, মোজাফফর মিয়াদের বাগান, কানসাটের রাজার বাগান, কানসাটের পাগলা নদীর পশ্চিম পারের চৌধুরীদের বাগানসহ আরও অনেক নামকরা আমের বাগান রয়েছে। চাইলে রাস্তার পাশের যেকোনো আমবাগানে ঢুকে যেতে পারবেন।

কানসাটের একটি আমবাগানে বসেই গল্প হচ্ছিল কানসাট বিদ্যুৎ আন্দোলনের নেতা গোলাম রব্বানীর সঙ্গে। চকেরবাগানে তাঁর নিজেরও একটি আমবাগান আছে। তিনি বললেন, আমের বাগান তৈরি, পানি সেচ, আগাছা দমন, সার দেওয়া, ডাল ছাঁটাই, পরগাছা দমন, মুকুল আসার পর যত্ন নেওয়া, ফল এলে পরিচর্যাসহ অনেক কাজ রয়েছে। শিবগঞ্জের মানুষ সারা বছরই এসব কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন।

সারা বছর আমবাগানগুলোতে ব্যস্ততা থাকলেও এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই—এই সময়টা আমবাগানে ঘোরার জন্য ভালো সময়। কারণ, চাইলে এই সময়ে আম খেতেও পারবেন। শিবগঞ্জে এসে আপনি যেকোনো বাগানে ঘুরতে পারবেন। বিশ্রাম নিতে পারবেন আমবাগানের মধ্যে থাকা ছোট্ট ছোট্ট মাচায়।

আমবাগান তো ঘুরলেন, আমের হাটে যাবেন না? শিবগঞ্জ ঘুরতে এসে কানসাট না যাওয়াটা বিশাল বোকামি। কানসাটেই সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমের হাট। এখানে যত দূর চোখ যায়, দেখবেন আমের বেচাকেনা। ফজলি, ক্ষীরসাপাত, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই, লক্ষ্মণভোগ, ফনিয়া, হিমসাগরসহ শত শত প্রজাতির আম। কিছুক্ষণ দাঁড়ালেই দেখবেন হাটে গাড়ি ঢুকছে, বের হচ্ছে, লোকজন আসছে-যাচ্ছে, মনে হবে এ যেন আমের স্বর্গ। দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে গেলে হাটের পাশের ছোট দোকানগুলোতে বসে খেতে পারবেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিখ্যাত কালাই রুটি। এই হাট থেকে যত খুশি আম কিনতে পারবেন। শিবগঞ্জ থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই সোনামসজিদ স্থলবন্দর। চাইলে সেখানেও একবার ঘুরে আসতে পারেন।

 
যেভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়কপথ, রেলপথ কিংবা আকাশপথে চলে যান রাজশাহী। সেখান থেকে সারা দিনই চাঁপাইনাবগঞ্জের বাস ও ট্রেন চলে। চাইলে ঢাকা থেকে সরাসরিও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আসতে পারেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জে থাকার খুব ভালো হোটেল নেই। তাই পরিবার নিয়ে এলে রাজশাহীতে থাকাই ভালো। রাজশাহীতে থাকার জন্য যেমন সরকারি পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, তেমনি রয়েছে ভালো মানের অনেক হোটেলও।

Read 4154 times Last modified on Sunday, 01 December 2013 09:51

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.