মিষ্টি ফলের মধ্যে আমের বিকল্প আর কী হতে পারে? খেতে সুস্বাদু এ ফল চাষেরও কমতি নেই আমাদের দেশে। তবে যে পরিমাণ চাষ হচ্ছে সে পরিমাণে রফতানি না হওয়ার ফলে এবং সচেতনতার অভাবে রফতানিযোগ্য আম জাতের নতুন বাগান তৈরি হচ্ছে অনেক কম। বেশির ভাগ বাগান গড়ে উঠছে দেশের বহুল পরিচিত কিছু জাতকে কেন্দ্র করে। অথচ আম রফতানিতে বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে টিকে থাকতে হলে প্রথমত প্রয়োজন রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন। বাংলাদেশ রফতানিযোগ্য আমের জাত উদ্ভাবন এবং মাঠপর্যায়ের আমচাষিদের মধ্যে তা সম্প্রসারণে অনেক পিছিয়ে থাকলেও এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বেশ কিছু সাফল্য রয়েছে। বর্তমানে বরেন্দ্র অঞ্চলে দ্রুতহারে বাড়ছে নতুন নতুন আমের বাগান। এই এলাকায় রফতানিযোগ্য আমের চারা তৈরি, আমচাষিদের মধ্যে তা সম্প্রসারণ এবং বাগানে আম উৎপাদনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন নওগাঁর সাপাহার উপজেলার কোচকুড়লীয়া গ্রামের হাসান জামান। তিনি ১৯৮৯ সালে নিজ গ্রামে মাত্র চার বিঘা জমিতে শুরু করেন ‘সীমা ম্যাঙ্গো প্লান্ট সাপ্লাই সেন্টার’ নামক আমের নার্সারি। শুরুর দুই যুগ পেরিয়ে বর্তমানে তার ২০ বিঘা আয়তনের নার্সারিতে রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রজাতির আমের প্রায় আড়াই লাখ চারার বিশাল সংগ্রহ। নার্সারির পাশাপাশি তিনি ২০ বিঘা জমিতে গড়ে তুলেছেন উন্নত প্রজাতির বিভিন্ন আমের বাগান। চলতি মৌসুমের কয়েক মাসে নার্সারির চারা বিক্রি করে তিনি প্রায় ১০ লাখ টাকা আয় করেছেন।
হাসানের আশা, মৌসুম শেষে টাকার পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ হবে। এখানে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০ টাকার মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির আমের চারা পাওয়া যায়।
হাসান জামান বলেন, ‘আমার বাগানের আম দেখে ক্রেতারা চারা কিনতে পারেন। নিজস্ব মাতৃগাছ থাকায় এখানে জাত নিয়ে প্রতারণার কোনো সুযোগ নেই। আমি ২০০০ সাল থেকে রফতানিযোগ্য আমের জাত নিয়ে কাজ করছি। রফতানিযোগ্য আমের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এটি রঙিন হতে হয়। বিশ্ববাজারে রঙিন আমের চাহিদা সবচেয়ে বেশি।’
হাসান জামান আমের দেশি প্রজাতিসহ আমেরিকা, মেক্সিকো, ফিলিপাইন, মিয়ানমার, ভারত, পাকিস্তান, কঙ্গো, হাইতি, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রায় ১১০ প্রজাতির উন্নত আমের জাত সংগ্রহ করেছেন। তার নার্সারিতে রফতানিযোগ্য আমের মধ্যে বারি-৪, বারি-৭, বারি-২, রুবি, কারাবাউ, রাংগোয়াই, কেরালা, পাহুতান, র্যাট, পালমার, লকনা, নাকফজলিসহ রয়েছে ৩৫ প্রজাতির রঙিন আম। এ ছাড়া দেশি প্রজাতির ল্যাংড়া, হাঁড়িভাঙা, খিরসাপাত, ফজলি, আ¤্রপালি, মল্লিকা, গোপালভোগসহ বহুল প্রচলিত আমের প্রায় সব জাতই এখানে পাওয়া যায়। ব্যক্তি উদ্যোগে আমের জাত সংগ্রহ, গ্র্যাফটিং পদ্ধতিতে চারা তৈরি, উন্নত জাতের আম চাষে সচেতনতা তৈরি এবং নিজস্ব বাগানে আম উৎপাদনে অবদান রাখায় পেয়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষ সম্মাননা। হাসানের নার্সারি ইতোমধ্যেই আম গবেষক, শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে বেশ পরিচিতি লাভ করেছে। তারা অনেকেই নতুন জাত সংগ্রহ ও নানা প্রজাতির আমের সঙ্গে পরিচিত হতে হাসানের নার্সারি পরিদর্শনে আসেন। আমের মৌসুমজুড়ে হাসানের নার্সারি ও বাগান অন্যতম দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়। তার নার্সারিতে চারা তৈরি ও পরিচর্যার কাজে সার্বক্ষণিক ২০ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন।
দেশের বিশিষ্ট আম গবেষক এবং বাংলাদেশ আম গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. গোলাম মর্তুজা বেশ কয়েকবার হাসানের নার্সারি পরিদর্শন করেছেন। রফতানিযোগ্য আম সম্পর্কে তিনি বলেন, আম রফতানিতে রঙিন জাতের আম গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ববাজারে রফতানিমুখী আমের বেশির ভাগই রঙিন। আম রফতানির ক্ষেত্রে পরিপক্ক আম গাছ থেকে পাড়ার পর কিছু দিন ভালো থাকতে হয়। পচনশীল ভাইরাস ধরে যেন আম নষ্ট হয়ে না যায়। তবে পচনশীলতা রোধে বেশ কিছু পদ্ধতি আছে। এর মধ্যে কম খরচে সহজে প্রয়োগ করা যায় হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে প্রতি কেজি আম প্রায় এক টাকা খরচে ট্রিটমেন্ট করা যায়। এ পদ্ধতিতে আম প্রায় ১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। তবে রফতানীকৃত আমের গুণাগুণ পরীক্ষার সময় বেশি মাত্রার রাসায়নিক পাওয়া গেলে রফতানীকৃত আম ফেরত আসার পাশাপাশি আমের বাজার হারাতে হতে পারে। আমাদের দেশে আমের প্যাকেজিং ব্যবস্থা খুবই দুর্বল। দেশে আম উৎপাদন অনেক পুরনো হলেও লাগসই কোনো প্যাকেজিং ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি আমাদের দেশে। প্যাকেটে আমের নাম, বাগানের ঠিকানা, আম পাড়ার তারিখ, মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে প্যাকেটজাত করতে হয়। এ সংস্কৃতি স্থানীয় বাজারেও গড়ে ওঠেনি, যা আম রফতানিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আম রফতানি শুরু করতে প্রথমত সরকারকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। আম রফতানির ক্ষেত্রে একাধিকবার দেশের আমের নমুনা বিদেশে পাঠিয়ে তা গৃহীত হলেও পরে রফতানিতে তেমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে কিছু আম বিক্রি করা ছাড়া বিদেশে আমের তেমন কোনো বাজার নেই। রফতানিযোগ্য আমের উৎপাদন বাড়িয়ে রফতানির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আনুষঙ্গিক ধাপগুলো সম্পন্ন করতে উৎপাদনকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে রফতানিযোগ্য আমের চারা উৎপাদনে কাজ হচ্ছে। হাসানের নার্সারিতে রফতানিযোগ্য রঙিন আমের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে। তিনি বরেন্দ্র অঞ্চলের আমচাষিদের রফতানিযোগ্য আম চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। এটি ভালো উদ্যোগ।
Latest from Super Admin
Leave a comment
Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.
033217931
আজকের ভিজিট
গতকালের ভিজিট
এই সপ্তাহের ভিজিট
মোট ভিজিট
এই মাসের ভিজিট
গত মাসের ভিজিট
সর্বমোট ভিজিট
595
3033
112434
32870713
417942
496
33217931
আপনার IP: 3.146.105.194
তারিথ ও সময় : 2024-04-25 02:47:54
ব্লগার লগ ইন
ব্লগ পুঞ্জিকা
ব্লগ ট্যাগ
mango rajshahi
অসময়ে বৃষ্টি
আচার
আম
আম গাছটির দর্শনী
আম চাষ
আম চাষে সাফল্য
আম পাকবে নভেম্বরে
আম বাগান
আম বাজার
আম ব্যবসা
আম রফতানি
আম শোধন
আমের আচার
আমের উপকারিতা
আমের গল্প
আমের জীবনরহস্য
আমের দেশে
আমের পুষ্টিগুণ
আমের প্রতিকৃতি চুরি
আমের বাজার
আমের মুকুল
আম্রপালি আম চাষ
কক্সবাজার
কানসাট
কারাদণ্ড
কার্বাইড
কুরিয়ার সার্ভিস
ক্যান্সার
ক্ষতি সাধন
খাদ্যে ফরমালিন
গৌড়মতি
জুস
নানা রঙের আম
পাহাড়ে আম বাগান
পুষ্টিকথা
প্রতারণা
প্রাণ
ফরমালিন
ফলের রাজপুত্তুর
ফ্রুট ব্যাগিং
বদনাম
বাম্পার ফলন
বারোমাসি
মুকুল
রাজশাহীর আম
রাসায়নিক
লোকসান
হাঁড়িভাঙ্গা
হাসপাতালে
আরও পড়ুন
-
বঙ্গভবনে যুক্ত হল হাড়িভাঙ্গা ও সূর্যপূরী আম গাছ
-
আমগাছে গাছ ভরা মুকুল ভাল ফলন পাওয়ার আশা বাগান মালিকদের
-
শুধু আম পরিবহনেই প্লাস্টিকের ক্যারেট বিক্রি হয় ৯২২ কোটি টাকার
-
গাছ আর ফল টানছে সবাইকে
-
আমের নাম কেন এমন?
-
কবিতা-আম পেকেছে গাছে
-
এবার বাঘা- চারঘাটের অধিক পরিমান আম বিদেশে রপ্তানি করা হবে
-
হাড়িভাঙ্গা আমের অজানা ইতিহাস
-
আদিযুগে প্রাকৃতিক ভাবে আম পাকাতে ব্যবহার হতো আশ শেওড়া
-
বিষ মুক্ত আমের গল্প!
-
ভাবতে পারেন, কথাবার্তা ছাড়া হঠাৎ আম নিয়ে লিখতে বসলাম কেন?
-
গরমের দিনে খাওয়ার পাতে আম পেলে আর কিছুই চাই না? কোন রোগ থাকলে আম খেলে বিপদ হতে পারে?
-
আমে ন্যাচারালি ফরমালিন থাকে, তাহলে আমি শিল্পকে ধ্বংস করার রহস্য কি?
-
সাপাহারে বাগানে বাগানে আমের মুকুল দেখে আমচাষীরা স্বপ্নে বিভোর
-
চাষিদের কৃতিত্বেই বাড়ছে আমের চাষ
-
পুঠিয়ায় ফরমালিনমুক্ত আম বাজারজাত নিশ্চিত করণে মতবিনিময় সভা
-
বারোমাসি আমের বাৎসরিক ফলন ১২০ কেজি
-
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আমের মুকুলে, ফলন নিয়ে শঙ্কা
-
এক গাছেই মুকুল, গুটি আর পাকা আম
-
পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নত জাতের আমের চাষ
-
পাহাড়ি এলাকায় মিশ্র ফলের বাগান
-
লিচুগাছের সেই আম ছিঁড়ে নিলেন মেম্বার
-
প্রাণের প্রাণঘাতী কর্মকাণ্ড, দু’জনের কারাদণ্ড
-
কার্বাইডে পাকানো আম চেনার জন্য সেন্সর আবিস্কার
-
বান্দরবানে আম্রপলি আম চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছে অনেক কৃষক
-
ফরমালিনযুক্ত ৯৯ টন আম জব্দ, দুজনকে দণ্ড
-
মিয়াজাকি আম এত দামি কেন?
-
গৌড়মতি আমে রঙিন স্বপ্ন
-
আমের কীটপতঙ্গ এবং রোগ
-
ফলের রাজা আম
-
গৌড়মতি
-
গাছে গাছে শুধু আম আর আম
-
কুষ্টিয়ায় অসময়ে আম
-
টেকনাফের আবহাওয়া বারি আম-১১ চাষ উপযোগী
-
আম-ফুচকা খাবেন নাকি? পুজোয় ভাইরাল ম্যাঙ্গো ফুচকা! জানুন কোথায় পাবেন
-
খালি পেটে আম খেতে নেই কেন? খাওয়ার আগে আর কী খেয়াল রাখা জরুরি?
-
আমে চাঙ্গা অর্থনীতি
-
কেমিক্যাল মুক্ত আম চেনার অজানা কিছু নতুন পদ্ধতি
-
পাহাড়ে ফল বাগান আসাদ গাজীর ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা
-
এবার দেখা যাবে বেগুনি রঙের আম
-
আমের ফলন কমার আশঙ্কায় কীটনাশক ব্যবহার বাড়ছে
-
নিজেই বানান সুস্বাদু আম দই
-
রাজশাহীর আম লিচু পরিবহনে ট্রেনের দাবি ব্যবসায়ীদের
-
শ্রীমঙ্গলে কাঁঠালী আম গাছ !!
-
১ কেজি আমের দাম ৩ লক্ষ টাকা! বাংলার ‘এই রাজ্যে’ ফলেছে বিশ্বের সবচেয়ে দামী আম
-
আম খাওয়ার ৪টি সহজ নিয়ম আছে
-
ভোলাহাটে আম ফাউন্ডেশনের নির্বাচন
-
লাল জাতের ভিয়েতনামের রেডকিং আম এখন বাংলাদেশে
-
বারোমাসি আম বাগান
-
কাঁচায় লক্ষ্মীলাভ, পাকা আমে লোকসান চাষির
সর্বশেষ মন্তব্য
-
আর খাইয়েন না। এক লাখ পুরা হলেই আজরাইল এসে ধরবে।
Written by মিজানুর on Friday, 29 May 2020 16:47 এক বসাতে ১০০ ল্যাঙড়া আম খেয়েছি – লোটাস কামাল
- Nice post, very interesting. Good work , If you have…
- এই আম কোন মাসে পাকে
- I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
- I have two drafting mango tree.May be 3 years old.But…
- How can this be done?
- মনজুরুল হক ভাইয়ের নাম্বারটা দেবেন
- হিমসাগর কত করে??
- 5kg am lak ba gser
- আঁচার আমার খুব পছন্দের। আমি একদিন এটা বানিয়ে নিব। ধন্যবাদ।
- খুব ভালো লাগলো। অনেক কিছু জানতে পারলাম। ধন্যবাদ লেখককে।
- ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আপনার জার্নির কথা শুনে... আর আমরা ঘরে…
- চিন্তা করা যায়??
- কৃষি কর্মকর্তারা কি বেতন খাচ্ছে আর ঘুমা্চ্ছে....
- আমার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুরে.. আমি কি আম চাষ করতে পারবো?