x 
Empty Product

তহাখানা কমপ্লেক্স (ভিডিও)

User Rating:  / 0
PoorBest 

তহাখানা বা তাহাখানা একটি তিনতলা বিশিষ্ট রাজ প্রাসাদ। প্রাচীন গৌড় লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকার পূরাকীর্তিগুলির মধ্যে এ স্থানেই তিনটি প্রাচীন নিদর্শন বিদ্যমান। এর মধ্যে তহাখানা অন্যতম। তহাখানা ফার্সি শব্দ,

তহাখানা বা তাহাখানা একটি তিনতলা বিশিষ্ট রাজ প্রাসাদ। প্রাচীন গৌড় লখনৌতির ফিরোজপুর এলাকার পূরাকীর্তিগুলির মধ্যে এ স্থানেই তিনটি প্রাচীন নিদর্শন বিদ্যমান। এর মধ্যে তহাখানা অন্যতম। তহাখানা ফার্সি শব্দ,

এর আভিধানিক অর্থ ঠান্ডা ভবন। অনেকে শীততাপ নিয়ন্ত্রীত  কক্ষ বলে উল্লেখ করেন। দাফেউল বালা নামক একটি দীঘির পশ্চিম পাড়ে এটি অবস্থি। এর একতলা ভ’গের্ভ (মাটির নীচে) অন্য দুটি তলা মাটির উপরে। তন্মধ্যে তৃতীয় তলাটির অস্তিত্ব প্রায় বিলুপ্ত ঘটেছে। প্রাসাদটি তিন তলা বিশষ্টি হওয়ার কারণেই কেহ কেহ একে তোখানাও বলে থাকে। কে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেছেন, তা ইতিহাসে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে ভবনগুলির স্থাপততি বৈশিষ্ঠ্যতে মুঘল রীতির প্রয়োগ বা কলা কৌশল প্রতিফলিত। সমসাময়িক ও পরবর্তী ঐতিহাসিক বিবরণ ইয়ংগিত করে যে এর নির্মাতা মুঘল সুবাদার শাহ সূজা (১৬৩৯-১৬৬০)।

                প্রাসাদটি উত্তর দক্ষিণে ১১৬ ফুট লম্বা এবং প্রায় ৩৮ ফুট চওড়া। এর উভয় পার্শ্বে (পূর্ব ও পশ্চিমে) বারান্দা সহ আনেকগুলি কক্ষ রয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব কোণের একটি কক্ষে একটি ইন্দারা হতে ছাদের ওপরে পানি তোলার জন্য অনুরূপ ছিদ্র বিদ্যমান।

                প্রাসাদটির দরজাগুলির চৌকাঠের জ্য কালো পাথর এবং এটিই হচ্ছে একমাত্র গৌড়ের অট্টালিকা যার ছাদে কড়িকাঠকে চুন সুরকি ও খোয়া ঢালাই করে মজবুত করা হয়েছে। প্রাসাদের পশ্চিম মুখি মধ্যবর্তী উচু খিলানযুক্ত দরজা এবং এর ২ পাশে সিড়ি রয়েছে ছাদে উঠার জন্য। ভবনের উত্তরপ্রান্তে একটি  ছোট পারিবারিক মসজিদ অবস্থি। এটি সম্ভবতঃ কেবলমাত্র মহিলাদের জন্য ব্যবহার্য্য ছিল। এর পেছনে রয়েছে উন্মুক্ত কক্ষ যেটি একি  অষ্টভুজাকার টাওয়ার কক্ষের সাথে সংযুক্ত ছিল। এ কক্ষটি সম্ভবতঃ ধ্যানের জন্য ব্যবহৃত হতো। প্রাসাদের কক্ষগুলো বিচিত্র নকশা ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কুলঙ্গি সজ্জিত। চুন ও পোড়া মাটির কাদার শক্ত আবরণে। প্রাসাদ কক্ষগুলি বর্তমানে তা লয় প্রাপ্ত হয়েছে।

                বিভিন্ন ঐতিহাসিক গ্রন্থ হতে জানা যায়, মুঘল সম্রাটশাহাজানের পুত্র শাহ্ সুজা বাংলার সুবাদার থাকাকালে ১৬৩৯-৫৮ খ্রিঃ মতান্তে ১৬৩৯-১৬৬০ খ্রিঃ তাঁর মুরশিদ হযরত শাহ্ নিয়মতউল্লাহ (রঃ) এর প্রতি ভক্তি নিদর্শনের উদ্দেশ্যে নির্মাণ করেন। শাহ্ সূজার রাজমহলে রাজধানীর  থাকাকালে, তিনি মাফে মধ্যেই হযরত শাহ্ নিয়মতউল্লাহ (রঃ) প্রতি শ্রদ্ধাস্বরুপ গৌড় লখনৌতির ফিরোজপুরের এই গৌড় উপনগরীতে (শহরতলী) আসতেন। তিনি দরবেশের সাথে এ প্রাসাদেই বেশ কিছুদিন সময় অতিবাহিত করতেন। প্রাসাদেও কেন্দ্রীয় বড় কক্ষটিই ছিল তার দরবার কক্ষ, যেখানে শাহ সূজা উপবেশন করতেন বলে কথিত আছে। আবার কেউ কেউ বলেন শাহ্ সুজা যখন ফিরোজপুওে তার মুর্শিদ শাহ নিয়ামতউল্লাহ (রঃ) কে দেখতে আসতেন: তখর তার অস্থায়ী বসবাসের জন্য অট্টালিকাটি নির্মিত হয়। এ জন্য অনেকে এ প্রাসাদটিকে শাহ সূজার কাছারী বাড়ী বলেও উল্লেখ করেন। প্রাসাদের ৪টি বুরুজ রয়েছে। প্রাসাদাটি পূর্ব প্রান্তে পুকুর পাড়ের দিকে মাটির নিচে ৫টি ঘর , উপর তলায় ১৩টি ঘর রয়েছে। এছাড়া ১টি কুয়ার ঘর এবং ২টি খোলা ঘর রয়েছে। ২০০৪/২০০৫ অর্থ বছরে দেশের পূরাতত্ব বিভাগ কর্তৃক প্রসাদটি পশ্চিম দিক খননের পর আরও  অনেক ছোট বড় ৭টি কক্ষের ভিত্তি ও মুল ফটকের অস্থিত্ব খুজে পাওয়া যায়। দায়িত্বরত  প্রকৌশলীরা এ লেখককে জানান পরবর্তীকালে উল্লিখিত কক্ষের ভিত্তির ওপর নতুনভাবে  কক্ষ নির্মান কওে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা রয়েছে।
 
                মুঘল যুগের এই প্রাচীন নিদর্শনটি সে যুগের উল্লেখযোগ্য স্থাপত্যকলার অপূর্ব নিদর্শন। প্রাসাদটি বর্তমানে  পশ্চিম দিক থেকে দেখলে এক তলা ভবন মনে হবে। আর পূর্ব প্রান্তের পাড় থেকে দেখলে দ্বিতল ও অট্টালিকাটিরদৃশ্য খুবই মনোহর দেখায়। যা পর্যটকদের জন্য একটি খুবই আকর্ষনীয় এবং দৃষ্টি নন্দন প্রাচীন নিদর্শন।

Leave your comments

0
terms and condition.
  • No comments found