x 
Empty Product
Thursday, 01 March 2018 22:44

দেশের অর্থনীতিতে হাজার কোটি টাকা মূল্য সংযোজনের সম্ভাবনা

Written by 
Rate this item
(0 votes)

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার প্রধান অর্থকরী ফল আম। স্বাদ দিয়ে বিশ্ববাসীকে জয় করা এ আম এবার উৎপাদনেও নজর কাড়ছে। এ জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ বলছেন, আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এ বছর ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন আম উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আমের সম্ভাব্য বাজার মূল্য হবে ১ হাজার ৬ শত থেকে ১ হাজার ৮ শত টাকা মন।  সে হিসেবে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী এ জেলায় উৎপাদিত আম থেকে অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন হবে প্রায় হাজার কোটি টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় উৎপাদিত আম বেচাকেনায় এ অঞ্চলের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি চাঙ্গা হয়ে উঠে। আমভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য গোটা এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে নিয়ে আসে পরিবর্তন ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মোট আম উৎপাদনের অর্ধেকের বেশি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলায়। বিগত দিনেও ফলটির উৎপাদনে শীর্ষ অবস্থানে ছিলে ভারতীয় সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জ।
এ বছর চাঁপাইনবাবগঞ্জ  জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়  ১ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন  আম উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা জেলার মোট উৎপাদনের ৭০ ভাগ।  চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ  তথ্য অনুযায়ী  জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ লাখ আম গাছ রয়েছে।  এ জেলায় সর্বমোট  উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। মানসম্পন্ন নিখুত আম উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বাগানে বাগানে গিয়ে বিভিন্ন রকম পরামর্শ দিচ্ছেন চাষিদের। কৃষি বিভাগ বলছেন, বড় ধরনের কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এ জেলা থেকে অর্থনীতিতে মূল্য সংযোজন হবে হাজার কোটি টাকা। ফল গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবদুল আলিম বলেন, দেশে মোট উৎপাদনের ৭৮ শতাংশ আসে বৃহত্তর রাজশাহী থেকে। এর মধ্যে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ আসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন জুড়ে রয়েছে ছোটবড় অসংখ্য আমবাগান। বিনোদপুর, চককির্তী,  দাইপুকুরিয়া,  ধাইনগর,  দূর্লভপুর,  ঘোড়াপাখিয়া,  মোবারকপুর,  মনাকষা, উজিরপুর, ছত্রাজিতপুর, পাঁকা, কানসাট, শ্যামপুর, নয়ালাভাঙ্গা ও শাহাবাজপুর ইউনিয়নসহ শিবগঞ্জ পৌর এলাকা জুড়ে রয়েছে আমের বাগান।  দেশের বৃহৎ আম বাজার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে অবস্থিত । তথ্যমতে, শিবগঞ্জ উপজেলার ৯০ ভাগ মানুষই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ‘আম অর্থনীতি’র সঙ্গে জড়িত।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ অঞ্চলে ৪৫ টির বেশি প্রজাতির আম টিকে আছে। এর মধ্যে ল্যাংড়া, ফজলি, ক্ষীরসাপাত, হিমসাগর, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, গোপালভোগ ও বোম্বাই রয়েছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার ১৪ টি ইউনিয়ন,  পৌরসভার অভ্যন্তরে কোর্ট ও  সার্কিট হাউস চত্বরসহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছ আম বাগান। এছাড়াও জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলাতেও অসংখ্য আম বাগান রয়েছে।
এ বিষয়ে এক্সিম ব্যাংক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ড. আশরাফুল আরিফ জানান, আমের উৎপাদন ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় সচেতনতা বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাত এগিয়ে এলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক সুফল আসবে। তিনি বলেন, হেক্টরপ্রতি ফলন বাড়াতে মুকুল থেকে শুরু করে ফল পাড়ার আগ পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির ব্যবহার জনপ্রিয় করতে হবে। আমের চারা উৎপাদন, বালাই ব্যবস্থাপনা এবং বিপণন ও সংরক্ষণ ব্যবস্থা শক্তিশালী করা গেলে বর্তমানে আবাদকৃত জমিতেই আরো বেশি উৎপাদন সম্ভব। উৎপাদন বাড়লে চাঙ্গা হয়ে উঠবে কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি রপ্তানী করে অধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব বলে জানান তিনি । 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মঞ্জুরুল হুদা জানান, জেলায় ২৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে প্রায় ২০ লাখ আম গাছ রয়েছে।  এ জেলায় সর্বমোট  উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মে. টন। শিবগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কর্মকর্তা এসএম আমিনুজ্জামান বলেন, এ উপজেলায় ১৭ হাজার হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে।  উৎপাদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ ধরা হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মে.টন। বড় ধরনের কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছেন কৃষি বিভাগ।

Read 3518 times

Leave a comment

Make sure you enter the (*) required information where indicated. HTML code is not allowed.